এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র সিরাজউদ্দৌলা পাঠ-৫

 পাঠ-৫

সিরাজউদ্দৌলা

  সিকান্দার আবু জাফর


পাঠভিত্তিক উদ্দেশ্য

এ পাঠটি পড়ে তুমি-

  • মিরজাফরের ক্ষমতারোহণের কথা জানবে।
  • নবাব সিরাজের পরিণতির কথা জানবে। 

মূলপাঠ

চতুর্থ অংক : প্রথম দৃশ্য 

সময় : ১৭৫৭ সাল, ২৯ জুন। স্থান : মিরজাফরের দরবার।

[চরিত্রবৃন্দ : মঞ্চে প্রবেশের পর্যায় অনুসারে- রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, নকিব, মিরজাফর, ক্লাইভ, ওয়াটস, কিলপ্যাট্রিক, উমিচাঁদ, প্রহরী, মিরন, মোহাম্মদি বেগ]

(রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভসহ অন্যান্য আমির ওমরাহরা দরবারে আসীন। দরবার কক্ষ এমন আনন্দ কোলাহলে মুখর যে সেটা রাজ দরবারের পরিবর্তে নাচ গানের মজলিস বলেও ভেবে নেওয়া যেতে পারে। 

আরো পড়ুন: এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র নাটক :সিরাজউদ্দৌলা 

এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র সিরাজউদ্দৌলা পাঠ ১

এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: বাংলা ১ম পত্র নাটক সিরাজউদ্দৌলা সিকান্দার আবু জাফর(Admission Test)


রাজবল্লভ : কই আসর জুড়িয়ে গেল যে। নতুন নবাব সাহেবের দরবারে আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন?

জগৎশেঠ : ঢাল তলোয়ার ছেড়ে নবাবি লেবাস নিচ্ছেন খাঁ সাহেব, একটু দেরি তো হবেই। তা ছাড়া চুলে নতুন খেজাব, চোখে সুর্মা, দাড়িতে আতর, এ সব তাড়াহুড়ার কাজ নয়।

রাজবল্লভ : দর্জি নতুন পোশাকটা নিয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছেছে কি না কে জানে।

জগৎশেঠ : না না, সে ভাবনা নেই। নবাব আলিবর্দি ইন্তেকাল করার আগের দিন থেকেই পোশাকটা তৈরি। আমি ভাবছি সিংহাসনে বসবার আগেই খাঁ সাহেব সিরাজউদ্দৌলার হারেমে ঢুকে পড়লেন কি না।

রাজবল্লভ : তবেই হয়েছে। বেশুমার হুর গেলমানদের বিচিত্র ওড়নার গোলক ধাঁধা এড়িয়ে বার হয়ে আসতে খাঁ সাহেবের বাকি জীবনটাই না খতম হয়ে যায়।

                                                                                                                         (নকিবের ঘোষণা)

নকিব : সুবে বাংলার নবাব, দেশবাসীর ধন দওলত, জান সালামতের জিম্মাদার মির মুহম্মদ জাফর আলি খান দরবারে তশরিফ আনছেন। হুঁশিয়ার ...

 (মিরজাফরের প্রবেশ, সঙ্গে মিরন। সবাই সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়ালো। মিরজাফর ধীরে ধীরে সিংহাসনের কাছে গেলেন। একবার আড়াআড়িভাবে সিংহাসনটা প্রদক্ষিণ করলেন। তারপর একপাশে গিয়ে একটা হাতল ধরে দাঁড়ালেন। দরবারের সবাই কিছুটা বিস্মিত।)

রাজবল্লভ : (সিংহাসনের দিকে ইঙ্গিত করে) আসন গ্রহণ করুন সুবে বাংলার নবাব। দরবার আপনাকে কুর্নিশ করবার জন্যে অর্ধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করছে।

মিরজাফর : (চারিদিকে তাকিয়ে) কর্নেল সাহেব এসে পড়লেন বলে।

জগৎশেঠ : কর্নেল সাহেব এসে কোম্পানির পক্ষ থেকে নজরানা দেবেন সে তো দরবারের নিয়ম।

মিরজাফর : হ্যাঁ, উনি এখুনি আসবেন।

রাজবল্লভ : (ঈষৎ অসহিষ্ণু) কর্নেল ক্লাইভ আসা অবধি দেশের নবাব সিংহাসনের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি?

                                                                                                                 (নকিবের ঘোষণা)

নকিব : মহামান্য কোম্পানির প্রতিনিধি কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ বাহাদুর দরবার হুঁশিয়ার...

 (ক্লাইভের প্রবেশ। সঙ্গে ওয়াটস, কিলপ্যাট্রিক। গোটা দরবার সন্ত্রস্ত। মিরজাফরের মুখ আনন্দে ভরে উঠল)

ক্লাইভ : Long live Nabab Jafar Ali Khan. But what is this? নবাব মসনদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। ইনি কি নবাব না ফকির?

মিরজাফর : (বিনয়ের সঙ্গে) কর্নেল সাহেব হাত ধরে তুলে না দিলে আমি মসনদে বসবো না।

ক্লাইভ : (প্রচন্ড বিস্ময়ে) What? This is fantastic I must say আপনি নবাব, এ মসনদ আপনার। আমি তো আপনার রাইয়াৎ- আপনাকে নজরানা দেবো।

মিরজাফর : মিরজাফর বেইমান নয় কর্নেল ক্লাইভ। বাংলার মসনদের জন্যে আমি আপনার কাছে ঋণী। সে মসনদে বসতে হলে আপনার হাত ধরেই বসবো, তা না হলে নয়।

ক্লাইভ : (ওয়াটসকে নিচু স্বরে)No clown will ever beat him. (দরবারের উদ্দেশ্যে) আমাকে লজ্জায় ফেলেছেন নবাব জাফর আলিখান। I am completely overwhelmed. বুঝতে পারছিনে কী করা দরকার। (এগিয়ে গিয়ে মিরজাফরের হাত ধরলো। তাকে সিংহাসনে বসিয়ে দিতে দিতে Gentlemen, I present you the new Nabab His excellence Jafar Ali Khan. আপনাদের নতুন নবাব জাফর আলি খানকে আমি মসনদে বসিয়ে দিলাম। | May God help him and help you as well

ওয়াটস : Hip Hip Hurry. 

                                      (মিরজাফর মসনদে বসলেন। দরবারের সবাই কুর্নিশ করল)

ক্লাইভ : আপনাদের দেশে আবার শান্তি আসলো।  (কিলপ্যাট্রিকের কাছ থেকে একটি সুদৃশ্য তোড়া নিয়ে নবাবের পায়ের কাছে রাখলো।)

ক্লাইভ : কোম্পানির তরফ থেকে আমি নবাবের নজরানা দিলাম।

ওয়াটস ও কিলপ্যাট্রিক : Long live Nabab Jafar Ali Khan 

(একে একে অন্যেরা নজরানা দিয়ে কুর্নিশ করতে লাগলো। পাগলের মতো চিৎকার করতে করতে উমিচাঁদের প্রবেশ। দৌঁড়ে ক্লাইভের কাছে গিয়ে।)

উমিচাঁদ : আমাকে খুন করে ফেলো- আমাকে খুন করে ফেলো।

 (ক্লাইভের তলোয়ারের খাপ টেনে নিয়ে নিজের বুকে ঠুকতে ঠুকতে) খুন কর, আমাকে খুন কর।

মিরজাফর : কী হয়েছে? ব্যাপার কী?

উমিচাঁদ : ওহ্ সব বেঈমান- বেঈমান! না আমি আত্মহত্যা করব। (নিজের গলা সবলে চেপে ধরলো। গলা দিয়ে ঘড় ঘড় আওয়াজ বেরুতে লাগলো। ক্লাইভ সবলে তার হাত ছাড়িয়ে ঝাঁকুনি দিতে দিতে)

ক্লাইভ : Have you gone mad? 

