খনিজ সম্পদ-জীবাশ্ম
আমাদের ওয়েবসাইট “অর্ডিনেট আইটি.কম” ও চ্যানেল ”অর্ডিনেট ক্লাসরুম ”আপনাদের স্বাগতম ।
আমরা একটি ভিন্ন প্রজন্মের স্বপ্ন দেখি। আমরা অধিক চিন্তাশীল প্রজন্ম গড়তে চাই, আলাদা মানুষ যাদের আগে চিন্তা করার অভ্যাস থাকবে। আমরা মানুষ কেন? কারণ আমরা চিন্তা করি, এবং সেই চিন্তাকে মুক্তচিন্তা হতে হবে। আর মুখস্থ করে আর যা ই হোক, বিজ্ঞান শিক্ষা হতে পারে না। আর সেই প্রচেষ্টারই অংশ হল আমাদের কনটেন্ট ও ভিডিও লেকচার। এই কনটেন্ট ও ভিডিওগুলির উদ্দেশ্য হল প্রতিটি বিষয় এমনভাবে শেখানোর চেষ্টা করা যাতে আপনি বইয়ের বাইরেও অনেক কিছু ভাবতে পারেন। আর আপনি যখন চিন্তাশীল মানুষ হবেন, তখন আপনি নিজেই বুঝবেন এই দেশকে আলাদা করতে আমাদের কী করতে হবে, কতদূর যেতে হবে।
অধ্যায়:11 খনিজ সম্পদ-জীবাশ্ম
Mineral Resources-Fossils
LECTURE SHEET
এক নজরে সকল বিক্রিয়া লেখার নিয়ম
জীবাশ্ম জ্বালানি
শক্তির অতি পরিচিত উৎস হলো কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। কোটি কোটি বছর পূর্বে এ পৃথিবীতে বিশাল বিশাল বনভূমি ছিল। বনভ‚মিতে যেসব গাছপালা, জীবজন্তু ছিল প্রচণ্ড ভূমিকম্প বা কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বা অন্য কোনো কারণে মাটির নিচে চাপা পড়ে এবং ক্রমান্বয়ে জমতে থাকে। এদেরই দেহাবশেষ জীবাশ্ম। ভ‚অভ্যন্তরভাগে প্রচণ্ড চাপে ও তাপে বায়ুর অনুপস্থিতিতে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে এদের ধ্বংসাবশেষ ক্রমশ কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে পরিণত হয়। এ জীবাশ্ম কঠিন, তরল বা বায়বীয় আকারে খনি থেকে তুলে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হয়। তাই এদেরকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হয়।
পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল
শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল। খনি থেকে যে তেল আহরিত হয় তা অপরিশোধিত তেল যা মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ। অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। পেট্রোলিয়ামে বিদ্যমান উপাদানের স্ফুটনাংকের ওপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথকীকৃত বিভিন্ন অংশের নাম পর্যায়ক্রমে পেট্রোলিয়াম গ্যাস, পেট্রোল (গ্যাসোলিন), ন্যাপথা, কেরোসিন, ডিজেল তেল, লুব্রিকেটিং তেল ও বিটুমিন। পেট্রোলের বিভিন্ন অংশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের জ্বালানি ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
প্রাকৃতিক গ্যাস
খনিতে পেট্রোলিয়াম যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় প্রাকৃতিক গ্যাসের সৃষ্টির প্রক্রিয়াও একই রকম। সাধারণত খনির উপরের অংশে গ্যাস আর নিচের দিকে খনিজ তেল থাকে। খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উভয়ই জৈব পদার্থ। এগুলো কার্বন ও হাইড্রোজেনের বিভিন্ন অনুপাতে মিশ্রণের ফলে গঠিত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান
- মিথেন (৮০%)। এছাড়াও প্রাকৃতিক গ্যাসে থাকে
- ইথেন (৭%),
- প্রোপেন (৬%),
- বিউটেন ও আইসো বিউটেন (৪%),
- পেনটেন (৩%)।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের হার ৯৯.৯৯%। প্রাকৃতিক গ্যাসকে বায়ুতে পোড়ালে তাপশক্তি পাওয়া যায়।
হাইড্রোকার্বন : কার্বন এবং হাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত যৌগসমূহকে হাইড্রোকার্বন বলে। যেমন : CH4, C2H6, C6H6, C6H12 প্রভৃতি। আণবিক গঠন অনুযায়ী হাইড্রোকার্বন প্রধানত দুই প্রকার। যথা :
- অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বন ও
- অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন।
অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বনকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। মুক্ত শিকল ও বদ্ধ শিকল হাইড্রোকার্বন। মুক্ত শিকল
হাইড্রোকার্বনসমূহ আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা :
- সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন ও
- অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন।
অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন: যেসব হাইড্রোকার্বনে কার্বন-কার্বন পরমাণুর মধ্যে কমপক্ষে একটি দ্বিবন্ধন বা একটি ত্রিবন্ধন থাকে তাদের অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বলে।
যেমন : ইথিন, ইথাইন ইত্যাদি।
অ্যালকেন
অ্যালকিন
অ্যালকাইন
যেসব অসম্পৃক্ত অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বনের মধ্যে কমপক্ষে দুটি কার্বন পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে ত্রিবন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে তাদের অ্যালকাইন বলে। এদের সাধারণ আণবিক সংকেত CnH2n-2। এ শ্রেণির প্রথম সদস্যের নাম অ্যাসিটিলিন (CH º CH)। মূল হাইড্রোকার্বনের নামের শেষে এন (ane) বাদ দিয়ে সেখানে আইন (-yne) যোগ করলে অ্যালকাইনের নাম পাওয়া যায়।
অ্যালকোহল
অ্যালডিহাইড
সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের অণু থেকে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু -CHO গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলে যে যৌগসমূহ গঠিত হয়, তাদের অ্যালডিহাইড বলা হয়। অ্যালকেন থেকে উদ্ভূত অ্যালডিহাইডের সাধারণ সংকেত CnH2n+1, CHO। এ শ্রেণির প্রথম সদস্য হচ্ছে ফরম্যালডিহাইড (HCHO)।
জৈব এসিড
একটি কার্বক্সিলমূলক বিশিষ্ট অ্যালিফেটিক জৈব যৌগসমূহকে জৈব এসিড বা ফ্যাটি এসিড বলা হয়। এদের সাধারণ সংকেত RCOOH। প্রথম ফ্যাটি এসিডের নাম মিথানয়িক এসিড (HCOOH)। দ্বিতীয় ফ্যাটি এসিডের নাম ইথানয়িক এসিড (CH3COOH)। ফ্যাটি এসিডসমূহের কার্যকরী মূলক হচ্ছে -COOH। প্রায় সব বিক্রিয়ায় এ মূলক অংশগ্রহণ করে।
পলিমার
একই পদার্থের অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে যে বৃহৎ অণু গঠন করে তাকে পলিমার বলে। মেলামাইনের থালা-বাসন, বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড, কার্পেট, পিভিসি পাইপ, পলিথিনের ব্যাগ, সিল্কের বা উলের কাপড়, নাইলনের সুতা, রাবার সবই পলিমার। দুই ধরনের পলিমার আছে- প্রাকৃতিক পলিমার ও কৃত্রিম পলিমার।
প্রাকৃতিক পলিমার
প্রাকৃতিকভাবে অনেক পলিমার উৎপন্ন হয়। যেমন : উদ্ভিদের সেলুলোজ ও স্টার্চ দুটোই পলিমার যা বহুসংখ্যক গøুকোজ অণুযুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে। প্রোটিন অ্যামাইনো এসিডের পলিমার। ইনসুলিন নামক পলিমারে দুটি অ্যামাইনো এসিড থাকে। রাবার নামক গাছের কষ একটি প্রাকৃতিক পলিমার।
কৃত্রিম পলিমার বা প্লাস্টিক
সকল প্লাস্টিক দ্রব্য কৃত্রিম পলিমার। প্লাস্টিক শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ চষধংঃরশড়ং থেকে যার অর্থ গলানো সম্ভব। যেসব প্লাস্টিক গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে যে কোনো আকার দেওয়া যায়, সেগুলো কৃত্রিম পলিমার। রাসায়নিক পদার্থ বিশেষত দ্বিবন্ধন বিশিষ্ট অ্যালকিন, অ্যালডিহাইড, অ্যালকোহল, অ্যামিন, জৈব এসিডের পলিমারকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিক প্রস্তুত করা হয়।
পলিমারকরণ
উচ্চতাপ (২০০°C) ও উচ্চচাপে (১০০০ বায়ুচাপে) অসংখ্য অ্যালকিন অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহৎ আকৃতির অণু গঠন করে। এ বিক্রিয়ায় উৎপন্ন বৃহৎ অণুকে পলিমার এবং বিক্রিয়াকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে। যে অসংখ্য বিক্রিয়ক অণু যুক্ত হয় তাদের প্রত্যেকটি অণুকে মনোমার বলে।
