এসএসসি পৌরনীতি ও নাগরিকতা সংক্ষিপ্ত সাজেশন-২০২৪ || SSC Civics and Citizenship Short Suggestion-2024

পৌরনীতি ও নাগরিকতা

Civics and Citizenship

আমাদের  ওয়েবসাইট “অর্ডিনেট আইটি.কম” ও  চ্যানেল ”অর্ডিনেট ক্লাসরুম  ”আপনাদের  স্বাগতম । 
আমরা একটি ভিন্ন প্রজন্মের স্বপ্ন দেখি। আমরা অধিক চিন্তাশীল প্রজন্ম গড়তে চাই, আলাদা মানুষ যাদের আগে চিন্তা করার অভ্যাস থাকবে। আমরা মানুষ কেন? কারণ আমরা চিন্তা করি, এবং সেই চিন্তাকে মুক্তচিন্তা হতে হবে। আর মুখস্থ করে আর যা ই হোক, বিজ্ঞান শিক্ষা হতে পারে না। আর সেই প্রচেষ্টারই অংশ হল আমাদের কনটেন্ট ও ভিডিও লেকচার। এই কনটেন্ট ও  ভিডিওগুলির উদ্দেশ্য হল প্রতিটি বিষয় এমনভাবে শেখানোর চেষ্টা করা যাতে আপনি বইয়ের বাইরেও অনেক কিছু ভাবতে পারেন। আর আপনি যখন চিন্তাশীল মানুষ হবেন, তখন আপনি নিজেই বুঝবেন এই দেশকে আলাদা করতে আমাদের কী করতে হবে, কতদূর যেতে হবে।



প্রথম অধ্যায় : পৌরনীতি ও নাগরিকতা

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১.পৌরনীতি কাকে বলে?

অথবা, 

পৌরনীতি বলতে কী বোঝ? 

উত্তর : পৌরনীতি বলতে সেই শাস্ত্রকে বোঝায়, যা নাগরিক ও নাগরিকতার সাথে সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের ধারাবাহিক পর্যালোচনা করে।

২.রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ই. এম. হোয়াইট প্রদত্ত পৌরনীতির সংজ্ঞা দাও। 

উত্তর: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ই. এম. হোয়াইট এর মতে-"পৌরনীতি হলো জ্ঞানের সেই মূল্যবান শাখা, যা নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। "

৩. ভূখণ্ড কাকে বলে?

নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা পরিবেষ্টিত স্থলভাগ, সমুদ্রসীমা ও আকাশসীমাকে ভূখণ্ড বলে।

8. সমাজ কী?

উত্তর : সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রে বসবাস করে।

৫. পরিবার কী?

উত্তর : বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক বা একাধিক পুরুষ ও মহিলা তাদের সন্তানাদি, পিতামাতা ও অন্যান্য পরিজন নিয়ে যে সংগঠন গড়ে ওঠে তাকে পরিবার বলে

৬.কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার কত প্রকার ?

উত্তর : কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার দুই প্রকার। যথা-পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবার ।

৭. পারিবারিক কাঠামো অনুযায়ী পরিবার কত প্রকার?

উত্তর : পারিবারিক কাঠামো অনুযায়ী পরিবার দুই প্রকার। যথা-একক ও যৌথ পরিবার।

৮. একক পরিবার কাকে বলে?

উত্তর : স্বামী-স্ত্রী ও তাদের অবিবাহিত সন্তান-সন্ততি নিয়ে গঠিত পরিবারকে একক পরিবার বলে।

৯. মাতৃতান্ত্রিক পরিবার কাকে বলে?

উত্তর : যে পরিবারে সন্তানেরা মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হয় এবং মা পরিবারের নেতৃত্ব দেন তাকে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে।

১০. পিতৃতান্ত্রিক পরিবার কাকে বলে?

উত্তর : যে পরিবারে সন্তানেরা পিতার পরিচয়ে পরিচিত হয় তাকে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে ।

১১. সামাজিক চুক্তি মতবাদের মূলকথা কী?

