উপন্যাস:'১৯৭১ 'সাজেশন
সহপাঠ
১৯৭১ (উপন্যাস)
হুমায়ুন আহেমদ
বাংলা ১ম পত্র আপডেট সাজেশন-2026
আমাদের ওয়েবসাইট “অর্ডিনেট আইটি.কম” ও চ্যানেল ”অর্ডিনেট ক্লাসরুম ”আপনাদের স্বাগতম ।
আমরা একটি ভিন্ন প্রজন্মের স্বপ্ন দেখি। আমরা অধিক চিন্তাশীল প্রজন্ম গড়তে চাই, আলাদা মানুষ যাদের আগে চিন্তা করার অভ্যাস থাকবে। আমরা মানুষ কেন? কারণ আমরা চিন্তা করি, এবং সেই চিন্তাকে মুক্তচিন্তা হতে হবে। আর মুখস্থ করে আর যা ই হোক, বিজ্ঞান শিক্ষা হতে পারে না। আর সেই প্রচেষ্টারই অংশ হল আমাদের কনটেন্ট ও ভিডিও লেকচার। এই কনটেন্ট ও ভিডিওগুলির উদ্দেশ্য হল প্রতিটি বিষয় এমনভাবে শেখানোর চেষ্টা করা যাতে আপনি বইয়ের বাইরেও অনেক কিছু ভাবতে পারেন। আর আপনি যখন চিন্তাশীল মানুষ হবেন, তখন আপনি নিজেই বুঝবেন এই দেশকে আলাদা করতে আমাদের কী করতে হবে, কতদূর যেতে হবে।
উপন্যাস থেকে কোনো সৃজনশীল প্রশ্ন হবে না
[বর্ণনামূলক প্রশ্ন থাকবে]
- প্রশ্ন-১।(ক) সফদরউল্লাহর মানসিক পরিবর্তনের প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করো।
- (খ) ‘১৯৭১' উপন্যাসে প্রতিফলিত নীলগঞ্জের জনজীবনের পরিচয় দাও।
১(ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
পাকিস্তানি মিলিটারিদের পশুসুলভ আচরণ সফদরউল্লাহর মানসিক পরিবর্তনের প্রধান কারণ। '১৯৭১' উপন্যাসে নীলগঞ্জ নামক এক গণ্ডগ্রামে মিলিটারি প্রবেশের পর নানা রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকে। ইতঃপূর্বে এই গ্রামের মানুষজন মিলিটারি সম্পর্কে যা জানত, সবই অন্য মানুষের কাছ থেকে শোনা গল্পের মতো । পাকিস্তানি মিলিটারিরা মুসলমান হওয়ায় তাদের সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক কথা গ্রামবাসী বিশ্বাস করত, যেমন: তারা মুসলমানদের কোনো ক্ষতি করে না, কালিমা জিজ্ঞেস করে, মুসলমান মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার তো সম্ভাবনাই নেই ইত্যাদি। জয়নাল মিয়ার সাথে কথা বলে তাই সফদরউল্লাহ আশ্বস্ত হয় যে গ্রামে মিলিটারি এলেও তার পরিবারের নারী সদস্যদের অন্য কোথাও স্থানান্তর করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তার বিশ্বাস ভঙ্গ হতে সময় লাগেনি। মিলিটারি সুবাদারের হাতে তার স্ত্রী ও শ্যালিকা নির্যাতনের শিকার হলে তা তার মনে ব্যাপক আঘাত হানে।ফলে সে মিলিটারিদের প্রতি চরম ঘৃণা বোধ করে এবং দা হাতে নিয়ে নির্যাতনকারী মিলিটারিকে হত্যা করতে বেরিয়ে যায় ।
১(খ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হিসেবে যিনি নিজের অবস্থানকে সুউচ্চে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁর নাম হুমায়ূন আহমেদ । এই গুণী কথাসাহিত্যিক ছিলেন কালির সামান্য আঁচড়েই মানুষ ও জনজীবনের আলেখ্য তুলে ধরতে সিদ্ধহস্ত । '১৯৭১' শীর্ষক উপন্যাসও এর ব্যতিক্রম নয়। এ উপন্যাসে তিনি সুনিপুণ হাতে নীলগঞ্জ গ্রামের জনজীবনের পরিচয় তুলে ধরেছেন। লেখকের বর্ণনা মতে, জঙ্গলা মাঠের পিছনে নীলগঞ্জ গ্রাম । দরিদ্র, শ্রীহীন ত্রিশ-চল্লিশ ঘরের একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ। বিস্তীর্ণ জলাভূমি গ্রামটিকে কাস্তের মতো দুইদিকে ঘিরে আছে। এখানকার লোকজন প্রধানত কৃষিকাজ করে জীবিকানির্বাহ করে। এখানকার জমি যথেষ্ট পরিমাণে উর্বর নয় কিংবা এরা ভালো চাষি নয়। তবে শীতকালে এরা প্রচুর রবিশস্য ফলায়। বর্ষার আগে চাষ করে তরমুজ ও বাঙ্গি। গ্রামের অধিকাংশ ঘরেই খড়ের ছাউনি। সম্প্রতি কয়েকটি টিনের ঘর হয়েছে। অতীতে চন্দ্রকান্ত সেন প্রচুর ধনসম্পদ করলেও তার বর্তমান উত্তরসূরি নীলু সেনের অবস্থা যেন ব্যাঙের আধুলির অধিকারী। বর্তমানে গ্রামে সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী ব্যক্তি হলো জয়নাল মিয়া। টাকাপয়সা বেশ থাকলেও লোকটি মেরুদণ্ডহীন। গ্রামে বিদেশি বা বাইরের লোক আছে দুইজন । একজন নীলগঞ্জ মসজিদের ইমাম সাহের এবং দ্বিতীয়জন হলেন নীলগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আজিজ মাস্টার। ইমাম সাহেব মসজিদেই থাকেন এবং আজিজ মাস্টার থাকেন জয়নাল মিয়ার বাড়িতে। দুইজনের খাবারদাবারের ব্যবস্থা হয় প্রধানত জয়নাল মিয়ার বাড়ি থেকে। ইমাম সাহেবের খাবার অবশ্য গ্রামের আরও কয়েক বাড়ি থেকেও আসে ।