উমিচাঁদ : ম্যাড বানিয়েছ। এখন খুন করে ফেল। দয়া করে খুন কর কর্নেল সাহেব।

ক্লাইভ : Don't be silly. কী হয়েছে তা তো বলবে?

উমিচাঁদ : আমার টাকা কোথায়?

ক্লাইভ : কিসের টাকা?

উমিচাঁদ : দলিলে সই করে দিয়েছিলে, সিরাজউদ্দৌলা হেরে গেলে আমাকে বিশলক্ষ টাকা দেওয়া হবে।

ক্লাইভ : কোথায় সে দলিল?

উমিচাঁদ : তোমরা জাল করেছ। (দৌঁড়ে সিংহাসনের কাছে গিয়ে) আপনি বিচার করুন। আপনি নবাব, সুবিচার করুন।

ক্লাইভ : আমি এর কিছুই জানিনে।

উমিচাঁদ : তা জানবে কেন সাহেব। নবাবের রাজকোষ বাটোয়ারা করে তোমার ভাগে পড়েছে একুশ লাখ টাকা। সকলের ভাগেই অংশ মতো কিছু না কিছু পড়েছে। শুধু আমার বেলাতে ...

 (ক্রন্দন)

ক্লাইভ : (সবলে উমিচাঁদের বাহু আকর্ষণ করে) You are dreaming Omichand. তুমি খোয়াব দেখছো। 


উমিচাঁদ : খোয়াব দেখছি? দলিলে পরিষ্কার লেখা বিশ লক্ষ টাকা পাবো। তুমি নিজেই সই করেছো।

ক্লাইভ : আমি সই করলে আমার মনে থাকতো। তোমার বয়স হয়েছে- মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে। এখন তুমি কিছুদিন তীর্থ করো- ঈশ্বরকে ডাকো। মন ভালো হবে। (উমিচাঁদকে কিলপ্যাট্রিকের হাতে দিয়ে দিল। সে তাকে বাইরে টেনে নিয়ে গেলো। উমিচাঁদ চিৎকার করতে লাগলো (আমার টাকা, আমার টাকা)

ক্লাইভ : উমিচাঁদের মাথা খারাপ হয়েছে। Your Excellency may fogive us.

জগৎশেঠ : এমন শুভ দিনটা থমথমে করে দিয়ে গেলো।

ক্লাইভ : ভুলে যান। ও কিছু নয়। নবাবের কিছু বলা উচিত।

রাজবল্লভ : নিশ্চয়ই। প্রজাসাধারণ আশ্বাসে আবার নতুন করে বুক বাঁধবে। রাজকার্য পরিচালনায় কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে তাও মোটামুটি তাদের জানানো দরকার।

মিরজাফর : (ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে পাগড়ি ঠিক করে) আজকের এই দরবারে আমরা সরকারি কাজ আরম্ভ করার আগে কর্নেল ক্লাইভকে শুকরিয়া জানাচ্ছি তাঁর আন্তরিক সহায়তার জন্যে। বিনিময়ে আমি তাঁকে ইনাম দিচ্ছি বার্ষিক চার লক্ষ টাকা আয়ের জমিদারি ও ২৪ পরগণার স্থায়ী মালিকানা।

                                         (ওয়াটস ও কিলপ্যাট্রিক এক সঙ্গে র্হুরে। ক্লাইভ হাসিমুখে মাথা নোয়ালো।)

মিরজাফর : দেশবাসীকে আমি আশ্বাস দিচ্ছি যে, তাঁদের দুর্ভোগের অবসান হয়েছে। সিরাজউদ্দৌলার অত্যাচারের হাত থেকে তারা নিষ্কৃতি পেয়েছেন। এখন থেকে কারও শান্তিতে আর কোনো রকম বিঘ্ন ঘটবে না।

                                                                                                                             (প্রহরীর প্রবেশ)

প্রহরী : সেনাপতি মির কাসেমের দূত।

মিরজাফর : হাজির করো।

 (বসলেন। দূতের প্রবেশ। মিরন দ্রুত তার কাছে এগিয়ে এলো। মিরনের হাতে পত্র প্রদান। মিরন খুলেই উল্লসিত হয়ে উঠলো।)

মিরন : পলাতক সিরাজউদ্দৌলা মির কাসেমের সৈন্যদের হাতে ভগবানগোলায় বন্দি হয়েছে। তাঁকে রাজধানীতে নিয়ে আসা হচ্ছে।

                                                                                         (মিরজাফরের হাতে পত্র প্রদান)

ক্লাইভ : ভালো খবর। You can fell really safe now.

মিরজাফর : কিন্তু তাকে রাজধানীতে নিয়ে আসবার কী দরকার? বাইরে যে-কোনো জায়গায় আটকে রাখলেই তো চলতো।

ক্লাইভ : (রুখে উঠলো) No Your Honour এখন আপনাকে শক্ত হতে হবে। শাসন চালাতে হলে মনে দুর্বলতা রাখলে চলবে না। আপনি যে শাসন করতে পারেন, শাস্তি দিতে পারেন, দেশের লোকের মনে সে কথা জাগিয়ে রাখতে হবে every moment. কাজেই সিরাজউদ্দৌলা শিকল বাঁধা অবস্থায় পায়ে হেঁটে সবার চোখের সামনে দিয়ে আসবে জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায়। কোনো লোক তার জন্যে এতটুকু দয়া দেখালে তার গর্দান যাবে। এখন মসনদের মালিক নবাব জাফর আলি খান। সিরাজউদ্দৌলা এখন কয়েদি, ওয়ার ক্রিমিন্যাল। তার জন্যে যে ঝুসঢ়ধঃযু দেখাবে সে Sympathy। আর আইনে traitor এর শাস্তি মৃত্যু। And that is how you must rule.

মিরজাফর : আপনারা সবাই শুনেছেন আশা করি। সিরাজকে বন্দি করা হয়েছে। যথাসময়ে তার বিচার হবে। আমি আশা করি কেউ তার জন্যে সহানুভ‚তি দেখিয়ে নিজের বিপদ টেনে আনবেন না।

ক্লাইভ : yes তা ছাড়া মুর্শিদাবাদের রাজপথ দিয়ে যখন তাকে soldier রা টানতে টানতে নিয়ে যাবে তখন রাস্তার দুধার থেকে ordinary public তার মুখে থুথু দেবে-they must spit on his face.|।

মিরজাফর : অতটা কেন?

ক্লাইভ : আমি জানি He is a dead horse| কিন্তু না করলে লোকে আপনার ক্ষমতা দেখে ভয় পাবে কেন? public এর মনে terror জাগিয়ে রাখতে পারাটাই শাসন ক্ষমতার granite foundation. 


(মিরজাফর মসনদ থেকে নেমে দাঁড়াতেই দরবারের কাজ শেষ হলো। নবাব দরবার থেকে বেরিয়ে গেলেন, সঙ্গে সঙ্গে প্রধান অমাত্যরা এবং তার পেছনে অন্য সকলে। মঞ্চের আলো আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে গেলো; কিন্তু প্রেক্ষাগৃহ অন্ধকার। ধীরে ধীরে মঞ্চে অনুজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠলো। কথা বলতে বলতে ক্লাইভ এবং মিরনের প্রবেশ।) 

ক্লাইভ : আজ রাত্রেই কাজ সারতে হবে। এ সব ব্যাপারে chance নেওয়া চলে না।

মিরন : কিন্তু হুকুম দেবে কে? আব্বা রাজি হলেন না।

ক্লাইভ : রাজবল্লভকে বলো।

মিরন : তিনি নাকি অসুস্থ। তাঁর সঙ্গে দেখাই করা গেলো না।

ক্লাইভ : Then? 