উত্তর : সামাজিক চুক্তি মতবাদের মূলকথা হলো- সমাজে বসবাসকারী জনগণের পারস্পরিক চুক্তির ফলে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। 

১২. পৌরনীতিকে কোন ধরনের বিজ্ঞান বলা হয়?

উত্তর : পৌরনীতিকে নাগরিকতাবিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয়। 

১৩. রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কী?

উত্তর : রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা হলো সার্বভৌমত্ব।

১৪. Civis শব্দের অর্থ কী?

 উত্তর : Civis শব্দের অর্থ নাগরিক।

১৫. পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?

উত্তর : পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics. 

১৬. রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?

উত্তর : রাষ্ট্রের উপাদান চারটি।

১৭. বিবাহের ভিত্তিতে পরিবার কয় প্রকার? 

উত্তর : বিবাহের ভিত্তিতে পরিবার তিন প্রকার ।

১৮. বহুপতি পরিবার কাকে বলে?

উত্তর : পরিবারে একজন স্ত্রীর একাধিক স্বামী থাকাকে বহুপতি পরিবার বলে।

১৯. রাষ্ট্র কী? 

উত্তর : যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সংগঠিত সরকার, জনসমষ্টি এবং সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে তাই হলো রাষ্ট্র।

২০. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ কয়টি?

উত্তর : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ ৪টি।

২১. পরিবার সম্পর্কে ম্যাকাইভার কী বলেছেন?

অথবা, 

ম্যাকাইভার প্রদত্ত পরিবারের সংজ্ঞা দাও ।

উত্তর : ম্যাকাইভার প্রদত্ত পরিবারের সংজ্ঞাটি হলো লালন-পারনের জন্য সংগঠিত ক্ষুদ্র বর্গকে পরিবার বলে।

২২. ঐশী মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্র কী ধরনের?

উত্তর : ঐশী মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্র বিপদজনক, অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক।

২৩. পরিবার কী ধরনের প্রতিষ্ঠান?

উত্তর : পরিবার একটি ক্ষুদ্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

২৪.কোন মতবাদে রাষ্ট্রের উৎপত্তির সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ।

উত্তর : ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদে রাষ্ট্রের উৎপত্তির সঠিক

২৫. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সবচেয়ে পুরাতন মতবাদ কোনটি?

উত্তর : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সবচেয়ে পুরাতন মতবাদ হলো ঐশী মতবাদ।

২৬. নগররাষ্ট্রে কাদের নাগরিক বলা হতো?

উত্তর : নগররাষ্ট্রে যারা রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করত তাদের নাগরিক বলা হতো।


 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. পরিবারে শিশুর রাজনৈতিক শিক্ষা শুরু হয় কীভাবে? ব্যাখ্যা কর ।

অথবা,

 পরিবারে শিশুর রাজনৈতিক কাজ কী? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : যে সকল শিক্ষা একজন মানুষকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সহায়তা করে সে সব শিক্ষা দেওয়া পরিবারের রাজনৈতিক কাজের অন্তর্ভুক্ত।পরিবারে সাধারণত মা-বাবা কিংবা বড় ভাই-বোন অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন। ছোটরা তাদের আদেশ-নির্দেশ অনুসরণ বা মান্য করে চলে। বড়রাও ছোটদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন। পরিবারের বড়রা ছোটদেরকে বুদ্ধি, বিবেক ও আত্মসংযমের শিক্ষা দেন, যা তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। আবার পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় দেশ ও বিদেশের - রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রাজনীতি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠে। এভাবে পারিবারিক শিক্ষা ও নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে পরিবারেই একজন শিশুর রাজনৈতিক শিক্ষা শুরু হয়।

প্রশ্ন-২.রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত প্রাচীন মতবাদটি বর্ণনা কর। 

 উত্তর : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত মতবাদসমূহের মধ্যে ঐশী মতবাদ সবচেয়ে পুরাতন মতবাদ। এ মতবাদের মৌলিক ধারণা এমন যে, বিধাতা বা স্রষ্টা রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন এবং রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনি শাসক প্রেরণ করেছেন। শাসক তাঁর প্রতিনিধি এবং তিনি তাঁর কাজের জন্য একমাত্র স্রষ্টা যা বিধাতার নিকট দায়ী; কিন্তু জনগণের নিকট নয়।

