এস এস সি বাংলা ১ম পত্র আমার পরিচয় সৈয়দ শামসুল হক

 

 আমার পরিচয়

সৈয়দ শামসুল হক

কবি-পরিচিতি



সূচিপত্র



সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ডা. সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন এবং মা সৈয়দা হালিমা খাতুন। তিনি ১৯৫০ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং এক বছর বিরতি দিয়ে জগন্নাথ

কলেজে ভর্তি হন ও সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়ে কিছুদিন পড়াশুনা করেন কিন্তু তা শেষ করেননি। সেই থেকে তিনি লেখালেখিকে একমাত্র ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

 সাংবাদিকতার সঙ্গে তিনি কিছুদিন যুক্ত ছিলেন। কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, চিত্রনাট্যলেখক এবং আরো বিচিত্র সাহিত্য-শিল্পধারার কীর্তিমান স্রষ্টা তিনি। সব্যসাচী লেখক হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত। 

অবিরাম বিচিত্রতার পথে চলমান এই কবি ও লেখকের সৃষ্টিতে উঠে এসেছে নানা বিষয়। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। সৈয়দ শামসুল হক ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা 

কাব্যগ্রন্থ : একদা এক রাজ্যে, বিরতিহীন উৎসব, বৈশাখে রচিত পঙ্কতিমালা, পরাণের গহীন ভিতর, অগ্নি ও জলের কবিতা, আমি জন্মগ্রহণ করিনি, রাজনৈতিক কবিতা;

উপন্যাস : এক মহিলার ছবি, সীমানা ছাড়িয়ে, খেলারাম খেলে যা, রক্তগোলাপ, নিষিদ্ধ লোবান, নীল দংশন;

নাটক : পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নূরলদীনের সারাজীবন, এখানে এখন, ঈর্ষা।

ভূমিকা

‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি সৈয়দ শামসুল হকের ‘কিশোর কবিতা সমগ্র’ থেকে সম্পাদিত আকারে চয়ন করা হয়েছে। আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতিসত্তা গঠনের পেছনে রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পটভূমি। কবিতাটির মাধ্যমে লেখক বাঙালি জাতির বর্তমান অবস্থার পেছনের বর্ণিল ইতিহাসের কথা তুলে ধরেছেন। ইতিহাসের ধারাবাহিক বিবর্তনে বাঙালি জাতি সেই সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির পরিচয় এবং কৃতি সন্তানদের যেন ভুলে না যায় সেই শ্রদ্ধা বোধ থেকেই তিনি কবিতাটি রচনা করেছেন।

উদ্দেশ্য

এই পাঠটি পড়া শেষে তুমি-

  •  বাঙালি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর বিবরণ দিতে পারবে;
  •  বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক ও ভেদবিচারহীন অস্তিত্বের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে পারবে।

মূলপাঠ

আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি,

আমি বাংলার আলপথ দিয়ে হাজার বছর চলি।

চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।

তেরোশত নদী শুধায় আমাকে, ‘কোথা থেকে তুমি এলে?’

আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে।

আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।

আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে।

আমি তে এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।

এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে।

এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির-বেদি থেকে।

এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে।

এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।

আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারো ভূঁইয়ার থেকে।

আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’, ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।

আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরিয়ত থেকে।

আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নি-বীণার থেকে।

এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্য সেনের থেকে।

এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।

এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে।

এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।

আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে।

আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।

এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে।

শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে?’

তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির বীজমন্ত্রটি শোন নাই -

‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’

একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজও একসাথে থাকবই -

সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবই।


নির্বাচিত শব্দের অর্থ 

অগ্নি-বীণা-- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ।

অবন ঠাকুর--অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১ খ্রি.) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন; তিনি

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী; তবে শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও তিনি অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।

 আলপথ--জমির সীমানার পথ; এখানে হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতির পথ চলার কথা বলা হয়েছে। 