মিরন : রায়দুর্লভ, ইয়ার লুৎফ খাঁ- ওরাও রাজি হলেন না।

ক্লাইভ : তা হলে তোমাকেই সেটা করতে হবে।

মিরন : প্রহরীরা আমার হুকুম শুনবে কেন?

ক্লাইভ : তোমার নিজের হাতেই সিরাজউদ্দৌলাকে মারতে হবে, in your own interest সে বেঁচে থাকতে তোমার কোনো আশা নেই। নবাবি মসনদ তো পরের কথা, আপাতত what about the lovely princess? লুৎফুন্নিসা তোমার কাছে ধরা দেবে কেন সিরাজউদ্দৌলা জীবিত থাকতে।

মিরন : আমি একজন লোকের ব্যবস্থা করেছি। সে কাজ করবে, কিন্তু তোমার হুকুম চাই।

ক্লাইভ : What pity, Hired kiler রা পর্যন্ত তোমার কথায় বিশ্বাস করে না ।any way ডাকো তাকে।

                                                    ( মিরন বেরিয়ে গেল এবং মোহাম্মদি বেগকে নিয়ে ফিরে এলো। )

ক্লাইভ : এ কে? ? looks like a real butcher

মিরন : মোহাম্মদি বেগ।

ক্লাইভ : তুমি রাজি আছো?

মোহাম্মদি বেগ : দশ হাজার টাকা দিতে হবে। পাঁচ হাজার অগ্রিম।

ক্লাইভ : Agreed. (মিরনকে) ওকে টাকাটা এখুনি দিয়ে দাও।

                                                             (মিরন এবং মোহাম্মদি বেগ বেরুবার উপক্রম করলো)

ক্লাইভ : There may be trouble,, অবস্থা বুঝে কাজ করো। Be careful কাজ ফতে হলেই আমাকে খবর

দেবে, যাও। (ওরা বেরিয়ে গেলো। ক্লাইভের মুখটা কঠিন হয়ে উঠলো। বাঁ হাতের তালুতে ডান হাতের

মুঠো দিয়ে আঘাত করে বললো)  it is must| 

  চতুর্থ অংক : দ্বিতীয় দৃশ্য

সময় : ২ জুলাই। স্থান : জাফরাগঞ্জের কয়েদখানা।

[চরিত্রবৃন্দ : মঞ্চে প্রবেশের পর্যায় অনুসারে- কারাপ্রহরী, সিরাজ, মিরন, মোহাম্মদি বেগ।]

(প্রায়-অন্ধকার কারাকক্ষে সিরাজউদ্দৌলা। এক কোণে একটি নিরাবরণ দড়ির খাটিয়া। অন্যপ্রান্তে একটি সোরাহি এবং পাত্র। সিরাজ অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন আর বসছেন। কারাকক্ষের বাইরে প্রহরারত শান্ত্রী। মিরন এবং তার পেছনে মোহাম্মদি বেগের প্রবেশ। তার দুহাত বুকে বাঁধা। ডান হাতে নাতিদীর্ঘ মোটা লাঠি। প্রহরী দরজা খুলতেই কামরায় একটু খানি আলো প্রতিফলিত হলো।) 


সিরাজ : (খাটিয়ায় উপবিষ্ট, আলো দেখে চমকে উঠে) কোথা থেকে আলো আসছে। বুঝি প্রভাত হয়ে এলো।

 (খাটিয়া থেকে উঠে মঞ্চের সামনে এগিয়ে এলো। মঞ্চের মাঝামাঝি এসে দাঁড়ালো মিরন এবং তার পেছনে মোহাম্মদি বেগ।) 

সিরাজ : (মোনাজাতের ভঙ্গিতে হাত তুলে) এ প্রভাত শুভ হোক তোমার জন্যে লুৎফা। শুভ হোক আমার বাংলার জন্যে। নিশ্চিত হোক বাংলার প্রত্যেকটি নরনারী। আলহামদুলিল্লাহ।

মিরন : আল্লার কাছে মাফ চেয়ে নাও শয়তান।

সিরাজ : (চমকে উঠে) মিরন। তুমি এ সময়ে এখানে? আমাকে অনুগ্রহ দেখাতে এসেছো, না পীড়ন করতে?

মিরন : তোমার অপরাধের জন্যে দন্ডাজ্ঞা শোনাতে এসেছি।

সিরাজ : নবাবের দন্ডাজ্ঞা?

মিরন : বাংলার প্রজাসাধারণকে পীড়নের জন্যে দরবারের পদস্থ আমির ওমরাহদের মর্যাদা হানির জন্যে বাংলাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আইনসঙ্গত বাণিজ্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ করার জন্যে, অশান্তি এবং বিপ্লব সৃষ্টির জন্যে তুমি অপরাধী। নবাব জাফর আলি খান এই অপরাধের জন্যে তোমাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন।

সিরাজ : মৃত্যুদন্ড? জাফর আলি খান স্বাক্ষর করেছেন? কই দেখি।

মিরন :মিরন : আসামির সে অধিকার থাকে নাকি? (পেছনে ফিরে মোহাম্মদি বেগ)

মোহাম্মদি বেগ : জনাব।

মিরন : নবাবের হুকুম তামিল করো।

 (সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেল। মোহাম্মদি বেগ লাঠিটা মুঠো করে ধরে সিরাজের দিকে এগোতে লাগলো।)

সিরাজ : প্রথমে মিরন তারপর মোহাম্মদি বেগ। মিরন তবু মির জাফরের পুত্র, কিন্তু তুমি মোহাম্মদি বেগ, তুমি আসছো আমাকে খুন করতে?

 (মোহাম্মদি বেগ তেমনি এগোতে লাগলো। সিরাজ হঠাৎ ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতে যেতে)

সিরাজ : আমি মৃত্যুর জন্যে তৈরি। কিন্তু, তুমি এ কাজ করো না মোহাম্মদি বেগ।

 (মোহাম্মদি বেগ তবু এগোচ্ছে। সিরাজ আরও ভীত)

সিরাজ : তুমি এ কাজ করো না মোহাম্মদি বেগ। অতীতের দিকে চেয়ে দেখো, চেয়ে দেখো। আমার আব্বা-আম্মা পুত্র স্নেহ তোমাকে পালন করেছেন। তাঁদেরই সন্তানের রক্তে সে- রক্তে স্নেহের ঋণ আঃ...

 (লাঠি দিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত করলো। সিরাজ লুটিয়ে পড়লো। মোহাম্মদি বেগ স্থির দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বার হচ্ছে। ডান হাতের কনুই এবং বাঁ হাতের তালুতে ভর দিয়ে সিরাজ কিছুটা মাথা তুললেন।)

সিরাজ : (স্খলিত কন্ঠে) লুৎফা, খোদার কাছে শুকরিয়া এ পীড়ন তুমি দেখলে না।

 (মোহাম্মদি বেগ লাঠি ফেলে খাপ থেকে ছোরা খুলে সিরাজের লুন্ঠিত দেহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং তার পিছে পরপর কয়েকবার ছোরার আঘাত করলো। সিরাজের দেহে মৃত্যুর আকুঞ্চন। মোহাম্মদি বেগ উঠে দাঁড়ালো।

সিরাজ : (ঈষৎ মাথা নাড়বার চেষ্টা করতে করতে মৃত্যু নিস্তেজ কন্ঠে)

 লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ...

 (মোহাম্মদি বেগ লাথি মারলো। সঙ্গে সঙ্গে সিরাজের জীবন শেষ হলো। শুধু মৃত্যুর আক্ষেপে তার হাত দুটো মাটি আঁকড়ে ধরবার চেষ্টায় মুষ্টিবদ্ধ হয়ে কাঁপতে কাঁপতে চিরকালের তো নিস্পন্দ হয়ে গেলো।)

মোহাম্মদি বেগ : (উল্লাসের সঙ্গে) হা হা হা ... 

