নিঃসন্তান দম্পতির নেক সন্তান লাভের পরীক্ষিত আমলসমূহ ও ইসলামিক টিপস

 

নিঃসন্তান দম্পতির নেক সন্তান লাভের পরীক্ষিত আমলসমূহ ও ইসলামিক টিপস:


Islamic tips


 বিবাহ প্রতিটি নর-নারীর ওপর ফরজ । আর সন্তান হলো স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার পবিত্র ফসল ।বিয়ের পর অনেক দম্পতির জীবনে বেশ কয়েক বছর চলে যায়,তারা সন্তান নিতে ইচ্ছুক কিন্তু কোনো সন্তান জন্ম লাভ করে না ।বিভিন্ন রকম চিকিৎসা করেও তারা যখন কোনো ফল পায় না তখন হতাশ হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন রকম অবৈধ ও শিরকি পথ বেছে নেয় ।নানা দুশ্চিন্তায় তারা নানা ধরনের মাধ্যম গ্রহণ করতে চান ।অথচ আল্লাহর কাছে সন্তান চাওয়ায় সর্বোত্তম ।

আরো পড়ুন: আমার পরিচয়

আমাদের মনে রাখতে হবে যে ,সন্তান-সন্ততি দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার।আল্লাহ যাকে সন্তান দান করেন কোন অসুস্থতা ও দুর্ব লতা কিংবা কোনো সমস্যাই তার জন্য বাঁধা হতে পারে না ।আর আল্লাহ তাআলা যাকে সন্তান দান করেন না ,অতি তুচ্ছ কারণেই সে সন্তান লাভে ব্যর্থ হয় ।

সূচিপত্র:

হজরত জাকারিয়া (আ:) এর অনুভূতি ও দোয়া

আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত মরিয়মের প্রতি অসাধারণ সব নেয়ামত দেখে বৃদ্ধ বয়সে পয়গাম্বর জাকারিয়া আলাইহিস সালামের সন্তানের আকাঙ্ক্ষা জন্মে। নিঃসন্তান হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর কাছে পুত-পবিত্র নেক সন্তান কামনা করেছেন।

উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আল্লাহ তাআলা সে দোয়া ও ঘটনা কুরআনুল কারিমে দৃষ্টান্ত ও উত্তম উপায় স্বরূপ তুলে  ধরেছেন। যে দোয়ায় বৃদ্ধ বয়সে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম সন্তান লাভ করেছিলেন ।

যে আল্লাহ অসময়ে অর্থাৎ মৌসুমের বাইরে ফল-ফলাদি দান করতে পারেন, সেই আল্লাহ বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান দান করতে সক্ষম। তাই তো তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে মারইয়ামের প্রতি আল্লাহর অসাধারণ নিদর্শন দেখে নিজের জন্য নেক সন্তানের প্রার্থনা করেছিলেন এভাবে-

رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء

উচ্চারণ : রাব্বি হাবলি মিল্লাদুংকা জুররিয়্যাতান ত্বাইয়্যেবাতান ইন্নাকা সামিউদ দোআ।’

‘হে আমার প্রভু! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র  সন্তান দান করুন । নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী, কবুলকারী।’ (সূরা আলে ইমরান,আয়াতঃ৩৮)

 ইবরাহিম (আ:) এর অনুভূতি ও দোয়া 

সুরা সাফফাতে এসেছে, বৃদ্ধ বয়সে ইবরাহিম আ. আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করেছিলেন সৎ পুত্র সন্তানের জন্য। আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করলেন। তাঁকে নেক পুত্র সন্তান দান করলেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা শিক্ষা দিয়েছেন, যাতে বান্দা এ দোয়ার মাধ্যমে তাঁর নিকট সন্তান কামনা করতে পারে।
 দোয়াটি এই-                                      رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
 
 উচ্চারণ: রাব্বি হাবলি মিনাস সলিহীন  
 হে আমার প্রভু!আমাকে সৎ পুত্র দান করুন।’ (সুরা সাফফাত ১০০)                                                                                                                  কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটিও করতে পারেন; ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সন্তান দিয়ে সুখী করবেন-
 
 رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَام’ 
 
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকেবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন।’ (সূরা ফুরকান ৭৪)