কমলার দীঘি-- মৈমনসিংহ গীতিকার একটি পালা।

কৈবর্ত বিদ্রোহ-- আনুমানিক ১০০-৭৫ খ্রিস্টাব্দে মহীপালের বিরুদ্ধে অনন্ত-সামন্ত-চক্র মিলিত হয়ে যে বিদ্রোহ করেন তা-ই আমাদের ইতিহাসে কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে খ্যাত; এই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোক; তাঁর নাম দিব্য বা দিবোক বাঙালি জাতির বিদ্রোহের ঐতিহ্য বোঝাতে এই বিদ্রোহের উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্ষুদিরাম-- ক্ষুদিরাম বসু (১৮৮৯-১৯০৮ খ্রি.) মেদিনীপুর জেলার মৌবনি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন; শৈশব থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন; অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলবশত দুইজন ইংরেজ মহিলাকে হত্যা করেন; ১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট এই মহান বিপ−বীর ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়।

চরণচিহ্ন-- পদ চিহ্ন, পায়ের ছাপ। 

চর্যাপদ-- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-ঐতিহ্যের প্রথম নিদর্শন; হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে চর্যাপদের পান্ডুলিপি উদ্ধার করেন; ছয়শত শতাব্দী থেকে এগারশ শতকের মধ্যে পদগুলো রচিত হয়েছে; এই পদগুলোর মধ্যে প্রাচীন বাংলার অতি সাধারণ মানুষের প্রাণময় জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে। 

চিত্রকলা--ছবি আঁকার বিদ্যা, পত্রলেখা, নকশা। 

জয়নুল--জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-১৯৭৬ খ্রি.) কিশোরগঞ্জের কেন্দুয়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন; ‘শিল্পাচার্য’ হিসেবে তিনি খ্যাত; দেশজ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পটভূমিতে তাঁর বিপুল শিল্পকর্ম রচিত; দুর্ভিক্ষ তাড়িত জীবন ও জগতের ছবি এঁকে তিনি অসামান্য এক জীবন-তৃষ্ণার পরিচয় দিয়েছেন; বাংলাদেশে শিল্পকলা আন্দোলনের তিনি পথিকৃৎ।

জয়বাংলা--মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জাতীয় স্লোগান হিসেবে অসাধারণ এক প্রেরণা সঞ্চারী শব্দমালা; এই স্লোগান ঐক্য ও সংহতির প্রতীক।

তিতুমীর-- চব্বিশ পরগনা জেলার হায়দরপুর গ্রামে ১৭৮২ সালে মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর জন্মগ্রহণ করেন; তিনি অত্যাচারী ইংরেজী ও হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন; ১৮৩১ সালের ১৯শে নভেম্বর ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে তিনি শহিদ হন। 

দেউল--দেবালয়।

পালযুগ-- ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে গোপালের রাজ্য শাসনের মধ্য দিয়ে বঙ্গে পালযুগের সূচনা হয়; তারপর চারশত বছর পাল বংশের রাজত্ব টিকে ছিল; এ সময় শিল্প-সাহিত্যের অসামান্য বিকাশ সাধিত হয়; চিত্রকলায়ও এই সময়ের সমৃদ্ধি লক্ষযোগ্য; কবি আমাদের শিল্পের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বোঝাতে পালযুগের চিত্রকলার উল্লেখ করেছেন।

পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার-- বর্তমান নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানায় পাহাড়পুর গ্রামে এই প্রাচীন বিহার অবস্থিত; ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন; দ্বিতীয় পাল রাজা শ্রী ধর্মপালদেব (রাজত্বকাল ৭৭৭-৮১০ খ্রি.) এই বিশাল বিহার তৈরি করেছিলেন; একে সোমপুর বিহারও বলা হয়; পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিহারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম; কবি আমাদের পত্মতাত্তিক ঐতিহ্যের পরিচয় দিতে পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারের উল্লেখ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০Ñ১৯৭৫ খ্রি.) গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন; বাঙালি জাতির তিনি অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা; তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভাদীপ্ত নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ অতিক্রম করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতাযুদ্ধে জয়লাভ করে; তিনি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, মুক্তির প্রতীক, সমৃদ্ধির প্রতীক।

বরেন্দ্রভূমে সোনামসজিদ-- বরেন্দ্রভূমে সোনামসজিদ বলতে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত ছোট সোনামসজিদকে বোঝানো হয়েছে; বড় সোনামসজিদ ভারতের গৌড়ে অবস্থিত; হোসেন শাহের (রাজত্বকাল ১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) আমলে এই মসজিদটি নির্মিত হয়; অসাধারণ শিল্পসৌন্দর্যমন্ডিত স্থাপত্যকর্ম হিসেবে সোনামসজিদ অন্যতম; কবি আমাদের মুসলিম ঐতিহ্যের সুমহান নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বেদি--পূজার জন্য প্রস্তুত উচ্চভ‚মি। 

