এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র সোনার তরী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

সোনার তরী

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র সমাধান রাজশাহী বোর্ড 2023(MCQ)

কবি-পরিচিতি



সূচীপত্র

বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ বাবা-মা’র চতুর্দশ সন্তান ও অষ্টম পুত্র। তাঁর পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদা দেবী। বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমী প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হলেও বিদ্যালয়ের পড়ালেখার প্রতি তিনি মনোযোগী ছিলেন না। 

ঠাকুর বাড়ির অনুক‚ল পরিবেশে শৈশবেই রবীন্দ্রনাথের কবি-প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। ১৮৭৬ সালে পনের বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ বনফুল। অতঃপর কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, ভ্রমণসাহিত্য, রম্যরচনা, সঙ্গীত ইত্যাদি শাখায় রবীন্দ্রনাথ রেখে গেছেন তাঁর অসামান্য শিল্প-প্রতিভার স্বাক্ষর।

বাংলা কবিতাকে তিনিই প্রথম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রসারিত করেন। কবিতার বিষয়বস্তু এবং প্রকাশরীতিতে রবীন্দ্রনাথের নিত্য-নতুন পরীক্ষা বাংলা কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছে। কেবল সাহিত্যিক হিসেবেই নয়, একজন কর্মযোগী মানুষ হিসেবেও রবীন্দ্রনাথ তাঁর অনন্য কীর্তির পরিচয় রেখে গেছেন। ১৯০১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়’। এটিই পরবর্তীকালে ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’-এ রূপলাভ করে। 

গীতাঞ্জলি ও অন্য কিছু কবিতার সমন্বয়ে স্ব-অনূদিত ঝড়হম ঙভভবৎরহমং গ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশে প্রথম কৃষিব্যাংক স্থাপন করেন। বাংলাদেশের শিলাইদহ, পতিসর এবং শাহজাদপুরে জমিদারি তত্ত্বাবধান সূত্রে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় অতিবাহিত করেন। গীতিকার ও চিত্রশিল্পী হিসেবেও রবীন্দ্রনাথের অবদান অনন্যসাধারণ। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ) কলকাতায় তিনি পরলোকগমন করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা 

কাব্যগ্রন্থ : মানসী (১৮৯০), সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), ক্ষণিকা (১৯০০), গীতাঞ্জলি (১৯১১) বলাকা (১৯১৬), পুনশ্চ (১৯৩২), জন্মদিনে (১৯৪১), শেষলেখা (১৯৪১);

উপন্যাস : চোখের বালি (১৯০৩), গোরা (১৯১০), ঘরে-বাইরে (১৯১৬), শেষের কবিতা (১৯২৯);

ছোটগল্প : গল্পগুচ্ছ (১ম ও ২য় খন্ড-১৯২৬, ৩য় খন্ড-১৯২৭), তিনসঙ্গী (১৯৪১), গল্পসল্প (১৯৪১);

নাটক : বিসর্জন (১৮৯০), চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২), অচলায়তন (১৯১২), ডাকঘর (১৯১২), রক্তকরবী (১৯২৬);

প্রবন্ধ : আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭), কালান্তর (১৯৩৭), সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩);

আত্মজীবনী : জীবন স্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০)। 

ভূমিকা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতাটি ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের নামকবিতা। এই কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এর অধিকাংশ পঙ্ক্তি ৮+৫ মাত্রা পূর্ণপর্বে বিন্যস্ত। সুদীর্ঘ কাল ধরে এই কবিতাটি অনেক আলোচনা ও ব্যাখ্যায় নতুন নতুন তাৎপর্যে অভিষিক্ত। এই কবিতাটিতে কবির জীবনদর্শন অপূর্ব মহিমায় প্রকাশিত হয়েছে। মহাকালের স্রোত জীবন-যৌবন ভেসে যায়, কিন্তু মানুষের সৃষ্ট কর্ম বেঁচে থাকে অনন্তকাল। 

উদ্দেশ্য 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতাটি পড়ার পর তুমি-

  • রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ কবিতার মূলভাব লিখতে পারবে।
  • এ কবিতায় কবির যে জীবনদর্শন প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • সোনার ধানের সম্ভার নিয়ে অপেক্ষারত নিঃসঙ্গ ও আশাহত কৃষকের মনোবেদনার কারণবর্ণনা করতে পারবে।