ওমর খৈয়াম (১৯৬৬), সিংয়ের নাটক (১৯৭১)। 

আরো পড়ুন: এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র নাটক :সিরাজউদ্দৌলা 

এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: বাংলা ১ম পত্র নাটক সিরাজউদ্দৌলা সিকান্দার আবু জাফর(Admission Test)

শব্দের অর্থ ও টীকা :

আকুঞ্চন-- সঙ্কোচন। 

আক্ষেপ-- হাত পা খিঁচুনি, মনস্তাপ। 

আমীর ওমরাহ-- বাদশাহি দরবারের সভাসদ। 

আড়াআড়ি-- কোনাকুনি। 

ইনাম-- পুরস্কার। 

উল্লসিত-- আনন্দিত, উৎফুল্ল। 

ওয়ার ক্রিমিন্যাল-- যুদ্ধাপরাধী। 

কয়েদখানা-- জেলখানা; ফাটক। 

কুর্নিশ-- মুসলমানি কায়দায় অভিবাদন, বাদশাহ ও আমিরকে সম্মান দেখাবার জন্য পেছনে হটে গিয়ে অবনত মস্তকে সালাম। 

খাটিয়া-- ক্ষুদ্রখাট, সাধারনত দড়ি দিয়ে ছাওয়া। 

খাপ-- চামড়ার তৈরি তলোয়ার রাখার পাত্র। 

খেজাতপ-- কলম, সাদা চুল লাল বা কালো করার রং। 

খোয়াব-- স্বপ্ন। 

গর্দান-- ঘাড়সহ মাথা। 

জিম্মাদার-- হেফাজতকারী, তত্ত্বাবধানকারী। 

ঢাল- অস্ত্রের আঘাত নিবারক চর্ম। 

তশরীফ-- উপস্থিত, পদার্পণ; হাজির। 

তামিল-- মান্য, পালন। 

তীর্থ-- পুণ্যস্থান। 

তোড়া--মোড়ক। 

দন্ডাজ্ঞা-- শাস্তির আদেশ। 

নজরানা-- উপঢৌকন, উপহার; ভেট। 

নকীব-- এখানে ঘোষক অর্থে। 

নাতিদীর্ঘ-- অনতি দীর্ঘ। 

নিরাবরণ-- আবরণহীন। 

নিস্পন্দ--স্পন্দ শূন্য, স্থির, নিঃসাড়। 

নিষ্কৃতি-- মুক্তি। 

পদস্থ-- উচ্চপদে অধিষ্ঠিত। 

প্রেক্ষাগৃহ--রঙ্গালয়, নাট্য-মিলনায়তন। 

ফিনকি-- বেগে নির্গত সূক্ষ্ম রক্তধারা। 

বাটোয়ারা-- বন্টন, ভাগ। 

বিঘ্ন--ব্যাঘাত, বাধা। 

বে-শুমার-- অসংখ্য। 

মজলিস-- সভা, বৈঠক। 

রাইয়াৎ-- প্রজা, যে প্রজা জমি নিজে চাষ করার জন্য ভুমিস্বত্ব লাভ করে। 

লুণ্ঠিত--ভ‚মিতলে পতিত। 

লেবাস-- পোশাক। 

শাস্ত্রী-- সশস্ত্র প্রহরী। 

শুকরিয়া-- কৃতজ্ঞতা।

সসম্ভ্রমে-- সসম্মানে। 

সুবে-- বাদশাহি আমলে দেশের রাজনৈতিক বিভাগ। 

সন্ত্রস্ত-- অতিশয় ভীত। 

সালামত-- নিরাপত্তা, শান্তি। 

স্খলিত কন্ঠে-- নিস্তেজ কন্ঠে। 

হুর গেলমান-- ইসলামি বিশ্বাস মতে বেহেশ্তের সেবক সেবিকাবৃন্দ। 

হুঁশিয়ার-- সাবধান।

butcher-- কশাই। 

clown-- বিদূষক। 

forgive-- এখানে উদ্ভট অর্থে প্রযুক্ত। 

forgive--ক্ষমা; মার্জনা।

granite foundation--কঠিন পাথরে তৈরি ভিত্তি; সুদৃঢ় ভিত্তি। 

Hired killer--ভাড়াটে খুনী। 

mad-- পাগল,উন্মাদ। 

ordinemy public--সাধারণ জনতা। 

overwhlmed-- অভিভুত। 

princess-- বেগম।

silly-- বোকাটে, দুর্বলচেতা।

soldier-- সৈনিক।

spit-- থুতু ফেলা।

sympathy-- সহানুভুতি।

terror-- ভীতি।

traitor-- বিশ্বাসঘাতক।

trouble-- অসুবিধা, ঝামেলা বা ঝঞ্ঝাটে ফেলা।


টীকা :

নাটোরের মহারাণী- জন্ম ১১২১-১২০০(?) বঙ্গাব্দ। নাটোরের জমিদার রাজা রামকান্ত রায়ের স্ত্রী। দীনদুঃখীর দুর্দশা মোচন ও সমাজকল্যাণের জন্য নাটোরের মহারানী ভবানী স্বনামধন্য। ১১৫৩ বঙ্গাব্দে স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হন। নাটোর জমিদারীর বাৎসরিক আয় ছিল দেড় কোটি টাকা। নবাব সরকারের কোষাগারে রানী ভবানী বাৎসরিক ৭০ লক্ষ টাকা রাজস্ব জমা দিতেন। তিনি মুর্শিদাবাদের নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে গদিচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে ইংরেজ পক্ষে ষড়যন্ত্রকারীদের ভর্ৎসনা করেছিলেন।

নৌবেসিং হাজারী- নবাব পক্ষের অন্যতম সেনাপতি।

পলাশি- এ গ্রামেরই প্রান্তরে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন তারিখে ঐতিহাসিক পলাশির যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

বদ্রী আলী খাঁ- পলাশির যুদ্ধে নবাব পক্ষের অন্যতম যোদ্ধা ও সেনাপতি, মীর মর্দান এর জামাতা।

মুহম্মদ ইরিচ খাঁ- মীর্জা ইরাজ খান নামেও পরিচিত। লুৎফুন্নিসার পিতা এবং বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার

শ্বশুর। ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার বালিকা কন্যা লুৎফুন্নিসাকে বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁ দৌহিত্র সিরাজের সঙ্গে বিয়ে দেন।

লুৎফুন্নিসা- নবাব সিরাজউদ্দৌলার পত্মী। তার পিতার নাম মীর্জা ইরাজ খান। ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে এদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় সিরাজের বয়স ছিল তের বছর আর লুৎফুন্নিসা ছিলেন নিতান্ত বালিকা। জাঁকজমকপূর্ণ এই বিয়ের স্মৃতি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে অক্ষুণ্ণ ছিল। লুৎফুন্নিসা রাজনীতির কুটিল পরিমন্ডল থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। সুখ-দুখকাতর সাধারণ নারীর মতই ছিল তার জীবন। ভাগ্যাবিড়ম্বিতা নারীর মতোই তার জীবনের পরিণতি। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজের পলায়ন মুহূর্তের সঙ্গী ছিলেন লুৎফুন্নিসা। গন্তব্যহীন ঐ পলায়ন পথেই স্বামীসঙ্গ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সিরাজ বন্দী হলে তাকে শত্রুরা মুর্শিদাবাদে প্রেরণ করে, কিন্তু লুৎফুন্নিসাকে পাটিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়। সিরাজের মৃত্যুর পর ইংরেজরা তাকে মুর্শিদাবাদে পুনরায় নিয়ে এসেছিল। তিনি মিরজাফর পুত্র মিরনের বিবাহ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নবাব সিরাজের স্মৃতিকে নিষ্ঠার সঙ্গে অন্তরে ধরে রেখেছিলেন।

