ফিতরা কি

Fitra

আমাদের  ওয়েবসাইট “অর্ডিনেট আইটি.কম” ও  চ্যানেল ”অর্ডিনেট ক্লাসরুম  ”আপনাদের  স্বাগতম । 
আমরা একটি ভিন্ন প্রজন্মের স্বপ্ন দেখি। আমরা অধিক চিন্তাশীল প্রজন্ম গড়তে চাই, আলাদা মানুষ যাদের আগে চিন্তা করার অভ্যাস থাকবে। আমরা মানুষ কেন? কারণ আমরা চিন্তা করি, এবং সেই চিন্তাকে মুক্তচিন্তা হতে হবে। আর মুখস্থ করে আর যা ই হোক, বিজ্ঞান শিক্ষা হতে পারে না। আর সেই প্রচেষ্টারই অংশ হল আমাদের কনটেন্ট ও ভিডিও লেকচার। এই কনটেন্ট ও  ভিডিওগুলির উদ্দেশ্য হল প্রতিটি বিষয় এমনভাবে শেখানোর চেষ্টা করা যাতে আপনি বইয়ের বাইরেও অনেক কিছু ভাবতে পারেন। আর আপনি যখন চিন্তাশীল মানুষ হবেন, তখন আপনি নিজেই বুঝবেন এই দেশকে আলাদা করতে আমাদের কী করতে হবে, কতদূর যেতে হবে।

পেজ সূচিপত্র : ফিতরা কি(Fitra)

 ফিতরা কি

ফিতরা বা ফেতরা(فطرة) আরবী শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত। ফিতরা রমাজান কেন্দ্রিক অত্যন্ত গুরুত্বপূণ আমল । যাকাতুল ফিতর বা সাদাকাতুল ফিতর হলো আমাদের রোজার যাকাত। আমরা রোজা থাকাকালীন যে সকল ভূল ত্রুটি করে থাকি তার পরিশুদ্ধির জন্য সাধারণত রোজার যাকাত হিসেবে ফিতরা আদায় করে থাকি।

আর পড়ুন:ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি?

সাদাকাতুল ফিতর মূলত সাদাকা ও ফিতর এই দুটি আরবি শব্দের সমষ্টি। সাদাকা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দান, ফিতর শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো উন্মুক্তকরণ বা রোজা ভঙ্গকরণ।দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর যেহেতু তা ভঙ্গ করা হয় এবং এ উপলক্ষে শরিয়ত কর্তৃক আরোপিত এই দান গরীব ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়, তাই একে সাদাকাতুল ফিতর নামে আখ্যায়িত করা হয়।

ফিতরা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে  ইদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে প্রদান করতে হয়।

ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব 

নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। ঈদের দিন সকালে যিনি নিসাব  পরিমান সম্পদের মালিক থাকবেন, তার নিজের ও পরিবারেরফিতরা আদায় করা তার ওপর  ওয়াজিব। 

ইবনে উমর থেকে জানা যায়

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের যাকাতুল ফিতর এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব ওয়াজিব করেছেন। তিনি সকল ব্যক্তিকে ঈদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বেই ফিতরা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন।

আবু সা’ঈদ আলখুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,তিনি বলেছেন: ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময়ে সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে এক ‘স্বা’ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য,বা এক ‘স্বা’ খেজুর,বা এক ‘স্বা’ যব বা এক ‘স্বা’ কিসমিস প্রদান করতাম’।- [বুখরী,(১৪৩৭)]

সাদাকাতুল ফিতর সকল মুসলমান নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, সকলের জন্য আদায় করা ওয়াজিব। এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,

ইবনে ওমর বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ‘স্বা’ পরিমাণ খেজুর বা যব যাকাতুল ফিতরা হিসাবে ওয়াজিব করেছেন এবং তা ইদুল ফিতরের দিন  ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন’।যদি কোনো ব্যক্তি ঈদের দিন সুবহে সাদেকের পূর্বে মারা যায়,

 তাহলে তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। এভাবে যদি সুবহে সাদেকের পরে কোনো বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তার পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। 

তবে যদি কোনো ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বা মুসলিম হয় এবং কোনো বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তাহলে তাদের ওপরও ফিতরা ওয়াজিব। সাদাকাতুল ফিতর হলো জানের সদকা, এটি মালের সদাকা নয়। বিধায় জীবিত সকল মুসলিমের জানের সদকা আদায় করা ওয়াজিব। কোন ব্যক্তি সিয়াম পালনে সক্ষম না হ’লেও তার জন্য ফিৎরা ওয়াজিব।

আর পড়ুন:আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি

ফিতরা আদায়ের নিয়ম কি?