মূলপাঠ  

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।

কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।

 রাশি রাশি ভারা ভারা

 ধান কাটা হল সারা,

 ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা।

কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,

চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা \

 পরপারে দেখি আঁকা

 তরুছায়ামসীমাখা

 গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাতবেলা-

এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,

দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

 ভরা পালে চলে যায়,

 কোনো দিকে নাহি চায়,

 ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙে দু ধারে-

দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে,

বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।

 যেয়ো যেথা যেতে চাও,

 যারে খুশি তারে দাও,

 শুধু তুমি নিয়ে যাও  ক্ষণিক হেসে

আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।

যত চাও তত লও তরণী-’পরে।

আর আছে?-আর নাই, দিয়েছি ভরে

 এতকাল নদীকুলে

 যাহা লয়ে ছিনু ভুলে

 সকলই দিলাম তুলে

 থরে বিথরে-

এখন আমারে লহো করুণা করে।

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী

আমারি সোনার ধারে গিয়েছে ভরি।

 শ্রাবণগগন ঘিরে

 ঘন মেঘে ঘুরে ফিরে,

 শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি-

যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী। 


 শব্দের অর্থ 

আমি একলা--কৃষক কিংবা শিল্পস্রষ্টা কবির নিঃসঙ্গ অবস্থা। 

আমার সোনার ধান-- কৃষকের শ্রেষ্ঠ ফসল। ব্যঞ্জনার্থে শিল্পস্রষ্টা কবির সৃষ্টিসম্ভার।। 

আর আছে আর নাই, দিয়েছি ভরে-- ছোট জমিতে উৎপন্ন ফসলের সবটাই অর্থাৎ কবির সমগ্র সৃষ্টি তুলে দেওয়া হয়েছে মহাকালের স্রোতে ভেসে আসা সোনার তরী-রূপী চিরায়ত শিল্পলোকে। 

এখন আমারে লহো করুণা করে--ফসল বা সৃষ্টিসম্ভার তুলে দেওয়া হয়েছে নৌকায়। এখন ফসল বা সৃষ্টির স্রষ্টা স্থান পেতে চায় ওই মহাকালের নৌকায়।

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে? -- নির্বিকার মাঝির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কৃষক বা কবির চেষ্টা। ‘বিদেশ’ এখানে চিরায়ত শিল্পলোকের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ।

কোনো দিকে নাহি চায়-- মহাকালের প্রতীক এই মাঝি নিরাসক্ত বলেই তার সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিপাত নেই। 

ক্ষুরধারা-- ক্ষুরের মতো ধারালো যে প্রবাহ বা স্রোত। 

খরপরশা-- ধারালো বর্শা।

গরজে-- গর্জন করে। 

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে-- ক্ষুরের মতো ধারালো জলস্রোত গান গাইতে গাইতে যে মাঝি পারের দিকে এগিয়ে আসছে, রবীন্দ্র-ভাবনায় সে নির্মোহ মহাকালের প্রতীক। 

চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা--ধানক্ষেতটি ছোট দ্বীপের আঙ্গিকে চিত্রিত। তার পাশে ঘূর্ণায়মান স্রোতের উদ্দামতা। নদীর ‘বাঁকা’ জলস্রোত বেষ্টিত ছোট ক্ষেতটুকুর আশু বিলীয়মান হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে এ অংশে। ‘বাঁকা জল’ এখানে অনন্ত কালগ্রাসের প্রতীক। ঠাঁই নাই,

ঠাঁই নাই ছোট সে তরী-- সোনার তরীতে মহৎ সৃষ্টিরই স্থান সংকুলান হয় কেবল। ব্যক্তিসত্তা ও তার শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার। 

তরুছায়ামসীমাখা-- ওপারের মেঘে ঢাকা গ্রামটি যেন গাছের ছায়ার কালো রঙে মাখানো। 

থরে বিথরে-- স্তরে স্তরে, সুবিন্যস্ত করে। 

দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে-- এই আগস্তুক মাঝি কৃষক বা শিল্পস্রোষ্টা কবির হয়ত চেনা। কেননা, চেনা মনে হলেও কৃষক বা শিল্পস্রোষ্টা কবির সংশয় থেকেই যায়। 