শওকতজঙ্গ- নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালাত ভাই ও রাজনৈতিক শত্রু। আলিবর্দি খাঁর দ্বিতীয় কন্যা শাহ বেগম এর পুত্র। শওকতজঙ্গের পিতার নাম সৈয়দ আহমদ। ইনি আলিবর্দির জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হাজি মোহাম্মদের দ্বিতীয় পুত্র। শওকতজঙ্গের সঙ্গে নবাবের যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন কাশ্মীরের হিন্দু যুবক মোহনলাল।

সাঁফ্রে- পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে অংশগ্রহণকারী অন্যতম বিশ্বস্ত ফরাসি সেনাপতি। 

মোহাম্মদি বেগ- বাংলার ইতিহাসের এক ঘৃণ্য চরিত্র মোহাম্মদি বেগ। কৃতঘ্ন এবং অতিশয় হিংস্র চরিত্রের মানুষ হিসেবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে মোহাম্মদি বেগের স্থান। ক্লাইভ কারারুদ্ধ সিরাজকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিলে সিরাজের প্রাণহরণে একে একে সবাই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অবশেষে মিরজাফর পুত্র মীরনের মধ্যস্থতায় মোহম্মদী বেগ রাজি হয় সিরাজকে হত্যা করতে। তার এই সম্মতির পেছনে কোন রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত ছিলো না, নিতান্তই অর্থের লোভে মোহম্মদী বেগ সিরাজ হত্যার মত নৃশংস কাজের দায়িত্ব সাগ্রহে গ্রহণ করে নেয়। 

সিরাজের পিতা জয়েনউদ্দিন আহমদ অনাথ মোহাম্মদি বেগকে স্নেহের সাথে লালন পালন করেছিলেন এবং বয়ঃপ্রাপ্ত হলে সিরাজ জননী আমেনা বেগম তার বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। নিহত হওয়ার পূর্বে সিরাজ তাকে অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন কিন্তু কৃতঘ্ন মোহম্মদী বেগ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২রা জুলাই সিরাজকে শেষ প্রার্থনার সময় পর্যন্ত না দিয়ে নিষ্ঠুর জল্লাদের মত নৃশংসভাবে হত্যা করে।


সারসংক্ষেপ

পলাশির যুদ্ধে জয়লাভ করে ১৭৫৭ সনের ২৯ জুন তারিখে সপরিষদ দরবারের আয়োজন করেছেন মিরজাফর। মির জাফর স্পষ্টতই জানিয়ে দেন যে, ক্লাইভ সাহেব হাত ধরে তুলে না দিলে তিনি সিংহাসনে আসন গ্রহণ করবেন না। ক্লাইভ অবশেষে তার হাত ধরে তাকে সিংহাসনে বসিয়ে দেন এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে লোকদেখানো নজরানাও প্রদান করেন। তখন দরবার কক্ষে আসে টাকার লোভে উন্মাদগ্রস্ত উমিচাঁদ। চুক্তিপত্র অনুযায়ী সিরাজের পতন হলে ক্লাইভ উমিচাঁদকে বিশ লক্ষ টাকা প্রদান করবেন। 

কিন্তু পূর্বেই আসল চুক্তিপত্র নষ্ট করে নকল চুক্তিপত্র প্রস্তুত করে রেখেছিল ধূর্ত ক্লাইভ। উমিচাঁদ এই প্রতারণার শিকার হয়েই এখন উন্মাদ। ক্লাইভের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মিরজাফর এবং তার আন্তরিক সহায়তার জন্য পুরস্কার হিসেবে বার্ষিক চার লক্ষ টাকা আয়ের জমিদারি ও ২৪ পরগনার স্থায়ী মালিকানা দান করেন। এ-সময় মির কাসেমের সৈন্যদের হাতে ভগবান গোলায় সিরাজউদ্দৌলার বন্দী এবং দ্রæত রাজধানীতে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণের খবর আসে। 

ক্লাইভ ও মিরন সিরাজ হত্যা পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ক্লাইভ চান দ্রæত সিরাজ হত্যার বাস্তবায়ন। কিন্তু সিরাজ হত্যার আদেশ দিতে সকলেই কুন্ঠিত। ক্লাইভ ভবিষ্যৎ মসনদ এবং পরাভ‚ত নবাবের বেগম লুৎফুন্নিসার লোভ দেখিয়ে মিরনকে মোহের ফাঁদে আটকে ফেলেন। ক্লাইভের নির্দেশে মিরন অগ্রিম দশ হাজার টাকা প্রাপ্তির শর্তে মোহাম্মদি বেগকে সিরাজ হত্যাকান্ড রাজি করায়। জাফরাগঞ্জের কয়েদ খানার প্রায়ান্ধকার কক্ষে সিরাজকে মিরন শয়তান আখ্যায়িত করে শেষবারের মত সৃষ্টিকর্তার কাছে মাফ চাইতে নির্দেশ দেয়। 

কুচক্রী মিরন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলে প্রজাপীড়নের জন্য, পদস্থ অমাত্যবর্গের মর্যাদাহানির জন্য ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যের বৈধ অধিকার ক্ষুণ্ণ করার জন্য এবং দেশে বিপ্লব সৃষ্টি করার জন্য নবাব জাফর আলী খান সিরাজের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছেন। সিরাজ নবাবের স্বাক্ষর করা ফরমান দেখতে চাইলে মিরন আসামীর অধিকারের অজুহাত তুলে এবং সঙ্গী মোহাম্মদি বেগকে নবাবের আদেশ কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে দ্রুত কারাকক্ষ থেকে প্রস্থান করে। 

ঘাতক মোহাম্মদি বেগ সিরাজের মাথায় লাঠির প্রচন্ড আঘাত করে। সিরাজের মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাষন্ড ঘাতক মোহাম্মদি বেগ খাপ থেকে ছোরা বের করে সিরাজের ভ‚মিতলে পতিত দেহের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্রমান্বয়ে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করে। সিরাজের দেহে মৃত্যুর লক্ষণ ফুটে উঠলে মোহাম্মদি বেগ উঠে দাঁড়ায়। ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই’ এটি বলতে বলতে বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা জীবনাবসান ঘটে। 


বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১৭. নবাব সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকারী কে?

ক. মিরজাফর                 খ. মিরন

গ. মোহাম্মদি বেগ            ঘ. জগৎশেঠ

১৮. ঘসেটি বেগমের প্রকৃতি হল-

i. সন্তানবৎসল

ii. স্বার্থপরায়ণ

iii. ক্ষমতালিপ্সু 

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i         খ. ii

গ. iii       ঘ. i ও ii

নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ১৯ ও ২০ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

অন্যায়ের কাছে নত নয় শির ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর।

১৯. উদ্দীপকের কোন দিকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে প্রকাশিত হয়েছে?

ক. নবাবের অনুগত সৈন্যবাহিনীর বীরত্ব     

খ. বাণিজ্য বিস্তারে ইংরেজদের কূটকৌশল

গ. নবাবের দরবারের আমলাদের উচ্চাকাক্সক্ষা 

ঘ. মিরজাফরের কাপুরুষোচিত আচরণ

২০. উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ফুটে উঠেছেÑ

i. বীরযোদ্ধারা বীরের মত লড়াই করে

ii. নবাব বাহিনী অন্যায়ের কাছে নত হয়নি

iii. দেশপ্রেমিক সৈনিকরা ষড়যন্ত্রকারী নয়

নিচের কোনটি সঠিক?

ক.i                    খ. ii

গ.iii                   ঘ. i, ii ও iii

২১. বাংলা নাটক সর্বপ্রথম কত তারিখে অভিনীত হয়?