জৈব ও অজৈব যৌগের পার্থক্য
কার্বন ও হাইড্রোজেন যুক্ত যৌগসমূহকে জৈব যৌগ বলে। অর্থাৎ সকল হাইড্রোকার্বনই জৈব যৌগ। জৈব যৌগসমূহ সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে এবং অজৈব যৌগসমূহ আয়নিক বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয়। কিছু সমযোজী যৌগ থাকে যারা আয়নিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে এবং কিছু আয়নিক যৌগ থাকে যারা সমযোজী বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
👉জেনে রাখ
- কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ।
- উচ্চ তাপ ও চাপে বায়ুর অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহ হাজার হাজার বছরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে জীবাশ্ম জ্বালানিতে পরিণত হয়।
- প্রায় সকল জ্বালানির মূল উপাদান কার্বন ও কার্বন যৌগ।
- হাইড্রোকার্বন হলো কার্বন ও হাইড্রোজেনের যৌগ।
- প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন ৮০%।
- বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাওয়া প্রাকৃতিক গ্যাসের ৯৯.৯৯% মিথেন।
👉 জেনে রাখ
- অপরিশোধিত তেল বা পেট্রোলিয়াম মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ।
- অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়।
অপরিশোধিত তেলের বিভিন্ন অংশকে পৃথক করার প্রক্রিয়াকে পরিশোধন বলে।
👉 জেনে রাখ
- পেট্রোলিয়ামে শতকরা ২ ভাগ পেট্রোলিয়াম গ্যাস, ৫ ভাগ পেট্রোল এবং ১০ ভাগ ন্যাপথা থাকে।এগুলোর হাইড্রোকার্বনে কার্বন সংখ্যা যথাক্রমে ১ থেকে ৪, ৫ থেকে ১০ ও ৭ থেকে ১৪ পর্যন্ত।
- পেট্রোলিয়ামে শতকরা ১৩ ভাগ কেরোসিন থাকে। এ অংশের হাইড্রোকার্বনে ১১ থেকে ১৬ পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে।
- পেট্রোলিয়ামে শতকরা ২০ ভাগ ডিজেল তেল থাকে। এ অংশের হাইড্রোকার্বনে ১৬ থেকে ২০ পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে।
পেট্রোলিয়ামে শতকরা ৫০ ভাগ লুব্রিকেটিং তেল ও বিটুমিন থাকে। বিটুমিন অংশের হাইড্রোকার্বনে কার্বন সংখ্যা ৭০ থেকে বেশি থাকে।
👉জেনে রাখ
- হাইড্রোকার্বনসমূহ শুধু কার্বন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত। এতে কার্বন ও হাইড্রোজেন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে।
- হাইড্রোকার্বনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বন ও অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন।
- অ্যারোমেটিক যৌগসমূহ সাধারণত ৫, ৬ বা ৭ সদস্যের সমতলীয় চক্রিয় যৌগ। এতে একান্তর দ্বিবন্ধন থাকে।
- অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বন দুই প্রকার। যথা : মুক্ত শিকল হাইড্রোকার্বন ও বদ্ধ শিকল হাইড্রোকার্বন।
সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের কার্বন শিকলে কার্বন পরমাণুসমূহ একক সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজ্যতা হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ হয়। এদেরকে অ্যালকেন (Alkane) বলা হয়।
যেমন : ইথেন (CH3 - CH3)
অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের কার্বন শিকলে অন্তত দুটি কার্বন পরমাণু দ্বিবন্ধন অথবা ত্রিবন্ধনে আবদ্ধ থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজ্যতা হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ হয়।
অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: অ্যালকিন (Alkene) ও অ্যালকাইন (Alkyne)।দ্বিবন্ধন বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনকে অ্যালকিন এবং ত্রিবন্ধন বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনকে অ্যালকাইন বলে।