বারেক ভিড়াও তরী ক‚লেতে এস-- চিরায়ত শিল্পলোকে ঠাঁই পাওয়ার জন্যই কৃষকরূপী কবির ব্যাকুল অনুনয় এখানে প্রকাশিত।

ভারা ভারা-- ‘ভারা’ অর্থ ধান রাখার পাত্র, এরকম পাত্রের সমষ্টি বোঝাতে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। 

ভরস--আশা,নির্ভরশীলতা। 

শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি-- নিঃসঙ্গ অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে আসন্ন ও অনিবার্য মৃত্যুর প্রতীক্ষার  ইঙ্গিত। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : “মহাকাল আমার সর্বস্ব লইয়া যায় বটে, কিন্তু আমাকে ফেলিয়া যায় বিস্মৃতি ও অবহেলার মধ্যে। ...সোনার তরীর নেয়ে আমার সোনার ধান লইয়া যায় খেয়াপারে, কিন্তু আমাকে লয় না। 


সারসংক্ষেপ 

বাংলা কবিতার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ একটি চিরায়ত আবেদনবাহী কবিতা। এ কবিতায় চারপাশের প্রবল স্রোতের মধ্যে জেগে থাকা দ্বীপের মতো একটি ধানখেতে নিঃসঙ্গ এক কৃষক তার উৎপন্ন ধানের সম্ভার নিয়ে অপেক্ষমাণ। পাশের খর স্রোতা নদী আকাশের ঘন মেঘ আর ভারী বর্ষণে হিংস্র হয়ে উঠেছে। চারদিকের ‘বাঁকাজল’ অনন্ত কাল স্রোতের প্রতীক হিসেবে কৃষকের মনে ঘনঘোর সৃষ্টি করেছে।

খর স্রোতো নদীতে তখন ভরাপাল সোনার নৌকা নিয়ে বেয়ে আসা এক মাঝিকে দেখা যায়। চিন্তিত কৃষক মাঝিকে সকাতরে অনুরোধ করে নৌকা কূলে ভিড়িয়ে তার উৎপাদিত সোনার ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য। মাঝি সোনার ধান মহাকালের নৌকায় তুলে নিয়ে চলে গেলেও নৌকা ছোট বলে তাতে স্থান হয় না কৃষকের। আশাহত কৃষক শূন্য নদীর তীরে নিঃসঙ্গ অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে আসন্ন ও অনিবার্যমৃত্যুর প্রতীক্ষায় পড়ে রইলেন।  কবির উপলব্ধি হয়-- মহাকালের স্রোতে মানুষের জীবন-যৌবন নিষ্ঠুরভাবে ভেসে গেলেও এই পৃথিবীতে মানুষেরই সৃষ্ট সোনার ফসল, তথা তাঁর দর্শন, কর্মযজ্ঞ বেঁচে থাকে চিরকাল। 


বহুনির্বাচনি প্রশ্ন 

১. ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?

ক. স্বরবৃত্ত            খ. মাত্রাবৃত্ত

গ. অক্ষরবৃত্ত       ঘ. গদ্যছন্দ

২. ‘তরুছায়ামসী-মাখা’ কেন বলা হয়েছে?

ক. ছায়াসুনিবিড় পরিবেশকে উপস্থাপন করার জন্য     খ. মেঘলা আবহাওয়াকে নির্দেশ করার জন্য

গ. বৃক্ষ ছায়ার কালচে রং মাখাকে বোঝানোর জন্যে     ঘ. পল্লবায়িত বৃক্ষকে তুলে ধরার জন্য

নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

মাদার তেরেসা আজীবন মানবতার জয়গান গেয়েছেন। মানবসেবার জন্য গড়ে তুলেছেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তিনি তাঁর কর্ম ও সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীতে অমর হয়ে রয়েছেন।

৩. উদ্দীপকের মূলভাব কোন পংক্তির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?