মহুয়ার পালা-- মৈমনসিংহ গীতিকার একটি পালা। 

রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ--১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকারের জন্য এদেশের মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে ঢাকার রাজপথ। আর সেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সাফল্যের পথ ধরেই সূচিত হয় স্বাধীনতা আন্দোলন। 

প্রেরণা--উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রবৃত্তি ইত্যাদির সঞ্চার, প্রবল উচ্ছাস। 

সাম্য-- সমতা। 

গীতাঞ্জলি-- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ। 

সওদাগরের ডিঙার বহর-- মঙ্গলকাব্যে চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্যের কথা আছে। কবি আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ঐতিহ্য বোঝাতে এই লোককাহিনীর আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

সার্বভৌম বারো ভূঁইয়া-- বাংলায় পাঠান র্করানী বংশের রাজত্ব দুর্বল হয়ে পড়লে খুলনা, বরিশাল, সোনারগাঁও, ময়মনসিংহ ও শ্রীহট্টে স্বাধীন জমিদারদের উত্থান ঘটে; ১৫৭৫ সালে মোগল সম্রাট আকবর বাংলা জয় করার পর এই স্বাধীন জমিদারগণ ঈসা খাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোগল শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান; ইতিহাসে এঁরাই বারোভূঁইয়া নামে পরিচিত; এঁরা হলেন ঈশা খাঁ, চাঁদ রায়, কেদার রায়, প্রতাপাদিত্য, লক্ষণ মাণিক্য প্রমুখ।

সূর্য সেন-- মাস্টার দা সূর্য সেন (১৮৯৩-১৯৩৪ খ্রি.) চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন; আজীবন তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন; ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রামকে ইংরেজমুক্ত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন; কিন্তু বেশিদিন তা রক্ষা করতে পারেননি; ১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি তাঁর ফাঁসি হয় ।

হাজী শরীয়ত--হাজী শরীয়তউল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০ খ্রি.) মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার সামাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘকাল মক্কায় অবস্থান করে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য অর্জন করেন; তিনি ধর্মকে আশ্রয় করে সকল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন; তাঁর এই আন্দোলনকে ফরায়েজি আন্দোলন বলে; এরপর তিনি আবদুল ওহাব নামক

এক ধর্মসংস্কারকের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওহাবি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন; তিনি সাধারণ মানুষকে ধর্মের প্রকৃত রূপ ও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন; এছাড়া বিদেশি শাসন-শোষণ, জমিদার, জোতদার ও মহাজনদের অত্যাচার থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন করেন।

সারসংক্ষেপ 

বাঙালি জাতির প্রাথমিক পরিচয় এই যে, তারা এই বাংলায় জন্মেছে, এবং বাংলা ভাষায় কথা বলে। কিন্তু চেতনার দিক থেকে, অস্তিত্বের দিক থেকে, তারা বহু যুগের অর্জনের সঙ্গে যুক্ত। বাঙালি জনগোষ্ঠী বহন করে চলেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-

মুসলমান সংস্কৃতির নানা উপাদান। এর সাথে মিশেছে আউল-বাউল সংস্কৃতি আর ইতিহাসের নানা ঘটনা। অতীতের হাজারো চরণচিহ্ন এসে মিলেছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে। এসব ঐতিহ্যে গড়া এ জনগোষ্ঠী অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিক। বিভেদহীন সুষম সমাজ প্রতিষ্ঠাই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. চর্যাপদের পান্ডুলিপি কে আবিষ্কার করেন?

ক. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী   খ. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

গ. ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়      ঘ. ড. এনামুল হক

২. যে আন্দোলনের সাফল্যের পথ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসে-

ক. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন       খ. ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থান

গ. ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন   ঘ. ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। আদিকাল হতে বর্তমান পর্যন্ত বাংলায় যোগ হয়েছে বিশ্বের নানা জাতির সংস্কৃতি। এতে আমাদের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে, বহুমাত্রিকতা লাভ করেছে।

৩. উদ্দীপকের সাথে নিচের কোন কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে?