ক. ২৯ নভেম্বর,১৯৯৫                  খ. ২৭ ডিসেম্বর, ১৮৯৫

গ. ২৯ ডিসেম্বর, ১৬৯৫                 ঘ. ২৭ নভেম্বর, ১৭৯৫

২২. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক কয়টি অঙ্কে বিভক্ত?

ক. দুইটি               খ. তিনটি

গ. চারটি                ঘ. পাঁচটি

২৩. নবাব সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কে ডাচ ও ফরাসিদের নিকট সাহায্য চেয়েছিল?

ক. লর্ড ক্লাইভ               খ. ক্লেটন

গ. ওয়াটসন                   ঘ. হলওয়েল

২৪. ঘসেটি বেগমের সাজ কেমন ছিল?

ক. নরালংকার সাদামাটা সাজ          খ. রাজমাতার গম্ভীর সাজ

গ. দীনহীন নিরাভরণ সাজ               ঘ. জাঁকজমকপূর্ণ জলসার সাজ

২৫. ‘সিরাজের পতন কে না চায়?’- উক্তিটি করেছিলেন?

ক. মিরজাফর              খ. ঘসেটি বেগম

 গ. উমিচাঁদ                  ঘ. লর্ড ক্লাইভ

২৬. মিরনের কাছে ছদ্মবেশে কে এসেছিলেন?

ক. মিরজাফর             খ. রায়দুলর্ভ

 গ. জগৎশেঠ              ঘ. উমিচাঁদ

২৭. ‘ওরা বেনিয়ার জাত।’ -কাদের বলা হয়েছে?

ক. ওলন্দাজদের            খ. ইংরেজদের

গ. ডাচদের                     ঘ. ফরাসিদের

২৮. পলাশির যুদ্ধে সিরাজের পতন হলে-

i.ক্লাইভ পাবে দশ লক্ষ টাকা

ii. কলকাতার লোকেরা পাবে সত্তর লক্ষ টাকা

iii. কোম্পানি পাবে এক কোটি টাকা

নিচের কোনটি সঠিক?

ক.i           খ.ii

গ. iii        ঘ.i, ii ও iii

২৯.‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের চতুর্থ অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যের স্থান কোনটি?

ক. মিরজাফরের দরবার             খ. মুর্শিদাবাদের দরবার

গ. নবাবের দরবার                     ঘ. জাফরাগঞ্জের কয়েদখানা

৩০.গঙ্গাজল ছুঁয়ে কে শপথ করেছিল?

ক. জগৎশেঠ             খ. মিরজাফর

গ. মিরন                     ঘ. রাজবল্লভ

৩১. ‘তা বলে বাঙালি কাপুরুষ নয়’ উকিÍটিতে প্রকাশ পেয়েছে বাঙালির-

i. সাহসিকতা

ii. কাপুরুষতা

iii. বীরত্ব

নিচের কোনটি সঠিক?

ক.i        খ. ii

গ.iii      ঘ. i ও iii

৩২. সাদা নিশান কিসের প্রতীক?

ক. পরাজয়ের                 খ. বিজয়ের

গ. যুদ্ধবিরতির                 ঘ. সন্ধির

৩৩. ‘আমরা আপনার কর্তৃত্ব মানব না।’ -এখানে ‘আপনি’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?

ক. লর্ড ক্লাইভ                     খ. গভর্নর ড্রেক

গ. নবাব সিরাজ                 ঘ. মিরজাফর আলি খাঁ

৩৪. ‘যুদ্ধ কর, প্রাণপণে যুদ্ধ কর।’ উক্তিটি করা হয়েছে যে কারণে-

ক. যুদ্ধযাত্রার অভিপ্রায়ে                     খ. দুর্গ জয়ের জন্য

গ. সেনাদের মনোবল বাড়াতে             ঘ. পরাজয়ের শোধ নিতে

৩৫.নবাব সিরাজের মতে ইংরেজরা যে কারণে সভ্য জাতি-

i. ইংরেজরা বাণিজ্য শর্ত মেনে চলে

ii. তারা নিয়ম ও শৃঙ্খলা জানে

iii. ইংরেজদের শাসন মানার অভ্যাস রয়েছে

নিচের কোনটি সঠিক?

ক.i           খ. ii

গ. iii         ঘ. i, ii ও iii

৩৬. সিরাজ পলায়নপর জনতাকে আশ্বাস দিলেন যেভাবে-

i. বিহারের রাম নারায়ণ সহযোগিতা করবে

ii. আপনারা হাল ছেড়ে দেবেন না

iii. আমার পাশে এসে দাঁড়ান

নিচের কোনটি সঠিক? 

ক.i           খ. ii

গ. iii         ঘ. ii ও iii

নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৩৭ ও ৩৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

কলিমদ্দি দফাদার ইউনিয়ন বোর্ডের চাকুরে। চাকুরিগত কারণে তাকে সব সময় পাক-বাহিনীর সঙ্গে থাকতে হয়। তবে সে পাক-বাহিনীর সঙ্গে থাকলেও অন্তরালে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।

৩৭. উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদারের বিপরীত পরিচয় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের যে চরিত্রে ফুটে উঠেছেÑ

ক. মিরমর্দান             খ. মোহনলাল

গ. উমিচাঁদ                 ঘ. গভর্নর ড্রেক

৩৮. উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদার ও নাটকের রাইসুল জুহালা চরিত্রে প্রকাশিত হয়েছেÑ

ক. প্রাসাদ ষড়যন্ত্র             খ. দেশপ্রেম

গ. কূটকৌশল                 ঘ. হিংসা-বিদ্বেষ

নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৩৯ ও ৪০ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

বেশ সুখেই ছিল রামশীলের জনসাধারণ। কিন্তু দেশপ্রেমিক ও প্রজাদরদী রাজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে রাজ্যের সেনাপতি। তিনি রাজাকে হটিয়ে দিয়ে সিংহাসনে বসতে আগ্রহী। রাজাও কোন অবস্থাতেই সিংহাসন ছাড়তে নারাজ।

৩৯. উদ্দীপকের সেনাপতির সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে যে চরিত্রের মিল রয়েছেÑ

ক. কর্নেল ক্লাইভ             খ. মিরজাফর

গ. উমিচাঁদ                     ঘ. জগৎশেঠ

৪০. এ ধরণের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়-

i. বিশ্বাসঘাতকতায়

ii. বর্বরতায়

iii. প্রজা নির্যাতনে

নিচের কোনটি সঠিক?

ক.i        খ. ii

গ. iii      ঘ.i ও ii

নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৪১ ও ৪২ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। এদিন কিছু বিপথগামী উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা উচ্চাভিলাষী হয়ে ক্ষমতা লাভের স্পৃহায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।

৪১. উদ্দীপকের ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ চরিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে যাকে প্রতিনিধিত্ব করেÑ

ক. নবাব সিরাজউদ্দৌলা             খ. মিরমর্দান

গ. নবাব আলিবর্দি খাঁ                 ঘ. কর্নেল ক্লাইভ

৪২. উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মিল রয়েছে যে বিষয়েÑ

i. সুশাসন ও জনকল্যাণে

ii. জনগণের শান্তিবিধানে

iii. উচ্চাভিলাষ ও ক্ষমতার লোভে

নিচের কোনটি সঠিক?

ক.i        খ. ii

গ.iii      ঘ.i ও  ii 

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

১৭. গ ১৮. গ ১৯. ক ২০. ঘ ২১. গ ২২. ঘ ২৩. ঘ ২৪. ঘ
২৫. খ ২৬. খ ২৭. খ ২৮. ঘ ২৯. ঘ ৩০. ঘ ৩১. ঘ ৩২. ঘ ৩৩. খ ৩৪. গ ৩৫. ঘ ৩৬. ঘ
৩৭. গ ৩৮. খ ৩৯. খ ৪০. ক ৪১. ক ৪২. গ


সৃজনশীল প্রশ্ন-১ : 

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে 

বাবু কহিলেন, বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।

 কহিলাম আমি, তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই।

 চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো- জোর মরিবার মতো ঠাঁই।

 শুনি রাজা কহে, বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,

 পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা-


ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে কয়টি অঙ্ক আছে?