ক. চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা         খ. একখানি ছোটো খেত আমি একেলা

গ. আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি         ঘ. দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে

৪. উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতায় যে ভাব প্রকাশিত হয়েছে-

i. মানুষের জীবনবোধ যন্ত্রণাময়

ii. ব্যক্তিসত্তা নয় টিকে থাকে মানুষের কীর্তি

iii. কালপ্রবাহকে মানুষ এড়াতে পারে

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i        খ. ii

গ. iii       ঘ. i ও ii  

৫. ‘থরে বিথরে’ শব্দগুচ্ছ কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

ক. রাশি রাশি       খ. বোঝা বোঝা

গ. স্তরে স্তরে       ঘ. সারি সারি

৬. ‘সোনার তরী’ কবিতায় কৃষক মাঝিকে কী অনুরোধ করেছিল?

ক. কৃষকের সঙ্গে গল্প করতে               খ. কৃষকের ভয় দূর করে দিতে

গ. সোনার ধান নৌকায় তুলে দিতে      ঘ. সোনার পাট নৌকায় তুলে দিতে

নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

মেঘের পরে মেঘ জমেছে আঁধার করে আসে

আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে?

৭. উদ্দীপকের সঙ্গে কোন চরণের মিল রয়েছে?

ক. গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাত বেলা      খ. যত চাও তত লও তরণী-’পরে

গ. শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি               ঘ. যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী

৮. উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে-

i. বর্ষার প্রকৃতি

ii. নিঃস্ব কৃষক

iii. সৃষ্টিশীল কর্ম

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i      খ. ii

গ. iii    গ. ii ও iii


 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তরমালা 

১. খ   ২. গ   ৩ .গ   ৪. খ   ৫. গ   ৬. গ   ৭. ক   ৮. ক 


সৃজনশীল প্রশ্ন 

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে চির তারুণ্যের প্রতীক। চিরায়ত বাঙালির সংস্কৃতি তাঁর কাব্যকর্মে স্ফূর্তি লাভ করেছে। বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতাবোধের কথা লিখে তিনি বাঙালি চিত্তে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন কাল থেকে কালান্তরে। তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে ১৯৭৬ সালে। অথচ তাঁর সৃষ্টিকর্ম এখনো বাঙালি জাতির চেতনার ফল্গুধারা। তাঁর কবিতা ও গান এখনও বাংলার মানুষের চেতনার অফুরান উৎস। তিনি তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মে আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন।

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতায় কোন ঋতুর কথা বলা হয়েছে?

খ. ‘যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী’ -কথাটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছে?

গ. ‘সোনার তরী’ কবিতার জীবনদর্শন উদ্দীপকে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? -আলোচনা কর।

ঘ. “মহৎ কর্মই পৃথিবীতে মানুষকে অমরত্ব দান করে।” -উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর। 


 সৃজনশীল প্রশ উত্তর 


. সোনার তরী’ কবিতায় বর্ষা ঋতুর কথা বলা হয়েছে।

খ. মহাকাল মানুষকে নয়, বরং তার সৃষ্টিশীলতাকে ধারণ করে। আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে এ সত্যটিকেই তুলে ধরা হয়েছে। ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উল্লিখিত চরণে রূপকের আড়ালে একটি গভীর জীবন দর্শনকে প্রকাশ করেছেন। কবিতায় দেখা যায়, সোনার তরীর মাঝি কৃষকের সব ফসল তরীতে তুলে নেয় কিন্ত তরীতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ধানক্ষেতে একাকী দাঁড়িয়ে থাকে কৃষক।

 এখানে সোনার তরী মহাকালের প্রতীক। এ তরীতে শুধু মানুষের সৃষ্টিকর্মের ঠাঁই হয়, কোনো ব্যক্তিসত্তা নয়। তাই ব্যক্তি মানুষ তথা কবিতায় বর্ণিত কৃষককে ধানক্ষেতে একাকী অপেক্ষমান রেখে তার সোনার ধান অর্থাৎ সৃষ্টিকর্মকে সোনার তরী বয়ে নিয়ে যায়।

গ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতায় অন্তর্লীন হয়ে রয়েছে একটি গভীর জীবন দর্শন। এটি উদ্দীপকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

‘সোনার তরী’ কবিতাটিতে রূপকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে মানব জীবনের এক শ্বাশত দর্শন। কবিতার রূপকল্পে রয়েছে বর্ষার  স্রোত পরিবেষ্টিত ধানক্ষেতে রাশি রাশি সোনার ধান নিয়ে অপেক্ষা করছে একজন কৃষক। অপেক্ষার একপর্যায়ে ভরা পালে তরী বেয়ে চলে যেতে থাকা এক মাঝিকে ধানগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে সে। কিন্তু মাঝি কেবল কৃষকের ধানগুলো তরীতে ভরে নেয়। সোনার তরীতে স্থানের অভাবে কৃষকের আর ওঠা হয় না।