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মূলত খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তাই খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করাই সর্বোত্তম। আবু সা’ঈদ আলখুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,তিনি বলেছেন: ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময়ে সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে এক ‘স্বা’ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য,

( যেমন-গম, যব,  খেজুর,পনির , কিসমিস ) প্রদান করতাম’।- [বুখরী,(১৪৩৭)]
এক ‘স্বা’এর পরিমান কত এ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে কেউ বলেছেন  এক ‘স্বা’= ২ কেজি ৪০ গ্রাম, আবার কেউ বলেছেন  এক ‘স্বা’= ২ কেজি ৪০০ গ্রাম, আবারকেউ বলেছেন  এক ‘স্বা’= ২ কেজি ৬০০ গ্রাম,আবার কেউ বলেছেন  এক ‘স্বা’= ৩ কেজি , তবে হানাফি মাযহাবে সর্বোচ্চ  এক ‘স্বা’= ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম,উল্লেখ করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ পরিমানটাকে ধরে নিয়ে ফিতরা আদায় করতে পারি। সেক্ষেত্রে  ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম পরিমান খাদ্যদ্রব্য ফিতরা হিসেবে প্রদান করতে পারি।

টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে কি-না

টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের মতে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হানাফি মাযহাবের মতে  টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করলেও ফিতরা আদায় হবে । 

কেননা ফিতরা গরীব-দুস্থ পরিবারের হক। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত কাজেই আমরা ফিতরা হিসেবে  এক ‘স্বা’ পরিমান চাল প্রদান করলে আমাদের ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সবাই যদি চাল দেয় তাহলে একটি গরীব-দুস্থ পরিবারের চাল ছাড়াও আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন থাকতে পারে ( যেমন- তেল,চিনি,সেমাই, আটা,ডাল ইত্যাদি) 

যেগুলোর অভাবে তাদের ঈদের আনন্দ নষ্ট হতে পারে। তাদের এ প্রয়োজন মেটাতে তারা হয়ত ব্যবসায়িদের কাছে অর্ধ মূল্যে তাদের প্রাপত খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে তাদের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে চাইবে। তাহলে ঘুরেফিরে একই কথা হলো তারা খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে টাকাই নিচ্ছে তাদের প্রয়োজন মেটাতে । তবে এতে ব্যবসায়িরা লাভবান হলেও গরীব-দুস্থ পরিবারের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। তাই টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে যদি গরীব-দুস্থ পরিবারের বেশি উপকৃত হয় তাহলে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করলেও ফিতরা আদায় হবে । 

এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি কত?

এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ফিতরার হার মাথাপিছু বা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ ২০২৪ ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

ফিতরা কাদের দেওয়া যাবে

ফকির,মিসকিন,গরীব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থ ব্যক্তিকে ফিতরা প্রদান করা যাবে।

  • ১.ফকির অর্থাৎ যারা জীবন ধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভরশীল।
  • ২. মিসকিন  অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির কাছে থাকা সম্পদ দিয়ে তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট না হলে তাকে মিসকিন বলা যায়।
  • ৩. ঋণের ভারে জর্জরিত, যার ঋণ পরিশোধের কোনো অবস্থান নেই- এমন ব্যক্তিকে ফিতরার ফান্ড থেকে সাহায্য করা যাবে।
  • ৪. বেতনভুক্ত কাজের ব্যক্তির পক্ষে ফিতরা প্রদান করা মালিকের উপর আবশ্যক নয়। তবে মালিক ইচ্ছে করলে কাজের লোককে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন। তবে তিনি বেতন বা পারিশ্রমিক এর মূল্য হিসেবে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন না ।
  • ৫. যারা খাদ্যদ্রব্য বা অর্থের অভাবে ঈদের আনন্দ থেকে বাঞ্চিত তাদের ফিতরা প্রদান করা যাবে।

এছাড়াও আপন ভাইবোন, ভাগনে-ভাগনি, ভাতিজা-ভাতিজি, চাচা-জেঠা-ফুফু, মামা-খালা; চাচাতো-জেঠাতো ভাইবোন, ফুফাতো ভাইবোন, মামাতো-খালাতো ভাইবোন এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হন, তাহলে তাদেরও সদকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে; বরং এদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

আর পড়ুন:এইচএসসি ইংরেজী ১ম পত্র সংক্ষিপ্ত সাজেশন-২০২৪

হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- নিকটাত্মীয়দের দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব হয়—প্রথমত, দানের সওয়াব; দ্বিতীয়ত, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সওয়াব। জাকাত, ফিতরা, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত-সদকা নগদ টাকায় বা খাদ্যদ্রব্য এবং অন্য কোনো বস্তু, যেমন পোশাক-আশাক, ঈদের বাজার ইত্যাদি কিনেও দেওয়া যায়।

ফিতরা কাদের দেওয়া যাবে না

যাদের সদকাতুল ফিতর, প্রদান করা যায় না, তারা হলেন পিতা-মাতা ও ঊর্ধ্বতন পুরুষ—যেমন দাদা-দাদি ও নানা-নানি কারণ এদের সেবা করা ও সকল চাহিদা পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব ফিতরার টাকা থেকে তাদের হক আদায় করা যাবে না। ছেলেমেয়ে ও অধস্তন পুরুষ, যেমন নাতি-নাতনি এদের সাবলম্বী করার দায়িত্ব আমাদের ফিতরার টাকা থেকে তাদের হক বা চাহিদা

পূরণ করা যাবে না। স্ত্রী—কারণ তার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান স্বামীর দায়িত্বে। সায়্যদ অর্থাৎ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রকৃত বংশধর। ধনী লোক, যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং অমুসলিম ব্যক্তি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url