খ. ‘ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন, এ বড় লজ্জার কথা।’ -কে, কেন কথাটি বলেছে?

গ.‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের কোন বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের উপেন চরিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা

কর।

ঘ. ‘উদ্দীপকের বাবু ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের মানসিকতা একই সূত্রে গাঁথা।” মূল্যায়ন কর। 


সৃজনশীল প্রশ্ন-২ :

রামের আক্রমণে সোনার লঙ্কা ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে গেছে। যেভাবেই হোক তাঁর আগ্রাসন হতে লঙ্কাপুরিকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু কোনমতেই কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। এগিয়ে এলেন লঙ্কার বীর সন্তান মেঘনাদ। তাঁর চাচা বিভীষণ আবার রামচন্দ্রের দোসর। ধর্মের নামে তিনি রামচন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তবুও মেঘনাদ দমলেন না। তিনি নিকুম্ভিলা যজ্ঞঘরে গেলেন যজ্ঞের আয়োজনে। মেঘনাদের শেষ রক্ষা হয় নি। যুদ্ধের এক পর্যায়ে বিভীষণের সহযোগিতায় লক্ষণ মেঘনাদকে হত্যা করে। এভাবে লঙ্কার স্বাধীনতা- সূর্য পশ্চিম দিগন্তে ঢলে পড়ে।

ক. সিকান্দার আবু জাফর কোন সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন?

খ. কী কারণে পলাশির যুদ্ধে নবাব পক্ষের পরাজয় ঘটে?

গ. মেঘনাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রে ফুটে উঠেছে? -আলোচনা কর।

ঘ. “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয়টিই পরিণতির দিক থেকে করুণ রসাত্মক।”-মূল্যায়ন

কর। 


সৃজনশীল প্রশ্ন-৩ :

খালাত বোনের মৃত্যুর পর তার একমাত্র সন্তান শুভকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন আরশাদ করিম। তিনি শুভকে নিজপুত্র আশিকের মতো লালন-পালন করেন। বড় হয়ে শুভ একদিন সম্পত্তির লোভে মামাতো ভাই আশিকের বুকে অস্ত্র ধরে। মৃত্যুভয়ে ভীত আশিক শুভর নিকট অনেক অনুনয়-বিনয় করে। কিন্তু বিধি বাম। এক পর্যায়ে আশিক শুভর উদ্দেশ্যে বলে, “আমার বাবা-মা তোমাকে পুত্রবৎ লালন-পালন করেছেন। তোমাকে পরম স্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। আজ তুমি আমায় হত্যা করবে?” শুভর পাষাণ হৃদয় গলেনি। আশিকের নিথর দেহ মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

ক. পলাশি কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

খ. ‘ইনি কি নবাব না ফকির।’-কে, কোন প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছিল?

গ. উদ্দীপকের আশিক ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে ? -আলোচনা কর।

ঘ. “উদ্দীপকে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটি বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটেছে।”-মূল্যায়ন কর। 


সৃজনশীল প্রশ্ন-৪ :

বাংলাদেশের ইতিহাসে তাজউদ্দিন আহমেদ গভীর দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে তাঁর প্রতি গভীর আনুগত্য প্রকাশ করে তিনি দেশমাতৃকার সেবা করেছিলেন। কোনো লোভ বা লালসা তাঁকে কর্তব্যবোধ থেকে টলাতে পারেনি। জীবনকে বাজি রেখে তিনি নেতার আদর্শ বাস্তবায়ন করেছেন। নেতার স্বপ্নের উৎসারণ ঘটিয়েছেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি দৃঢ়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালির মুক্তিসমরে। তাই আজ তিনি সকলের নিকট নন্দিত। বাংলার ইতিহাসে তার নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। 

ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে কাকে ইংরেজদের চিরকালীন বন্ধু বলা হয়েছে?

খ. ‘ভীরু প্রতারকের দল চিরকালই পালায়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের তাজউদ্দিন আহমদ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?-আলোচনা কর।

ঘ. “মোহনলাল ও তাজউদ্দিন আহমেদের দেশপ্রেম বাঙালির জাতীয়তাবোধে চিরকালীন প্রেরণার উৎস।” উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আলোকে মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।


সৃজনশীল প্রশ্ন-১ এর নমুনা উত্তর :

ক.

সিকান্দার আবুজাফর রচিত ‘সিরাজউদ্দৌলা নাটকে পাঁচটি অঙ্ক রয়েছে।

খ.

‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উমিচাঁদ প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে আলোচ্য উক্তিটি করেছে। বাণিজ্য করার নাম করে এসে এক সময় ইংরেজদের লোলুপ দৃষ্টি বাংলার শাসন ক্ষমতার উপর নিপতিত হয়। ফলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের দমন করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। নবাবের সেনারা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করলে ইংরেজ সৈন্যরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ইংরেজ বাহিনীর চতুর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ নিজেদের সৈন্যদের আসন্ন পরাজয় কিংবা পরাজয়ের দৃশ্য দেখবার আগে পালিয়ে যায়। নবাবের দরবারের একজন আমলা উমিচাঁদ এই দৃশ্য দেখে ফেলে। তাই দুর্গ ছেড়ে ইংরেজরা পালিয়ে যাওয়ায় সুযোগ বুঝে উমিচাঁদ এই উক্তিটি করেছিল।

গ.

উদ্দীপকের উপেন চরিত্রে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের শোষণের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি পলাশির যুদ্ধের কাহিনি অবলম্বনে রচনা করা হয়েছে। ইংরেজরা ভারতবর্ষে আসে বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে। বাংলার রাজনীতির দুর্বলতার সুযোগে তারা এদেশের মানুষকে শোষণ করাও আরম্ভ করে। নিজেদের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা বাংলার অসহায় মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার চালাত। ইংরেজদের নিকট উৎপাদিত পণ্য- দ্রব্য বিক্রি করা না হলে তারা জনগণকে নির্যাতন করত। দেশের নির্যাতিত মানুষ নবাবের কাছে এসব অত্যাচারের প্রতিকার চাইতে আসত। উদ্দীপকে উপেন প্রচলিত সমাজের শোষণের শিকার হয়েছে। সে তার সককিছু হারিয়ে আজ নিঃস্ব।

 এখন তার বাকী আছে শুধু দুই বিঘা জমি। এটুকুও জমিদার গ্রাস করতে অতি আগ্রহী। মরণের পর ঠাঁইয়ের কথা বলেও উপেন জমিদারের নিকট থেকে নিস্তার পায়নি। অপরদিকে নবাব সিরাজের আমলে বাংলার এক লবণ চাষি ইংরেজদের নিমর্মতার শিকার হয়েছে। সে ইংরেজদের কাছে লবণ বিক্রি করতে চায়নি। তাই তারা লবণচাষির ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তার পরিবারের মানুষগুলোর উপর চালিয়েছে অমানবিক নির্যাতন। ইংরেজদের অত্যাচারের কবল থেকে বাঁচার জন্য সাধারণ মানুষ কখনো কখনো নবাবের দরবারে প্রতিকার চাইতে আসতো। বস্তুত উপেনের চরিত্রের মধ্যে নাটকের ইংরেজদের শোষণের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ.