কবিতায় সোনার তরী হচ্ছে প্রবহমান সময়ের প্রতীক। মানুষ একদিন এই পৃথিবী থেকে চলে যাবে। কিন্তু এখানে টিকে থাকবে কেবল তার সোনার ধান তথা কর্মফল। ‘সোনার তরী’ কবিতার এ ভাবটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত কাজী নজরুল ইসলাম ব্যাক্তিমানুষ হিসাবে বেঁচে নেই কিন্তু টিকে আছে তাঁর সৃষ্টিকর্ম। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতাবোধের কথা লিখে তিনি আজও প্রেরণা যোগাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। 

তাঁর অবিনাশী গান, ধ্রুপদী কবিতা এখনও বাংলাভাষী পাঠকের চিরপ্রেরণার উৎস। যেকোন আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর সৃষ্টিকর্ম আমাদের চেতনার প্রদীপ্ত শিখা। তাই বলা যায়, কবিতাটির অন্তর্নিহিত জীবন দর্শন উদ্দীপকে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতা উভয়টিতে ফুটে উঠেছে যে, মহৎ কীর্তিই মানুষকে পৃথিবীতে অমরত্ব প্রদান করে। পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কর্মের মাধ্যমে। কেননা, মহাকালের চিরন্তন  স্রোত  মানুষ তার অনিবার্যতাকে এড়াতে পারে না। অতৃপ্তির বেদনা নিয়ে তাকে অপেক্ষা করতে হয় কাল স্রোত  বিলীন হওয়ার জন্য। মহাকালরূপী সোনার তরী শুধু মানুষের সৃষ্টিকেই ধারণ করে, ব্যক্তি-মানুষকে নয়।

কবিতায় কৃষক তাঁর জমি থেকে সোনার ধান কেটে অপেক্ষায় আছে কখন তরী এসে সোনার ফসলসহ তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তরীতে সমস্ত ফসল তোলা হলে সেখানে কৃষকের জন্য আর এতটুকু জায়গাও অবশিষ্ট থাকে না। অর্থাৎ মহাকালের  স্রোতে  ব্যক্তি-মানুষ বা কবিতার কৃষক হারিয়ে যায় ঠিকই কিন্তু বেঁচে থাকে তার সোনার ধান বা কর্মফসল। কবিতায় বর্ণিত এ কর্মফসল উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্মের সমতুল্য।  কালের  স্রোত  ব্যক্তি নজরুল হারিয়ে গেলেও তাঁর কীর্তির মধ্য দিয়ে তিনি অমরত্ব পেয়েছেন ।

উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাহিত্যে বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতাবোধের কথা বলেছেন। তাঁর সৃষ্টিকর্ম সমাজ পরিবর্তন ও জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে শ্রেণিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছে। তাঁর কবিতা ও গান বর্তমানেও বাঙালির প্রতিদিনকার চেতনার অফুরন্ত উৎস। তিনি তাঁর মহৎ সৃষ্টিকর্মের জন্যই এখনও বেঁচে আছেন বাঙালির হৃদয়ে। ‘সোনার তরী’ কবিতায়ও প্রকাশিত হয়েছে একই জীবন দর্শন। তাই উদ্দীপক এবং ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোকে বলা যায়, মহৎ কর্মই মানুষকে পৃথিবীতে অমরত্ব দান করে। 


নিজে কর 

নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।

ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।

বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর

আউশের খেত জলে ভরভর,

কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে।

ক. ‘গীতাঞ্জলি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন জাতীয় রচনা?

খ. ‘দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।’ উক্তিটির তাৎপর্য লিখ।

গ. ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটির সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রযেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতায় বর্ষার অনিন্দ্য সুন্দর রূপটি উদ্ভাসিত হয়েছে।” বিচার কর। 

আরো পড়ুন: এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র সোনার তরী

এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: বাংলা ১ম পত্র অধ্যায় ৮:সোনার তরী সাজেশন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url