উচ্চ তাপ (২০০°C) ও উচ্চ চাপে (১০০০ বায়ুচাপ) অসংখ্য অ্যালকিন অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহৎ আকৃতির অণু গঠন করে। এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন বৃহৎ অণুকে পলিমার এবং বিক্রিয়াকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে।
অ্যালকাইন শ্রেণির যৌগও রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রতি অত্যন্ত সক্রিয়, তবে অ্যালকিনের তুলনায় সক্রিয়তা কিছুটা কম।ব্রোমিন পানির দ্রবণ ও পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের দ্রবণ ব্যবহার করে অসম্পৃক্ত দ্রবণ শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা যায়।
👉জেনে রাখ
- প্রাকৃতিক পলিমারের মধ্যে তুলা, রাবার, স্টার্চ (ভাত), প্রোটিন এবং কৃত্রিম পলিমারের মধ্যে প্লাস্টিক দ্রব্য, হাতের কলম, পলিএস্টার কাপড় ইত্যাদি দ্রব্যাদি আমরা ব্যবহার করি।
- একই পদার্থের অসংখ্য অণু বা একাধিক পদার্থের অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহৎ অণু গঠন করার প্রক্রিয়াকে পলিমারকরণ বলে।
- একই বিক্রিয়কের অসংখ্য অণু যুক্ত হয়ে পলিমার গঠন করার প্রক্রিয়াকে যুত পলিমারকরণ (Addition Polymerization) বলে।
- ঘনীভবন পলিমারকরণে অসংখ্য মনোমার অণু যুক্ত হওয়ার সময় পানি (H2O), কার্বন ডাইঅক্সাইডের CO2 ন্যায় ক্ষুদ্র অণু অপসারিত হয়।
- গঠন ও তাপীয় বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কৃত্রিম পলিমার (প্লাস্টিক) দুই ধরনের থার্মোপ্লাস্টিক ও থার্মোসেটিং প্লাস্টিক।
- থার্মোসেটিং প্লাস্টিক থার্মোপ্লাস্টিকের চেয়ে শক্ত এবং কম নমনীয়।
- প্লাস্টিক পলিমারসমূহকে যে মনোমার দ্বারা প্রস্তুত করা হয় তা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করা হয়।
👉জেনে রাখ
- পেট্রোলিয়ামের প্রধান উপাদান হাইড্রোকার্বন, অ্যালকেন, অ্যালকিন ও অ্যালকাইন।
- হাইড্রোকার্বন থেকে সকল শ্রেণির জৈব যৌগ প্রস্তুত করা হয়।
👉জেনে রাখ
- মিথানল বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। যা মূলত অন্য রাসায়নিক পদার্থ প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়।
- রাসায়নিক শিল্পে ইথানল থেকে ইথানয়িক এসিড, বিভিন্ন জৈব এসিডের এস্টার প্রস্তুত করা হয়।
- ইথানলকে প্রধানত পারফিউম, কসমেটিক্স ও ঔষধ শিল্পে দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- ইথানলের ৯৬% জলীয় দ্রবণকে রেকটিফাইড স্পিরিট বলে।
- মিথান্যাল বা ফরমালডিহাইডের সম্পৃক্ত (৪০%, আয়তন হিসেবে; ৩৭%, ভর হিসেবে) জলীয় দ্রবণকে ফরমালিন বলে যা মৃত প্রাণী সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- অ্যালডিহাইড থেকে পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরি করা হয়।
- জৈব এসিডের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকায় একে খাদ্য সংরক্ষক (ঋড়ড়ফ চৎবংবৎাধঃরাব) হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- ইথানয়িক এসিডের ৬-১০% জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলে যা সস ও আচার সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
জৈব প্লাস্টিক দ্রব্য, পলিএস্টার নামক রাসায়নিক তন্তু ও সুগন্ধি (এস্টার) জাতীয় দ্রব্য তৈরি করতে জৈব এসিড ব্যবহৃত হয়।
👉 জেনে রাখ
- জৈব যৌগসমূহ সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে এবং অজৈব যৌগসমূহ আয়নিক বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয়।
- কিছু সমযোজী যৌগ থাকে যারা আয়নিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
- কিছু আয়নিক যৌগ থাকে যারা সমযোজী বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন : ১ রিফাইনিং কী?