নীলগঞ্জের যে দিকটায় জলাভূমি, একদল কৈবর্ত থাকে সেদিকে। মাছ ধরার সিজনে জলমহালে মাছ ধরতে যায় । নীলগঞ্জের কেউ এদের ঘাঁটায় না। এমনকি এরা খুনখারাবি করলেও নীলগঞ্জের মাতব্বররা কিছুই না জানার ভান করে । কৈবর্তপাড়ার চিত্রা বুড়ি সন্তান হারিয়ে বিচারের আশায় এখানে- সেখানে ঘুরলেও কোনো প্রতিকার পায় না। গ্রামের একমাত্র ভিক্ষুক সে। এদের বাইরে একজন পাগলও আছে এ গ্রামে— মতি মিয়ার শ্যালক নিজাম । ছোটাছুটি করা এবং বনের ভিতরে বসে থাকা ছাড়া সে কোনো উপদ্রব করে না ।
সবশেষে বলা যায় যে, নীলগঞ্জের জনজীবন বাংলার আর দশটা সাধারণ গ্রামের জনজীবনের মতোই । সহজ, স্বাভাবিক ও কৃত্রিমতাবর্জিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত এ গ্রামের লোকজন।
- প্রশ্ন-২। ক) ‘মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ালে অনেকেই এরকম করবে।'— এ উক্তিটি কার? উক্তিটি করার কারণ কী ছিল? বুঝিয়ে লেখো ।
- খ) রফিক ও মেজরের সম্পর্কের টানাপড়েন কীভাবে কাহিনির গতিপথকে প্রভাবিত করেছে? তাদের মধ্যকার সংঘাতের কারণ ব্যাখ্যা করো।
২(ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
`মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ালে অনেকেই এরকম করবে'— মেজর সাহেবের কথার উত্তরে রফিক উক্তিটি করেছিলেন ।
মেজর এজাজ নীলগঞ্জ গ্রামে এসে একটা আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করতে তৎপর হয়। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে ক্যাম্প করার পরপরই স্কুল মাস্টার আজিজ মাস্টারকে স্কুলঘরে বন্দি করে রাখে। কথা আদায়ের নামে সে পাশবিক অত্যাচার করে। মেজর এজাজ তার সহযোগী বাঙালি যুবক রফিককে নির্দেশ দেয়, সে যেন আজিজ মাস্টারের পুরুষাঙ্গে ইটের টুকরা ঝুলিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে আনে। আজিজ মাস্টারকে লজ্জাজনক শাস্তি অথবা মৃত্যু— দুইটির মাঝে একটি বেছে নিতে বললে তিনি লজ্জাজনক শাস্তি বেছে নেন। বাঙালি মাস্টার মৃত্যু এড়িয়ে থেকে চাওয়ায় সমগ্র বাঙালি জাতিকেই সে কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে ।
এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষ যেকোনো রকম আচরণই যে করতে পারে এবং তা যে অস্বাভাবিক নয়— এ কথা বোঝাতেই রফিক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন ।
২(খ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে '১৯৭১' শীর্ষক উপন্যাস রচনা করে তাঁর সাহিত্যিক খ্যাতির ধারাবাহিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এ উপন্যাসে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনীর কমান্ডার মেজর এজাজ ও তার সহযোগী হিসেবে কাজ করা এদেশীয় যুবক রফিকের কথোপকথন এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের জটিল ধাঁধা উন্মোচিত হয়েছে। রফিক মেজর এজাজের সহযোগী হিসেবে মিলিটারি দলের সাথে নীলগঞ্জ গ্রামে প্রবেশ করে। তিনি অনেকটা দোভাষীর কাজ করেন। প্রথম দেখায়। তাকে মেজর এজাজের খাস লোক বলে মনে হলেও উপন্যাসের কাহিনি যতই এগিয়েছে তাদের উভয়ের সরল সম্পর্কে জটিলতা ততই প্রতিভাত হয়েছে। নিজ দেশের মানুষের প্রতি অকারণে ঘৃণ্য আচরণ ও হত্যাকাণ্ডে মেজর এজাজের পাশে ছায়ার মতো সর্বদা অবস্থান করলেও মন থেকে সেসব মেনে নিতে পারেননি রফিক।