উদ্দীপকে বাবু এবং সিরাজউদ্দৌলা নাটকে ইংরেজদের মানসিকতা একই সূত্রে গাঁথা, কেননা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে উভয়েই শোষক শ্রেণির। ইংরেজরা সাত-সাগর তের নদীর ওপার থেকে বাংলাদেশে এসেছিল বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে তারা এদেশের রাজনীতির দিকে নজর দেয়। একসময় তারা অন্যায়ভাবে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করে। আর শাসন-শোষণের উদ্দেশ্যে বাংলার মানুষের উপর নির্যাতন চালায়। বাংলার টাকায় ভরে ওঠে ইংরেজের গোলা। এভাবে তারা সুদীর্ঘ একশত নব্বই বৎসর এদেশের মানুষকে রক্তচোষা জোঁকের মত শোষণ করেছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত বাবু একজন জমিদার। অধীনস্থ প্রজাদের শোষণ করে অর্থ-বিত্তে স্ফীত হওয়াই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

 নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য সে উপেনের উপর অত্যাচার করেছে। এছাড়া নিজের বিলাসিতাকে পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে সে উপেনের শেষ সম্বল দুইবিঘা জমিটুকুও দখল করে নিতে চায়। পক্ষান্তরে সিরাজউদ্দৌলা নাটকে দেখা যায়, এক লবণচাষি ইংরেজ বণিকদের নিকট লবণ বিক্রি করেনি বলে ইংরেজরা তার উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। তার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ইংরেজরা লবণচাষির পরিবারের লোকদেরকেও নির্যাতন থেকে রেহাই দেয় না। 

এদিক থেকে উদ্দীপকের বাবু চরিত্রের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের ইংরেজদের মিল রয়েছে। উদ্দীপকের বাবু চরিত্রটি আমাদের সামন্ত-সমাজের জীবন্ত প্রতীক। বাবু চরিত্রটি ক্ষমতার দাপটে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব লুণ্ঠন করে। আর নাটকেও রয়েছে এদেশকে দখল করার জন্য ইংরেজদের কূটকৌশল প্রয়োগের বর্ণনা। ইংরেজরা এদেশ দখল করে দস্যুর মত লুট করেছিল বাংলার মানুষের সর্বস্ব। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বাবু এবং নাটকে ইংরেজদের চরিত্র একই সূত্রে গাঁথা।


সৃজনশীল প্রশ্ন-২ এর নমুনা উত্তর :

ক.

সিকান্দার আবুজাফর ‘সমকাল’ নামক মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

খ.

মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। এদিন পলাশির আ¤্রকাননে নবাব বাহিনী ও ইংরেজ সেনাবাহিনী পরস্পরের মুখোমুখী হয়। যুদ্ধে

আত্মবলে বলীয়ান নবাব জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর সেনাপতি মিরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে

স্বার্থের মোহে ইংরেজদের সঙ্গে যোগ দেন। তিনি নবাব বাহিনীকে অসময়ে যুদ্ধ বন্ধ করার আদেশ দেন। এই সুযোগটি

কাজে লাগিয়ে ইংরেজ বাহিনী নবাবের সৈন্যদলকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ফলে পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত

হন।

গ.

মেঘনাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকে মেঘনাদ চরিত্রটি একটি বীর চরিত্র। মেঘনাদ চরিত্রে দেশপ্রেম রয়েছে। স্বদেশের জন্য মেঘনাদ অপরিমেয় মমত্ববোধ অনুভব করে। সে তার নিজের দেশকে বাইরের শত্রæর হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছে। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু তার চাচা বিভীষণের জন্য সে শেষ পর্যন্ত কুলিয়ে উঠতে পারেনি। পক্ষান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। তিনিও দেশকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন। 

দেশকে ভালোবাসার কারণে তিনি এখান থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করতে চেয়েছিলেন। তিনি পলাশির যুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদি ইংরেজ শক্তিকে উচিত শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি তাঁরই সেনাপতি মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায়। সর্বোপরি সিরাজ চরিত্রে দেশপ্রেমের সঙ্গে বীরধর্মও মিশ্রিত হয়েছিল। ফলে দেখা যায়, মেঘনাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রে ফুটে উঠেছে।

ঘ.

উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয়টিই পরিণতির দিক থেকে করুণ রসাত্মক হয়েছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে রাজনীতির নানা সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে। স্বাধীন দেশের নবাব হয়েও তিনি স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারেননি। রাষ্ট্রের ভেতর-বাহির দুদিক থেকেই তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। একদিকে ইংরেজদের ছল-চাতুরি অন্যদিকে ঘসেটি বেগম-মিরজাফরের ষড়যন্ত্র তাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। ফলে রাজনীতিতে তিনি বিভ্রান্তির শিকার হন। শেষ পর্যন্ত পলাশির যুদ্ধে তার ভুল নীতির জন্যই তাকে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে।

উদ্দীপকে বিভীষণ একটি বিশ্বাসঘাতক চরিত্র। সে মেঘনাদের সম্পর্কে চাচা। কিন্তু স্বার্থের মোহে প্রতিপক্ষ রামের সঙ্গে সে সন্ধি করে। মেঘনাদকে হত্যার জন্য গোপনে রামের বাহিনীকে সহায়তা করে। বিভীষণের মত হীন লোকের কারণেই লঙ্কার  দেশপ্রেমিক সন্তান মেঘনাদের মতো বীরকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মিরজাফরও একজন বিশ্বাসঘাতক চরিত্র। সে স্বার্থপর ও লোভী। নিজের দেশ কিংবা মানুষ কারও জন্য তার মমত্ববোধ নেই। সে নবাব পক্ষের সেনাপতি এবং বাংলার প্রধান সেনাপতি। তবুও গোপনে হাত মেলায় ইংরেজদের সঙ্গে। অর্থের মোহে বাঙালি হয়েও নিজের দেশকে তুলে দেয় ইংরেজদের হাতে। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই সুদীর্ঘ দুই শতাব্দী বাঙালি জাতিকে ইংরেজদের পদানত থাকতে হয়েছে।

উদ্দীপকের বিভীষণ দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে হাত মিলিয়েছে রামের সঙ্গে। এর পরবর্তী ফল হচ্ছে সোনার লঙ্কার পরাধীনতা। অপর দিকে মিরজাফরও স্বীয় স্বার্থ উদ্ধারে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। যার অনিবার্য পরিণতি দুইশত বৎসরকাল যাবৎ বাংলার পরাধীনতা। তাই বলা যায়, উদ্দীপক এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয়ের পরিণতি করুণ রসাত্মক। 


নিজে কর

সৃজনশীল প্রশ্ন-৫

লেডিস এ্যান্ড জেন্টলম্যান, লর্ড কর্নওয়ালিশের খুব বুদ্ধি ছিল। তিনি পারমানেন্ট সেটেলমেন্ট দ্বারা জমিদার করিলেন আর জমিদারগণ লেজ নাড়িতে লাগিল। আপনারা বলেন, কর্নেল ক্লাইভ যুদ্ধ করিয়া বঙ্গদেশ জয় করিলেন। নো, নেভার। আই মাস্ট নট টক লাইক এ্যান ইডিয়ট। ইতিহাসকে মিথ্যা করিতে পারিব না। বাংলাদেশের মেরাজ আলি সকল আপন হস্তে ক্লাইভের পকেটে বাংলাদেশ ঘুষড়াইয়া দিলেন। সো লঙ লিভ মেরাজ আলি, লঙ লিভ জমিদার জাতি।

ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ কোন ধরণের নাটক?

খ. ‘কেউ নেই, কেউ আমার সঙ্গে দাঁড়াল না লুৎফা।’-উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে বলুন।

গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ‘বাঙালি শ্রেণিটি’র কোন বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে?-আলোচনা

কর।

ঘ. “পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয় ছিল এক গভীর ষড়যন্ত্রের ফসল।” -উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আলোকে মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url