উত্তর : রিফাইনিং হলো অপরিশোধিত তেলের বিভিন্ন অংশকে পৃথক করার প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন:২ লুব্রিকেটিং তেল কাকে বলে?
উত্তর : ২৭১-৩৪০°সে. তাপমাত্রায় পেট্রোলিয়ামের প্রথম পৃথকীকৃত অংশকে লুব্রিকেটিং তেল বলে।
প্রশ্ন : ৩ হাইড্রোকার্বন কী?
উত্তর : হাইড্রোকার্বন হলো কার্বন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ।
প্রশ্ন : ৪ ক্র্যাকিং কাকে বলে?
উত্তর : বড় হাইড্রোকার্বন অণুকে ভেঙে অধিক ব্যবহার উপযোগী তুলনামূলক ক্ষুদ্র অণুতে পরিণত করাকে ক্র্যাকিং বলে।
প্রশ্ন : ৫ অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন কাকে বলে?
উত্তর : যেসব হাইড্রোকার্বনের কার্বন শিকলে অন্তত একটি দ্বিবন্ধন অথবা ত্রিবন্ধন থাকবে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজ্যতা হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ থাকবে, তাদেরকে অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বলে।
প্রশ্ন: ৬ পলিমারকরণ কী?
উত্তর : একই পদার্থের অসংখ্য অণু বা একাধিক পদার্থের অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহৎ অণু গঠন করার প্রক্রিয়াই হলো পলিমারকরণ।
প্রশ্ন: ৭ মনোমার কাকে বলে?
উত্তর : পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী অসংখ্য ক্ষুদ্র অণুর প্রত্যেকটিকে মনোমার বলে।
প্রশ্ন : ৮ Addition Polymerisation কী?
উত্তর : একই বিক্রিয়কের অসংখ্য অণু যুক্ত হয়ে পলিমার গঠন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় Addition Polymerisation ।
প্রশ্ন : ৯ ইনসুলিন পলিমারে কয়টি অ্যামাইনো এসিড থাকে?
উত্তর : ইনসুলিন পলিমারে ২২টি অ্যামাইনো এসিড থাকে।
প্রশ্ন :১০ LDPEকী?
উত্তর : কম ঘনত্ব, কম গলনাঙ্ক বিশিষ্ট ও কোমল প্রকৃতির পলিথিনকে খউচঊ বলে।
প্রশ্ন : ১১ HDPEকী?
উত্তর : অধিক ঘনত্ব ও গলনাংক বিশিষ্ট, কম তাপমাত্রা ও চাপে উৎপন্ন কম সংখ্যক শাখার দৃঢ় পলিথিনকে HDPE বলে।
প্রশ্ন : ১২ ঘনীভবন পলিমারকরণ কাকে বলে?
উত্তর : একাধিক বিক্রিয়কের অসংখ্য অণু যুক্ত হয়ে পলিমার গঠন করার প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন পলিমারকরণ বলে।
প্রশ্ন :১৩ থার্মোপ্লাস্টিক কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পলিমারকে সহজে স¤প্রসারিত, বাঁকানো এবং তাপে বারবার গলানো যায় সেই ধরনের পলিমারকে থার্মোপ্লাস্টিক বলে।
প্রশ্ন: ১৪ প্রভাবকীয় বিযোজন কাকে বলে?
উত্তর : ভাঙন বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি করার জন্য প্রভাবক ব্যবহার করা হলে তাকে প্রভাবকীয় বিযোজন বলে।
প্রশ্ন :১৫ PVC এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তর : PVC এর পূর্ণরূপ পলি-ভিনাইল ক্লোরাইড।
প্রশ্ন :১৬ ডেরলিন কী?
উত্তর : নিম্ন আণবিক ভরবিশিষ্ট অ্যালডিহাইডের বা মিথান্যালের জলীয় দ্রবণকে অতি নিম্ন চাপে উত্তপ্ত করলে যে শক্ত পলিমার উৎপন্ন হয় তাকে ডেরলিন বলে।
প্রশ্ন : ১৭ গ্যাসোলিন কাকে বলে?