ক. আমার সন্তান    খ. প্রাণ

গ. আমার পরিচয়     ঘ. সাঁকোটা দুলছে

৪. এই সাদৃশ্যের কারণ হচ্ছে যে বিষয়টি-

i. বাংলার ঐতিহ্য

ii. বাংলার সংস্কৃতি

iii. বাংলার সম্পদ

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i         খ. ii

গ. iii        ঘ. i ও ii

৫. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি কীসের ছবি আঁকতে চেয়েছেন?

ক. যুদ্ধের      খ. বিদ্রোহের

গ. ধ্বংসের     ঘ. সাম্যের

৬. ‘এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে।’ চরণটিতে প্রকাশিত হয়েছে-

i. বাঙালির স্বাধীনতা স্পৃহা

ii. বাঙালির বিদ্রোহী চেতনা

iii. বাঙালির ঐতিহ্য চেতনা

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i              খ. ii

গ. iii            ঘ. i ও ii

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দাও  :

বাংলা আমার জীবনানন্দ বাংলা প্রাণের সুর।

আমি একবার দেখি, বারবার দেখি

দেখি বাংলার মুখ।

৭. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে-

ক. আত্মপরিচয়ে     খ. সংস্কৃতিতে

গ. রাজনীতিতে       ঘ. অর্থনীতিতে

৮. উদ্দীপক ও ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সাদৃশ্যের মূলে রয়েছে-

ক. একাত্মতাবোধ        খ. সামগ্রিকতা

গ. বিদ্রোহী চেতনা       ঘ. আপোসকামিতা

বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর 

১. ক ২. ক ৩. গ ৪. ঘ ৫. ঘ ৬. ঘ ৭. ক ৮. ক

সৃজনশীল প্রশ্ন :

বাংলা সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান। হেথায় লক্ষ লক্ষ যোগী-মুনি-ঋষি-তপস্বীর পীঠস্থান, সমাধি; সহ¯্র ফকির-দরবেশ অলিগাজির দরগা পরম পবিত্র। হেথায় গ্রামে হয় আজানের সাথে শঙ্খঘণ্টার ধ্বনি। এখানে যে শাসনকর্তা হয়ে এসেছে সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। বাংলার আবহাওয়ায় আছে স্বাধীনতা মন্ত্রের সঞ্জীবনী শক্তি। আমাদের বাংলা নিত্য মহিমাময়ী,নিত্য সুন্দর, নিত্য পবিত্র।

ক. বৌদ্ধ বিহার কোথায় অবস্থিত?

খ. চর্যাপদ কী? -বুঝিয়ে বল।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সাদৃশ্য নির্ণয় কর।

ঘ. উদ্দীপকে ‘আমার পরিচয়’ কবিতার আংশিক চিত্র ফুটে উঠেছে, পূর্ণাঙ্গ ছবি উঠে আসেনি।   

      আলোচনা কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর 

ক. বৌদ্ধবিহার বর্তমান নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত।

খ. ‘চর্যাপদ’ প্রাচীন যুগের বাংলা সাহিত্যের সংকলন। চর্যাপদ এ পর্যন্ত প্রাপ্ত বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যেরও প্রথম নিদর্শন। পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে চর্যাপদের পান্ডলিপি উদ্ধার করেন। চর্যাপদের রচনাকাল খ্রিস্টিয় ছয় শতক থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত। কাহ্ণ পা ও ভুসুকু পা চর্যাপদের প্রধান কবিরূপে পরিচিত। চর্যাপদগুলো একটি ধর্মীয় আবহে রচিত হলেও এতে প্রাচীন বাংলার সাধারণ মানুষের প্রাণময় জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আমার পরিচয়’ কবিতার অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।

বাঙালি জাতিসত্তার একটি সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে। এখানকার অধিবাসীরা অভিন্ন সংস্কৃতি এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত। বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে নানা সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। তবুও এখানকার মানুষ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঐতিহ্যমন্ডিত আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে। বাঙালি জাতির এই অসাম্প্রদায়িক