প্রশ্ন-৩. 'খুলনা' রাষ্ট্র নয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : রাষ্ট্র হলো একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। একটি রাষ্ট্রের চারটি উপাদান অপরিহার্য। যেমন-

  • ১.জনসমষ্টি;
  • ২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড; 
  • ৩. সরকার 
  • ৪. সার্বভৌমত্ব। 

এ উপাদানগুলোর কোনোটি যদি কোনো অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান না থাকে,তবে তাকে রাষ্ট্র বলা যাবে না। সে অর্থে খুলনা রাষ্ট্র নয়। কারণ খুলনার জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সরকার ব্যবস্থা থাকলেও সার্বভৌমত্ব নেই। আর সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা অপরিহার্য উপাদান এবং প্রধান শর্ত। তাই খুলনা রাষ্ট্র নয়। 

প্রশ্ন-৪. "পরিবারকে চিরন্তন বিদ্যালয় বলা হয়”-ব্যাখ্যা কর।

অথবা, 

শাশ্বত বিদ্যালয় বলা হয় কাকে? ব্যাখ্যা কর।

অথবা, 

“শিশুর জীবনে প্রথম বিদ্যালয় হলো পরিবার”- ব্যাখ্যা কর। 

 উত্তর : শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু পরিবারে হয় বলে পরিবারকে চিরন্তন বা শাশ্বত বিদ্যালয় বলা হয়। শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্বেই পরিবারে বর্ণমালার সাথে পরিচিত হয়। তাছাড়া বাবা-মা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের পারস্পরিক সহায়তায় সততা, শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলির শিক্ষালাভের সুযোগ পরিবারেই ঘটে থাকে। এভাবে পরিবারে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বলে একে চিরন্তন বিদ্যালয় বলা হয়।

প্রশ্ন-৫. পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ বলতে কী বোঝায়?

অথবা, 

পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : পরিবারের যে কাজগুলোর মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় সেগুলোই পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ। পরিবার তার সদস্যদের মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে মানসিক চাহিদা পূরণ করে। আবার নিজের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে ভাগাভাগি করে প্রশান্তি লাভ করা যায়। অন্যদিকে পরিবারের কোনো সদস্য সমস্যায় পড়লে বাবা-মা, ভাই-বোন ও অন্যান্য পরিজনের সাথে আলাপ- আলোচনা করে তার সমাধান করা যায়।এ ধরনের আলোচনা মানসিক ক্লান্তি মুছে দিতে সাহায্য করে। তাছাড়া পরিবার থেকে শিশু উদারতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণগুলো শিক্ষা লাভ করে, যার ফলে তাদের মানসিক দিক সমৃদ্ধ হয়।

প্রশ্ন-৬. মানুষ সমাজে বাস করে কেন? ব্যাখ্যা কর । 

উত্তর : মানুষ সামাজিক জীব। নিজেদের প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে প্রাচীনকালে মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে সমাজ গড়ে তোলে। কারণ, একা কোনো প্রয়োজন পূরণ করা মানুষের সাধ্যে ছিল না। তাছাড়া সামাজিক পরিবেশ মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটায়। এসব কারণে মানুষ সমাজে বসবাস করে।

প্রশ্ন-৭. একটি রাষ্ট্র কীভাবে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপযুক্ত থাকতে পারে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : একটি রাষ্ট্র তার সার্বভৌম ক্ষমতাবলে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ মুক্ত থাকতে পারে। রাষ্ট্র গঠনের চারটি উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সার্বভৌমত্ব । এটি রাষ্ট্রের চরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এর দুটি দিকের মধ্যে একটি হলো বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব। রাষ্ট্র তার বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব দ্বারা সকল প্রকার বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে দেশকে মুক্ত রাখে। তাই চাইলেই অন্য কোনো রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

প্রশ্ন-৮.সার্বভৌমত্বকে রাষ্ট্র গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

অথবা,

 সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন?