উত্তর : পেট্রোলিয়ামের আংশিক পাতনের সময় অংশ কলামের ২১° -৭০° সে. তাপমাত্রার অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে গ্যাসোলিন বলে।
প্রশ্ন : ১৮ ন্যাপথা কাকে বলে?
উত্তর : পেট্রোলিয়ামের আংশিক পাতনের সময় অংশ কলামের ৭১°-১২০° সে. তাপমাত্রার অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে ন্যাপথা বলে।
প্রশ্ন : ১৯ তাপীয় ভাঙন কাকে বলে?
উত্তর : প্রভাবকের অনুপস্থিতিতে উচ্চ তাপ ও চাপে সম্পন্ন অ্যালকেনের ভাঙনকে বলা হয় তাপীয় ভাঙন।
প্রশ্ন : ২০প্রভাবকীয় হাইড্রোজেনেশন কাকে বলে?
উত্তর : ধাতব প্রভাবকের (ঘর) উপস্থিতিতে (১৮০°-২০০°) সে. তাপমাত্রায় অ্যালকিন হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যালকেন উৎপন্ন করাকে প্রভাবকীয় হাইড্রোজেনেশন বলে।
প্রশ্ন :২১ থার্মোসেটিং পলিমার কী?
উত্তর : যে পলিমারে কার্বন পরমাণুসমূহ শিকলের মধ্যে সমযোজী এবং একই সাথে পার্শ্ববর্তী শিকলের কার্বনের সাথে দৃঢ়ভাবে হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে তাকে থার্মোসেটিং পলিমার বলে।
প্রশ্ন : ২২ কোন জাতীয় জৈব যৌগের মধ্যে -OH মূলক থাকে?
উত্তর : অ্যালকোহল জাতীয় জৈব যৌগের মধ্যে -OH মূলক বর্তমান থাকে।
প্রশ্ন : ২৩ ‘- C = C -' ' যুক্ত একটি জৈব যৌগের নাম এবং গাঠনিত সংকেত লেখ।
উত্তর : ‘- C = C -' ' যুক্ত একটি জৈব যৌগ ইথিলিন-
প্রশ্ন :২৪ দুটি বেনজিন চক্রবিশিষ্ট একটি জৈব যৌগের নাম লেখ।
উত্তর : দুটি বেনজিন চক্রবিশিষ্ট একটি জৈব যৌগ ন্যাপথালিন।
প্রশ্ন:২৫ ফরম্যালডিহাইড যৌগে কী ধরনের কার্যকরী মূলক থাকে?
উত্তর : ফরম্যালডিহাইড যৌগে অ্যালডিহাইড (-CHO) কার্যকরী মূলক থাকে।
প্রশ্ন : ২৬ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এমন জৈব যৌগের নাম কর।
উত্তর : দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এমন জৈব যৌগ হলো : তেল, চর্বি, চিনি ও আটা।
প্রশ্ন :২৭ ইথেন অণুতে কার্বন-হাইড্রোজেন বন্ধন কী ধরনের?
উত্তর : ইথেন অণুতে কার্বন-কার্বন এবং কার্বন-হাইড্রোজেন বন্ধনগুলো একক বন্ধন।
প্রশ্ন :২৮ ফল পাকাতে ব্যবহৃত হয় এমন একটি জৈব যৌগের নাম লেখ।
উত্তর : ফল পাকাতে ইথিলিন ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন :২৯ প্যারাফিন শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : প্যারাফিন শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘আসক্তিহীন’।
প্রশ্ন: ৩০ পলিথিন ব্যাগ কোন মনোমার থেকে তৈরি হয়?
উত্তর : পলিথিন ব্যাগ ইথিলিন নামক মনোমার থেকে তৈরি হয়।
প্রশ্ন : ৩১ সাধারণত কী প্রক্রিয়ায় নাইলন তৈরি হয়?
উত্তর : সাধারণত পলিমারকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাইলন তৈরি হয়।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন : ১ প্লাস্টিককে নন-বায়োডিগ্রেডেবল পদার্থ বলা হয় কেন?