ন্যায়বিচার করার নামে মনা ও তার ভাইকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে মেজর মূলত গ্রামের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলতে চেয়েছে। মনাকে অপরাধী হিসেবে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি মানলেও তার নির্দোষ ছোটো ভাইকে শাস্তি দেওয়া মানতে পারেননি রফিক। অবশ্য মেজর এজাজ যুদ্ধকালীন বাস্তবতার দোহাই দিয়ে 'এই সময়ে কিছু অন্যায় হবেই বলে নিজের নিষ্ঠুরতাকে বৈধতা দিতে চায়। এরপর নীলু সেনকে নিজ বাড়িতে হত্যা, সফদরউল্লাহর স্ত্রী ও শ্যালিকার উপর মিলিটারির নির্যাতন, মসজিদের ইমাম সাহেব ও আজিজ মাস্টারকে স্কুলঘরে বন্দি করে নির্যাতন, বারবার অদৃশ্য মুক্তিবাহিনীর প্রসঙ্গ টেনে এনে সমগ্র গ্রামবাসীকে শত্রুজ্ঞান করা এবং পুরো বাঙালি জাতিকে চরম অবজ্ঞা করে কথা বলায় রফিক মানসিকভাবে মেজর এজাজের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য তার এরূপ মনোভাব মেজর এজাজ ঠিকই বুঝতে পারে এবং রফিককে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। রফিকের জীবনাবসান ঘটে একজন অদৃশ্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। রফিকের মৃত্যুই মূলত উপন্যাসে শেষ পেরেক ঠোকে, অর্থাৎ বাঙালি আর পাকিস্তানি যে আদতে কেউ কারো নয়, তার ফয়সালা হয়ে যায়।
উপরের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, পাশাপাশি গায়ে গা ঘেঁষে চলা মেজর এজাজ ও রফিক যে আদতে পরস্পর বিরোধী রক্তের মানুষ তা উপন্যাসের শেষে পরিষ্কার হয়েছে। মেজর এজাজ ও রফিকের সম্পর্কের টানাপোড়েনই '১৯৭১' উপন্যাসের গতিপথ নির্ধারণ করেছে।
- প্রশ্ন-৩। ক) আজিজ মাস্টারের শেষ পরিণতি কী হয়েছিল? ব্যাখ্যা করো।
- খ) রফিক চরিত্রটি তোমার কাছে কি দ্বিমুখী চরিত্র মনে হয়? তোমার উত্তরের পক্ষে কারণ দেখাও।
৩(ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
পাকিস্তানি মিলিটারিদের গুলি খেয়ে মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমে আজিজ মাস্টারের উপর করা নির্যাতন পরিণতি পেয়েছে।নীলগঞ্জ গ্রামে মিলিটারি প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই মেজর এজাজ আজিজ মাস্টারকে ডেকে পাঠায়। আজিজ মাস্টার তার সাথে দেখা করতে এলে নানা রকম কথাবার্তার এক পর্যায়ে মেজর এজাজ তাকে স্কুলঘরে বন্দি করে রাখে। তার সাথে মসজিদের ইমাম সাহেবকেও বন্দি করা হয়। এরপর শুরু হয় মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে তথ্য আদায় করার নামে নির্মম নির্যাতন। জয়নাল মিয়ার মেয়ে মালার প্রতি আজিজ মাস্টারের দুর্বলতার কথা জানতে পেরে তাকে উলঙ্গ করে পুরুষাঙ্গে ইটের টুকরা বেঁধে মালার সামনে হাজির করতে চায় মেজর সাহেব ।মাস্টার প্রথম দিকে মৃত্যুভয়ে এহেন চরম অপমানজনক শাস্তি মেনে নিলেও এক পর্যায়ে মৃত্যুকেই নিজের পরিণতি হিসেবে মেনে নেন। এরপর মেজর সাহেবের নির্দেশে মিলিটারিদের গুলিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
৩(খ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
রফিক চরিত্রটি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত '১৯৭১' শীর্ষক উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র। উপন্যাসের গতিপথ নির্ধারণে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আপাতদৃষ্টিতে রফিক চরিত্রকে দ্বিমুখী মনে হলেও উপন্যাসের শেষে এসে তিনি নিজেকে স্বদেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন বীর সৈনিক হিসেবে উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন ।