মনোভাব দীর্ঘদিনের। এখানকার সকল মানুষ আনন্দময় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে।উদ্দীপকে বলা হয়েছে বাংলা সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান। এখানে লক্ষ লক্ষ যোগী-মুনি-ঋষি-তপস্বীর আস্তানা রয়েছে। এ ভূমি সহ ফকির-দরবেশ, অলি-গাজির পরম পবিত্র দরগা ধারণ করে। এখানকার গ্রামে আজানের সাথে বেজে ওঠে শঙ্খঘণ্টার ধ্বনি। 

‘আমার পরিচয়’ কবিতায়ও দেখি এক অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশকে। বাংলায় একইসঙ্গে

গীতাঞ্জলি আর অগ্নি-বীণা আগ্রহের বস্তু। এখানে অবন ঠাকুর, জয়নুল, ক্ষুদিরাম আর তিতুমিরের কোনো প্রভেদ করা হয় না। কবি বলেন, এখানে আমরা একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি এবং আজও একসাথে থাকব। আমরা সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের চেতনা আঁকব। বস্তুত বাঙালি জাতির সংহতি ও ঐক্য বলতে গেলে এক ও অভিন্ন।

উদ্দীপকে বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবিও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়টিতেই উদ্দীপক ও ‘আমার পরিচয়’কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে কেবল বাঙলার অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়টি উঠে এসেছে, অন্যান্য দিক ফুটে উঠেনি। বাংলার ইতিহাস হাজার বছরের। এর রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পটভূমি। এখানে যুগে যুগে নানা আন্দোলন, বিপ্লব, আর মতাদর্শের বিকাশ ঘটেছে। ইতিহাসের বিচিত্র বাঁক ও মোড় ঘুরে আজ আমরা এসে পৌঁছেছি আজকের বাংলায়।  বাঙালির ঐতিহ্যে রয়েছে বিপ্লব-বিদ্রোহ, আতিথেয়তা, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি।

উদ্দীপকে বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের দিকটি ফুটে উঠেছে। এখানকার গ্রামে আজানের সাথে শঙ্খঘণ্টার ধ্বনি বেজে ওঠে। এ ভূমি লক্ষ লক্ষ মুনি-ঋষির পীঠস্থান। এখানে আরো রয়েছে অলি-গাজির পরম পবিত্র দরগা। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে এখানকার মানুষ এক ও অভিন্ন চেতনায় বিশ্বাস করে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায়ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা ফুটে উঠেছে। কবিতাটিতে কবি বলেন, বাঙালি জাতির মূলমন্ত্র হচ্ছে সবার উপরে মানুষ সত্য। 

আর বাংলাদেশে আমরা একসাথে আছি, সবসময় একসাথে থাকব।‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি ছাড়া আরও অনেক বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। কবিতায় রয়েছে বাঙালির জীবন প্রবাহ, উৎসব, নাচ, গান, পালা-পার্বণ, বিপ্লব-বিদ্রোহ, আন্দোলন, সংগ্রামী জীবন। কবি আলোচ্য কবিতায় বাঙালির জীবনের একটি ধারাক্রমকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি বাঙালি-ইতিহাসের একটি ধারাক্রম। উদ্দীপকে এই ধারাক্রমের মাত্র একটি বিষয় উল্লেখিত হয়েছে। উদ্দীপকে শুধু বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার বর্ণনাটিই উঠে এসেছে। এখানে অন্য বিষয়গুলো আলোচিত হয়নি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘আমার পরিচয়’ কবিতার আংশিক ছবি ফুটে উঠেছে, পূর্ণাঙ্গ চিত্র স্থান পায়নি।

নিজে কর 

সৃজনশীল প্রশ্ন :

গোপালই প্রথম যথার্থ বাঙালি যিনি পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা ঘটান। এ সময়ে একটি স্বাধীন বঙ্গরাজ্যের উদ্ভব ঘটে। পাল রাজবংশের শাসনকালে জাতিভেদ প্রথার বিলোপ ঘটে, গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন দেখা যায়, চিত্রশিল্প ও ভাস্কর্য এ অঞ্চলে গড়ে উঠে। সবচেয়ে বড়কথা, এ সময় বৌদ্ধবিনয়, সাম্য এবং মমতার একটি আদর্শ এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ক. ‘আলপথ’ কী?

খ. বাংলার ইতিহাসে পালযুগ কেন বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত?

গ. উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ করে? -ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘‘উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করেছে।” উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url