উত্তর : প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিযোজিত হয় না বলে প্লাস্টিককে নন-বায়োডিগ্রেডেবল পদার্থ বলা হয়। প্লাস্টিক দ্রব্যের অনেক সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধাও আছে। অধিকাংশ প্রাকৃতিক উপাদান মাটির ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিযোজিত হয় কিন্তু প্লাস্টিক কোনোকিছু দ্বারা কোনোভাবেই বিযোজিত হয় না। তাই একে নন-বায়োডিগ্রেডেবল বলা হয়।
প্রশ্ন : ২ ফ্যাটি এসিডসমূহের প্রস্তুতি কীভাবে করা হয়?
উত্তর : পরীক্ষাগারে অ্যালকোহলকে সালফিউরিক এসিডের উপস্থিতিতে পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট দ্বারা জারিত করে ফ্যাটি এসিড প্রস্তুত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে ইথানয়িক এসিড প্রস্তুতির সমীকরণ দেয়া হলো :
ইথানয়িক এসিড
প্রশ্ন :৩ নিম্নলিখিতগুলোর প্রত্যেকটির একটি করে উদাহরণ দাও :
i. একটি অ্যারোমেটিক যৌগ।
ii. একটি হাইড্রোকার্বন যা প্লাস্টিক প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
iii. একটি হাইড্রোকার্বন যা এস্টার গঠন করে।
উত্তর :
i. একটি অ্যারোমেটিক যৌগ : বেনজিন একটি অ্যারোমেটিক যৌগ। এর গঠন সংকেত নিম্নরূপ :
ii. একটি জৈব যৌগ যা প্লাস্টিক প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় :
4n(CH2 = CH2)® (-CH2 ¾ CH2 ¾ CH2 ¾
CH2 ¾ CH2 ¾ CH2¾ CH2 ¾ CH2-)n
পলিমার
iii. ইথানয়িক এসিড।
প্রশ্ন : ৪ প্লাস্টিক পোড়ালে কী কী ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হয়?
উত্তর : প্লাস্টিক পোড়ালে অনেক ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হয়। যেমন : পিভিসি পোড়ালে ঐঈষ গ্যাস নির্গত হয়। আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত পলিইউরেথেন প্লাস্টিক পোড়ালে CO ও HCN উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন :৫ ওষুধ ও খাদ্য শিল্প ব্যতীত অন্যান্য শিল্পে রেকটিফাইড এর সাথে মিথানল যোগ করা হয় কেন?
উত্তর : আমরা জানি, রেকটিফাইড এর সাথে মিথানল যোগ করা হলে মেথিলটেড স্পিরিট উৎপন্ন হয় যা বিষাক্ত। বিষাক্ত পদার্থ ওষুধ ও খাদ্য শিল্পে ব্যবহার করা উচিত নয়। তারপরও মিথানল যোগে বিষাক্ত করা হয় কারণ উৎপন্ন মেথিলেটেড স্পিরিট এর ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক। কাঠ ও ধাতুর তৈরি আসবাবপত্র বার্নিশ করতে, বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এবং আরো অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অপরিসীম। এজন্য, ওষুধ ও খাদ্য শিল্প ব্যতীত অন্যান্য শিল্পে রেকটিফাইড-এর সাথে মিথানল যোগ করা হয়।
প্রশ্ন: ৬ অ্যালকেনসমূহকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর : জ্বালানি হিসেবে আমরা মূলত সেই সকল যৌগ ব্যবহার করে থাকি যাদের দহনে অধিক পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে অ্যালকেন যৌগসমূহ যেমন : CH4, C2H6 -এর দহনে প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয় বলে এরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন :৭ অ্যালকিন রাসায়নিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় কেন?
উত্তর : হাইড্রোকার্বনের সক্রিয়তা নির্ভর করে কার্বন-কার্বন বন্ধন এর প্রকৃতির উপর। কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধনের ১ম বন্ধনটি শক্তিশালী। কিন্তু, দ্বিতীয় বন্ধনটি তুলনামূলক দুর্বল। দুর্বল হওয়ার কারণে এর সহজেই দহন, সংযোজন এবং পলিমারকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে সক্রিয়তা প্রদর্শন করে।
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url