নীলগঞ্জ গ্রামে রফিকের প্রবেশ অত্যন্ত নাটকীয়; মিলিটারি বাহিনীর সাথে, কমান্ডার মেজর এজাজের সহচর হিসেবে। মেজর এজাজ যেহেতু যথেষ্ট পরিমাণে বাংলায় কথা বলতে পারে না; তাই তার দোভাষীর ভূমিকায় দেখা যায় রফিককে। নীলগঞ্জের লোকজনের সাথে মেজর এজাজের যেসব কথাবার্তা হয় সকলই রফিকের মাধ্যমে। ফলে শুরু থেকে উপন্যাসের কাহিনি পরিণতির দিকে ধাবিত হওয়ার আগ পর্যন্ত যে রফিককে দেখা যায়, তাতে পাকিস্তানি মিলিটারির দোসর মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে আজিজ মাস্টার ও ইমাম সাহেবকে কথা বলার ক্ষেত্রে বারবার সতর্ক করে দেওয়া তার চারিত্রিক দ্বৈততার প্রকাশ বলেই মনে হয় ।কাহিনি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রফিকও ধীরে ধীরে তাঁর চরিত্রের রহস্যময় দিকগুলো প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে মেজর এজাজের বর্বর আচরণই অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। তিনি মেজর এজাজের সাথে চলতে চলতেই দেখেছেন, পাকিস্তানি মিলিটারিরা এ দেশের মানুষকে তাদের মতো মানুষ বলে গণ্য করে না। 'তোমার দেশ' বলে রফিকের সাথে কথা বললে রফিক এটিকে বিশেষভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য করতে উদ্যত হলে মেজর তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। উভয়ই যেন উভয়কে নতুন করে চেনার পথে যাত্রা শুরু করে এখান থেকে। রফিক লক্ষ করেন, মেজর এলাল কারণে-অকারণে চরম নিষ্ঠুরতা দেখায় মূলত গ্রামের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলতে। মিলিটারিদের অত্যাচার, নির্যাতন, নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া, দোষী-নির্দোষ নির্বিচারে যাকে-তাকে হত্যা করার এসব দৃশ্য যে সারা দেশেই পাকিস্তানিরা করে যাচ্ছে, তা আর বুঝতে বাকি থাকে না তাঁর । তিনিও ধীরে ধীরে খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যত হন। একপর্যায়ে মেজর এজাজও বুঝে যায় যে, তার জন্য রফিকের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে । সামনে দাঁড়িয়ে থেকে মিলিটারিদের দিয়ে গুলি করিয়ে তাঁকে হত্যা করে ।
পুরো উপন্যাস জুড়ে রফিকের কার্যকলাপ বেশির ভাগ সময়ই পাঠককে দ্বিধাগ্রস্ত করে। তবে বাঙালি ও বাংলাদেশের উপর ক্রমাগত নিষ্ঠুরতা চালানো পাকিস্তানি মিলিটারি তাঁর চোখ খুলে দিয়েছে। হাসতে হাসতে দেশমাতৃকার বীরসন্তান হিসেবে মৃত্যুকে বেছে নিয়ে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
২(ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
`মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ালে অনেকেই এরকম করবে'— মেজর সাহেবের কথার উত্তরে রফিক উক্তিটি করেছিলেন ।মেজর এজাজ নীলগঞ্জ গ্রামে এসে একটা আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করতে তৎপর হয়। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে ক্যাম্প করার পরপরই স্কুল মাস্টার আজিজ মাস্টারকে স্কুলঘরে বন্দি করে রাখে। কথা আদায়ের নামে সে পাশবিক অত্যাচার করে। মেজর এজাজ তার সহযোগী বাঙালি যুবক রফিককে নির্দেশ দেয়, সে যেন আজিজ মাস্টারের পুরুষাঙ্গে ইটের টুকরা ঝুলিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে আনে। আজিজ মাস্টারকে লজ্জাজনক শাস্তি অথবা মৃত্যু— দুইটির মাঝে একটি বেছে নিতে বললে তিনি লজ্জাজনক শাস্তি বেছে নেন। বাঙালি মাস্টার মৃত্যু এড়িয়ে থেকে চাওয়ায় সমগ্র বাঙালি জাতিকেই সে কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে । এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষ যেকোনো রকম আচরণই যে করতে পারে এবং তা যে অস্বাভাবিক নয়— এ কথা বোঝাতেই রফিক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন ।
- প্রশ্ন-৪। ক) মীর আলিকে মেজর এজাজ কেন সালাম দিলেন? ব্যাখ্যা করো।
- খ) নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে যুদ্ধের বর্বরতা '১৯৭১' উপন্যাসে কীভাবে রূপায়িত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