হাসান বসরি (রহ:) এর অনুভূতি ও আমল

 হাসান বসরি রহ. থেকে বর্ণিত, তাঁকে এক ব্যক্তি বলল, আমি সম্পদশালী, কিন্তু নিঃসন্তান, আমাকে এমন আমল বলে দিন,যাতে আমার সন্তান হয়। তখন তিনি লোকটিকে বললেন, عليك بالاستغفار ‘তুমি ইস্তেগফারকে আবশ্যক করে নাও।’ ফলে লোকটি নিয়মিত ইস্তেফারের আমল করতে লাগল। এমনকি দৈনিক ৭০০ বার সে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ত। এ আমলের বরকতে আল্লাহ তাকে একে একে দশ সন্তান দান করেছিলেন। তারপর লোকটি একদিন হাসান বসরি রহ.কে এই আমলের রহস্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন, তুমি কি হুদ আ.-এর ঘটনায় আল্লাহর বাণী দেখনি? আল্লাহ অধিক ইস্তেফারের ফলাফল বলতে গিয়ে বলেছেন, وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إلى قُوَّتِكُمْ ‘তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’ (সূরা হুদ ৫২) এবং নূহ আ.-এর ঘটনায় আল্লাহর বাণী দেখনি? সেখানে তিনি বলেছেন, وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ ‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন।’ (সূরা নূহ ১২)

এছাড়াও কোরআন ও হাদিসের যে আয়াত গুলো পড়তে পারেন-

 সূরা আম্বিয়ার ৮৯ নং আয়াতের এ অংশ বেশি করে পড়ুন; ইনশা-আল্লাহ সন্তান হবে-
 
  رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
 ‘হে আমার পালনকর্তা আমাকে সন্তানহীন ছেড়ে দিবেন না। আর আপনিই তো সর্বোত্তম ওয়ারিস।’

প্রিয় দীনি বোন, সুতরাং আপনিও বেশি করে ইস্তেগফার করুন; ইনশা-আল্লাহ আপনার সন্তান না হওয়ার পেরেশানি থাকবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
 
مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب 
 
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবূদাউদ ১৫২০)

সন্তান লাভের আমলসমূহ:

দীর্ঘদিনের সন্তান না থাকার যে কষ্ট তা দূর করতে একটি দম্পতি কি না করতে পারেন ।এই কষ্ট লাঘবের জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ।আপনারা খুব সহজে ইসলামিক কিছু নিয়মকানুন মেনে একটি  নেক ও ফুটফুটে সুন্দর সন্তান লাভ করতে পারেন । 
ইসলামিক নিয়মগুলো হলো-           
  • পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করা । 
  • বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা । প্রতি ওয়াক্ত নামাজে  তাওবা ও ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহ  তাআলার নিকট প্রার্থনা করা ।যে ‘ হে  আমার রব! আপনি আমার জানা অজানা পাপ ক্ষমা করুন এবং আমার প্রার্থনা কবুল করুন ।
  •  সহবাসের সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ুন-                                                                                                        “বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা ,ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা ”।                          অর্থঃ হে আল্লাহ !আপনার নামে শুরু করছি ,আপনি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখুন ।আমাদের  মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন, তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখুন”। 
  • আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহের যিকির করা ।বিশেষ করে ‘ আল- মুবদিয় ’ (اَلْمُبْدِئُ) ও ‘আল-আউয়ালু’ (اَلْاَوَّلُ) পাঠ করা

⋙ যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীর গর্ভ বিনষ্টের আশংকা করে অথবা গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠের স্বাভাবিক দিন অতিবাহিত হয় তবে সে যেন আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْمُبْدِئُ) 'আল-মুবদিয়ু' (অর্থঃ প্রথম সৃষ্টিকারী, অগ্রণী, প্রথম প্রবর্তক) ৯০ বার পড়ে তার স্ত্রীর পেটের চতুর্দিকে শাহাদাত আঙ্গুলি ঘুরায়।  '

 আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে (اَلْاَوَّلُ) 'আল-আউয়ালু' একটি। এ গুণবাচক নামের এ ছোট্ট আমলে সন্তান লাভের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। >> যে ব্যক্তির ছেলে-মেয়ে না থাকে ওই ব্যক্তি ৪০দিন পর্যন্ত একাধারে ৪০ বার আল্লাহ তাআলার এ পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْاَوَّلُ) 'আল-আউয়ালু' পাঠ করলে তার সন্তান লাভের মনোবাসনা পূর্ণ হবে।

 সন্তান লাভের ইসলামিক টিপস:

  •  পর্দাসহীত চলাফেরা করা ।
  •  ধৈর্য্য ধারণ করা ।
  •  হালাল উপার্জন করুন এবং হালাল আহার গ্রহণ করুন ।
  • পাপ কর্ম থেকে বিরত থাকুন।

ইনশাআল্লা আল্লাহর রহমতে আপনি সন্তান লাভ করবেন এবং আপনার সন্তান নেক ও সুন্দর গুণের অধিকরী হবে।

 

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url