৪ (ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
সহচর বাঙালি যুবক রফিককে নিয়ে গ্রামে ঘুরতে বের হয়। সে সরেজমিনে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে চায়। পথিমধ্যে বৃদ্ধ মীর আলিকে সে দেখতে '১৯৭১' উপন্যাসে নীলগঞ্জ গ্রামে যে পাকিস্তানি মিলিটারিদের দল এসে ক্যাম্প করেছে তাদের কমান্ডার হলো মেজর এজাজ। সে একদিন তার পায় বাড়ির বাইরে টুলের উপর বসে থাকতে। রফিকের মাধ্যমে সে জানতে পারে যে লোকটি অন্ধ। বাড়ির বাইরে বসা অন্ধ বৃদ্ধ লোকটিকে বসেথাকতে দেখে তার নিজের বাবার কথা মনে পড়ে।রেশোবা গ্রামে তার বৃদ্ধ অন্ধ বাবাও এমনিভাবে বাড়ির বাইরে বসে থাকে। সেকথা মনে হতেই সে মীর আলিকে সালাম দেয়।
৪ (খ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
পাঠকসমাজে বিপুল জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখায় বারবার উঠে এসেছে দেশ, দেশের মানুষ, ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রভৃতি। ‘১৯৭১' তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনাবলির মধ্যে অন্যতম। এ উপন্যাসের শুরুতে নীলগঞ্জ গ্রামের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তাতে গ্রামটিকে আবহমান বাংলার আর দশটা সাধারণ গ্রামের মতোই মনে হয়। তবে গ্রামে পাকিস্তানি মিলিটারি প্রবেশ করার পর থেকে ধীরে ধীরে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। নীলগঞ্জ গ্রামের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক একে দরিদ্র, শ্রীহীন, ত্রিশ-চল্লিশ ঘরের একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ বলেছেন। বিস্তীর্ণ জলাভূমি গ্রামটিকে কাস্তের মতো দুইদিকে ঘিরে আছে। কৃষিকাজ করেই মূলত এখানকার লোকজনের জীবিকার সংস্থান হয়। গ্রামের অধিকাংশ ঘরেই খড়ের ছাউনি। সম্প্রতি কয়েকটি টিনের ঘর হয়েছে। বদিউজ্জামানের মতো হাতেগোনা দুই-একজন কাজের জন্য গ্রামের বাইরে যায়। গ্রামে একটি মসজিদ ও একটি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে । এলাকার বাইরের মানুষ বলতে মসজিদের ইমাম সাহেব ও স্কুল মাস্টার আজিজুর রহমান মল্লিক। গ্রামের সাধারণ জনগণের বাইরে নীলগঞ্জের জলাভূমিটার পাশে একদল কৈবর্ত বসবাস করে। গ্রামের সঙ্গে অবশ্য তাদের খুব একটা সংযোগ নেই। মাছ ধরার সিজনে এরা জলমহালে মাছ ধরতে যায় । আবার ফিরে আসে।
এ রকম একটা গণ্ডগ্রামে মিলিটারি প্রবেশ করার পরই নিস্তরঙ্গ গ্রামটিতে ভিন্ন ধরনের কাণ্ডকারখানা ঘটতে থাকে। মসজিদের ইমাম সাহেব ও আজিজ মাস্টারকে বন্দি করে মেজর এজাজের নেতৃত্বে নির্যাতন শুরু করা হয় । আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে চিত্রা বুড়ির ছেলে হত্যার বিচারের নামে মনা ও তার ছোটোভাইকে ইমাম ও মাস্টারের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় । মিলিটারিরা হত্যা করে সেনবাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী নীলু সেনকেও। সফদরউল্লাহর বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রী ও শ্যালিকার উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় মিলিটারিরা। অথচ এদের কারো সাথে মুক্তিবাহিনী বা মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্পর্কই ছিল না।
উপরের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, নীলগঞ্জ গ্রামের সাথে মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও মেজর এজাজের নেতৃত্বে থাকা মিলিটারি দলটি তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে গ্রামটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। ফলে উপন্যাসের নীলগঞ্জ গ্রাম আর সাধারণ একটি গ্রাম হয়ে থাকেনি— মুক্তিযুদ্ধের একটি জলজ্যান্ত ছবি হয়ে উঠেছে।
- প্রশ্ন-৫। ক) খুনের বিচার করতে মেজর এজাজ এতটা আগ্রহী হয়েছিল কেন?
- খ) ‘নীলগঞ্জ আসলে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।'- ব্যাখ্যা করো।
(ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে মেজর এজাজ খুনের বিচার করতে আগ্রহী হয়েছিল । '১৯৭১' উপন্যাসে নীলগঞ্জ গ্রামে মিলিটারি প্রবেশ করার পর স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও স্কুল মাস্টারকে ডেকে এনে নির্যাতন করে মেজর এজাজ। তার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো উপায়ে গ্রামের মানুষকে ভড়কে দেওয়া। এ কাজে সে সামনে নিয়ে আসে মুক্তিবাহিনীর হাতে তার বন্ধু মেজর বখতিয়ারের বন্দি হওয়ার কাহিনি, যার সাথে নীলগঞ্জ গ্রামের মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই । তখনই তার সামনে এসে যায় চিত্রা বুড়ির ছেলে হত্যার প্রসঙ্গটি। কৈবর্তপাড়ার ঘটনায় অন্যরা সাধারণত নাক গলায় না— এই সুবাদে সে নিজেকে ন্যায়বিচারক হিসেবে দেখাতে খুনের দায়ে মনা কৈবর্তকে নির্মমভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করে ।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্তরালে মূলত সে গ্রামবাসীর মনে চরম আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছে।
(খ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা কথাসাহিত্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক '১৯৭১' শীর্ষক উপন্যাসে তিনি গ্রামীণ পটভূমিতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি আলেখ্য রচনা করেছেন। অন্য আর দশটি সাধারণ অজগ্রামের মতোই ‘১৯৭১' উপন্যাসের নীলগঞ্জ গ্রাম। নীলগঞ্জের মানুষের জীবনযাত্রায় রাজনীতির কোনো ছোঁয়া না লাগলেও পাকিস্তানি মিলিটারি প্রবেশ করার পর ধীরে ধীরে গ্রামটি যেন একখন্ড যুদ্ধের ময়দানে পরিণত হয় । ত্রিশ-চল্লিশটি পরিবারের একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ নীলগঞ্জ। বিস্তীর্ণ জলাভূমি গ্রামটি কাস্তের মতো দুদিকে ঘিরে আছে। এখানকার প্রায় সকলেই কৃষিকাজ করে । শীতকালে প্রচুর রবিশস্য ফলে এখানে । গ্রামের ঘরবাড়িও অতি সাধারণ ।এ রকম একটি গ্রামেই একদিন ভোর হতে না হতেই মেজর এজাজের নেতৃত্বে মিলিটারি প্রবেশ করে। প্রথমেই তাদের হাতে লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হন ইমাম সাহেব ও আজিজ মাস্টার। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রহসন করে মনা কৈবর্ত এবং তার ছোটো ভাইকে ইমাম ও আজিজ মাস্টারের সামনে গুলি করে হত্যা করে। এর মাধ্যমে পুরো গ্রামে একটা অদৃশ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে চায় সে। মাস্টারকে উলঙ্গ করে নির্যাতন করা, নীলু সেনকে হত্যা করা, সফদরউল্লাহর স্ত্রী ও শ্যালিকার উপর পাশবিক নির্যাতন করা ইত্যাদির মাধ্যমে মিলিটারিরা পুরো গ্রামটিকেই যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে। উপরের আলোচনায় নীলগঞ্জ গ্রামের যে চিত্র আমরা দেখতে পাই এমনটি আসলে মুক্তিযুদ্ধকালীন সমগ্র বাংলায় চিত্রিত হয়েছে।
- প্রশ্ন-৬। ক) বদিউজ্জামান কাদের ভয়ে এবং কোথায় লুকিয়েছিল? তার অবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
- খ) 'অপ্রমানের চেয়ে মানুষ মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করে।'--- আজিজ মাস্টারের উদাহরণ ব্যবহার করে বাক্যটির সত্যতা যাচাই করো।
৬(ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
বদিউজ্জামান মিলিটারিদের ভয়ে জঙ্গলা মাঠের ভিতরে একটি বড়ো গর্তে কোমড় পানিতে লুকিয়েছিল ।মিলিটারি আগমনের পর একেবারেই নিরুপদ্রব, শান্ত-সমাহিত নীলগঞ্জ গ্রামের চেহারা দ্রুতই পালটে যেতে লাগল। গ্রামের প্রায় সকলেই কৃষিকাজ করলেও বদিউজ্জামানের মধুবন বাজারে মনিহারি দোকান আছে। সে প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানদারি শেষে সন্ধ্যায় দীর্ঘপঞ্জ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরে । মিলিটারি দল আসতে দেখে পথিমধ্যে সে থমকে দাঁড়ায় আজ। সে মধুবন বাজারে যাওয়ার জন্য রওনা দিলেও আবার ফেরার পথ ধরে। মিলিটারির কবল থেকে বাঁচতে সে জঙ্গলা মাঠের ভিতরে ঢুকে যায়। একটি বড়ো গর্তে কোমড় পানিতে লুকিয়ে থাকে। কালি আসতে চাইলে সে প্রাণপণে ঠেকিয়ে রাখতে চায়। শেয়াল দেখতে পায় এক জোড়া। পচা গন্ধ আসে পানি থেকে। তবুও ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকে সে। নীলগঞ্জ থেকে আসা গুলির শব্দও শুনতে পায়। দীর্ঘ সময় ধরে এভাবেই সে পানির ভিতরে বসে থাকে।
৬(খ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর '১৯৭১' শীর্ষক উপন্যাসে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নীলগঞ্জ গ্রামের জনজীবন ও যুদ্ধকালীন বাস্তবতা তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়েছেন। এ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র আজিজ মাস্টার। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের রকম-বহর অত্যন্ত লজ্জাজনক হওয়ায় একপর্যায়ে তিনি নিজেই অপমানের বিপরীতে নিজের মৃত্যুকে বেছে নেন ।'১৯৭১' উপন্যাসে আজিজ মাস্টার নীলগঞ্জ গ্রামের কেউ নন। মসজিদের ইমাম সাহেবের মতো তিনিও বাইরের লোক। থাকেন জয়নাল মিয়ার বাড়িতে। মেজর এজাজ স্কুলের দপ্তরির মাধ্যমে মাস্টার সাহেবকে ডেকে পাঠায়। সে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চায় কিন্তু আজিজ মাস্টার কোনো তথ্যই দিতে পারেন না । মেজর এজাজ অবশ্য তার কোনো কথা বিশ্বাস করে না । একপর্যায়ে তাকে বন্দি করে নির্যাতন চালায়। কথায় কথায় মেজর এজাজ জানতে পারে যে, জয়নাল মিয়ার মেয়ে মালাকে নিয়ে আজিজ মাস্টার কবিতা লেখেন। এরপর সে শাস্তির ধরনেও পরিবর্তন আনে। তার এদেশীয় সহচর রফিককে বলে, সে যেন আজিজ মাস্টারকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে এবং তার পুরুষাঙ্গে একটা একটা ইটের টুকরা বেঁধে গ্রামে ঘুরিয়ে আনে । মেজর এজাজের এ সিদ্ধান্ত আজিজ মাস্টার মন থেকে মানতে না পারলেও তিনি ছিলেন নিরুপায়। জীবন বাঁচানোর দায়ে তিনি নিজেই নিজের পরনের প্যান্ট খুলে ফেলেন। এর আগেই মেজর এজাজ চিত্রা বুড়ির ছেলেকে হত্যার দায়ে ছোটো ভাইসহ মনা কৈবর্তকে গুলি করে হত্যা করে। সেই ভয়ংকর দৃশ্য সামনে থেকে দেখতে হয় আজিজ মাস্টারকে। সময় যতই গড়ায় মেজর এজাজের শাস্তি দেওয়ার নতুন নতুন পদ্ধতি বের হতে থাকে। এবার সে জয়নাল মিয়াকে ধরে এনে তার সামনে মাস্টার সাহেবকে উলঙ্গ অবস্থায় হাজির করে এবং আজিজ মাস্টার যে তার মেয়েকে ভালোবাসে তা জানিয়ে দেয়। রফিককে আবার নির্দেশ দেয়, সে যেন আজিজ মাস্টারকে উলঙ্গ অবস্থায় জয়নাল মিয়ার মেয়ে মালার সামনে নিয়ে ঘুরিয়ে আনে। এমতাবস্থায় আজিজ মাস্টারের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। এবং লজ্জাজনক শাস্তির বিপরীতে মৃত্যুকে মেনে নেন তিনি। মেজর এজাজের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয় ।
অর্থাৎ যখন একের পর এক শাস্তির ধরন পরিবর্তিত হতে লাগল এবং তা চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেল তখন আজিজ মাস্টার অপমানের তুলনায় মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করে তা মেনে নিতে প্রস্তুত হন । তার এ আচরণে প্রমাণিত হয়েছে যে, 'অপমানের চেয়ে মানুষ মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করে।
- প্রশ্ন-৭। ক) অনুফা কে? সে কেন মীর আলির উপর বিরক্ত হয়?
- খ) ‘অকারণ নিপীড়নই একটি যুদ্ধকে জনগণের মুক্তিযুদ্ধে উপনীত করেছিল।'— '১৯৭১' উপন্যাস থেকে অন্তত তিনটি চরিত্রের উদাহরণ দিয়ে প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করো।
৭(ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
অনুফা মীর আলির বড়ো ছেলে বদিউজ্জামানের স্ত্রী। গ্রামে মিলিটারির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবেশেও বারবার খাবার খেতে চাওয়ায় সে মীর আলির উপর বিরক্ত হয়।গ্রামে মিলিটারি আসার পর নীলগঞ্জের মানুষের জীবনে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। মসজিদের ইমাম ও স্কুলের শিক্ষক আজিজ মাস্টারের উপর নির্যাতন করে মিলিটারিরা। বিচারের নামে মনা কৈবর্তকে হত্যা করে। নীলু সেনকে তার বাড়িতেই হত্যা করা হয়। সফদরউল্লাহর স্ত্রী ও তার ছোটো বোনদের উপর পাশবিক নির্যাতন করে মিলিটারিরা। এমন ভীতিকর অবস্থায় বদিউজ্জামানও বাড়িতে ফেরেনি। তাই অনুফা অনেক বেলা হয়ে গেলেও রান্না করেনি। এদিকে খাবারের জন্য মীর আলি কাঁদে। বারবার তাড়া দেয় অনুফাকে ।ফলে অনুফা তার শ্বশুর মীর আলির উপর অত্যন্ত বিরক্ত হয়।
৭(খ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম হুমায়ূন আহমেদ। দেশবিভাগ পরবর্তী সময়ে তিনি বাঙালি পাঠককে বইমুখী রাখতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ‘১৯৭১' উপন্যাসটি তাঁর কৃতিত্বের অন্যতম স্বাক্ষর। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে নীলগঞ্জের মতো একটি গণ্ডগ্রামও পাকিস্তানি মিলিটারিদের অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে মুক্তিযুদ্ধের এক টুকরা রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। ‘১৯৭১' উপন্যাসের আজিজ মাস্টার, সফদরউল্লাহ ও রফিক চরিত্রের উদাহরণে প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করা হলো— আজিজ মাস্টার: আজিজ মাস্টার হলেন নীলগঞ্জ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। স্কুল মাস্টারির পাশাপাশি তিনি কবিতা লেখেন। তার কবিতাগুলো মূলত জয়নাল মিয়ার কিশোরী কন্যা মালাকে নিয়ে । মিলিটারি কমান্ডার মেজর এজাজ ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতন করে। মালার প্রতি তার দুর্বলতার কথা জানতে পেরে উলঙ্গ অবস্থায় তাকে মালার সামনে নিতে চায় মেজর এজাজ। তখন তিনি নিজেই শাস্তি হিসেবে মৃত্যুকে বেছে নেন। সফদরউল্লাহ: সফদরউল্লাহ ‘১৯৭১' উপন্যাসের একটি অপ্রধান চরিত্র। একদিন মিলিটারিরা তার বাড়িতে এসে তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও শ্যালিকার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এতে সে মিলিটারির প্রতি চরম ক্ষুব্ধ হয়ে দা হাতে নিয়ে দায়ী মিলিটারিকে খুঁজতে থাকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। রফিক: রফিক এ উপন্যাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। মিলিটারি কমান্ডার মেজর এজাজের সহযোগী হিসেবে নীলগঞ্জ গ্রামে প্রবেশ করলেও এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে একজন প্রকৃত স্বদেশপ্রেমী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। শুরুতে মেজর এজাজের দোভাষী হিসেবে কাজ করলেও চোখের সামনে অহেতুক অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড দেখে তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন— এসব অন্যায়, তাই পরিত্যাজ্য। ফলে মেজার এজাজের সাথে শুরু হয় তাঁর কথার যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত স্বজাতির প্রতি ভালোবাসার মূল্য তাঁকে নিজের জীবন দিয়ে চুকাতে হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, আজিজ মাস্টার, সফদরউল্লাহ, রফিক— এরা কেউই মুক্তিযুদ্ধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না। মেজর এজাজ কল্পিত শত্রু তথা মুক্তিবাহিনী খোঁজার নামে একে একে সবাইকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে চরম নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের মুক্তিযুদ্ধের অংশ বানিয়ে দেয় । তাই বলা যায় যে, ‘অকারণ নিপীড়নই একটি যুদ্ধকে জনগণের মুক্তিযুদ্ধে উপনীত করেছিল।'
বর্ণনামূলক প্রশ্ন (প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০)
- ১। (ক) "চারদিকে সীমাহীন অন্ধকার”- ব্যাখ্যা কর।
- (খ) "মানুষকে এভাবে লজ্জা দেওয়ার অর্থ হয় না"- উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে প্রতিবাদী চেতনা- বিশ্লেষণ কর।
- ২। (ক) "পৃথিবীর সব জায়গার মানুষই একই রকম”- ব্যাখ্যা কর।
- (খ) '১৯৭১' উপন্যাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখ।
- ৩। (ক) মিলিটারি সম্পর্কে বদিউজ্জামানের ধারণার সত্যতা ব্যাখ্যা কর।
- (খ) “হুমায়ুন আহমেদ '১১৯৭১' উপন্যাসে কোনো কিছুই স্পষ্ট করেননি, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই রেখে দিয়েছেন সম্ভাবনার বীজ। এ সম্পর্কে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
- ৪। (ক) আজিজ মাস্টারের বেশ অবাক হওয়ার কারণ কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
- (খ) '১৯৭১' উপন্যাসে কালবৈশাখি ঝড় কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছে? বিশ্লেষণ কর
- ৫। (ক) "ওদের শাস্তি একটাই”- ব্যাখ্যা কর।
- (খ) রফিকের মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া কীভাবে একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে? ব্যাখ্যা কর।
- ৬। (ক) মীর আলি এক খালা মুড়ি নিয়ে উঠানে বসেছিল কেন?
- (খ) অনুফা এ সংসারে ভাগ্য নিয়ে এসেছে”- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
- ৭। (ক) মীর আলি অত্যন্ত বিচলিত বোধ করে কেন? ব্যাখ্যা কর।
- (খ) '১৯৭১' উপন্যাসে ঝড় কখলিত মীর আলি একাত্তরের অন্যায় যুদ্ধে সংঘটিত মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীক- বিশ্লেষণ কর।
- ৮। (ক) জয়নাল মিয়া দলবল নিয়ে ছাতিম গাছের নিচে অপেক্ষা করে কেন?
- (খ) '১৯৭১' উপন্যাসটি সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকে নয়, বরং যুদ্ধের কিন্তু খন্ডচিত্রকে ধারণ করেছে মাত্র- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর
- ৯। (ক) নীলু সেন গত রাতে এক পলকের জন্যও ঘুমাতে পারেননি কেন? ব্যাখ্যা কর।
- (খ) '১৯৭১' উপন্যাসটি ঐতিহাসিক বাস্তবতার সাথে ঔপন্যাসিকের কল্পনার অনবদ্য মেলবন্ধন- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর
- ১০। (ক) চন্দ্রকান্ত সেনের সর্পাঘাত ও গুপ্তধন সম্পর্কিত মিথের বর্ণনা দাও।
- (খ) '১৯৭১' উপন্যাসে নীলগঞ্জ গ্রামের মসজিদের ইমাম নিপীড়িত বাঙালির প্রতীক- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url