অথবা,

 রাষ্ট্র গঠনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ উপাদান কোনটি? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : সার্বভৌম শক্তির ওপর রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নির্ভর করে বলে রাষ্ট্র গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলা হয়।  সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের চরম, পরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এর দুটি দিক রয়েছে, বা চেয়ে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব।অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের সাহায্যে - স্বয়ং দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ জারির মাধ্যমে ব্যক্তি ও সংস্থার উপ প্ররণ কর্তৃত্ব করে। অন্যদিকে, বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র বহিঃশক্তির নিে থেকে দেশকে মুক্ত রাখে।

প্রশ্ন-৯. সরকার বলতে কী বোঝায় ?

 উত্তর: সরকার বলতে সেই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যার মাধ্যমে রাষ্ট্রে দান শাসন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি পরিচালিত হয়। সরকারের মাধ্যমেই একটি দেশের জনগণ তথা রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশিত ও তবে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। সরকার শব্দটি সংকীর্ণ ও ব্যাপক দুটি অর্থে ব্যবহৃ ষ্টি হয়। সংকীর্ণ অর্থে সরকার বলতে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের সাথে সাহি সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বোঝায়। আর ব্যাপক অর্থে সরকার বলতে দেশের সব নাগরিককে বোঝায়। সব রাষ্ট্রে সরকারের মৌলিক গঠন একই রকম হলেও ১৮/ রাষ্ট্রভেদে এর রূপ ভিন্ন হয়। যেমন- বাংলাদেশে সংসনীয় সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্যমান।

প্রশ্ন-১০.সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর। 

অথবা, 

সমাজের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য বুঝিয়ে লিখ ।

 উত্তর সমাজের সাতে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তায় । সমাজ মানুষের বহুমুখী প্রয়োজন মিটিয়ে তাকে উন্নত ও নিরাপদ জীবন দান ম্যাগ করে। সমাজের মধ্যেই মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের ভ্রলে বিকাশ ঘটে। সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের আদর্শ স্থান মনে করা হয়। মানুষ নিজের প্রয়োজনেই সমাজ গড়ে তোলে। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল যথ বলেছেন, ‘মানুষ স্বভাবগত সামাজিক জীব, যে সমাজে বাস করে না, সে হয় পশু, না হয় দেবতা'। 

তাই বলা যায়, সমাজের সাথে সত্যিই মানুষের অবিচ্ছেদ্য যায় সম্পর্ক বিদ্যমান ।

প্রশ্ন-১১.সমাজ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : সমাজ বলতে একটি সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা কোনো অভিন্ন প্যর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্র হয়। সমাজের এ ধারণাটি বিশ্লেষণ করলে এর নো প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। 
এগুলো হচ্ছে-
  • ক.বহুলোকের সংঘবদ্ধভাবে বসবাস এবং 
  • খ. ঐ সংঘবদ্ধতার পেছনে থাকবে অভিন্ন উদ্দেশ্য। 
সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের আদর্শ স্থান মনে করে বলে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সমাজ গড়ে তোলে। আর সমাজজীবন থেকেই মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে।

প্রশ্ন-১২. মানুষের জীবনে সমাজের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর: সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত হয়। সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানুষকে নিয়ে সমাজ পড়ে আর সমাজ মানুষের বহুমুখী প্রয়োজন মিটিয়ে উন্নত ও নিরাপদ সামাজিক জীবন দান করে। সমাজের মধ্যেই মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের আদর্শ স্থান মনে করে বলে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সমাজ গড়ে তোলে। 

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল যথার্থই বলেছেন, মানুষ স্বভাবগত সামাজিক জীব, যে সমাজে বাস করে না, সে হয় পশু, না হয় দেবতা। বস্তুত মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমাজে বসবাস করে এবং সামাজিক পরিবেশেই সে নিজেকে বিকশিত করে।

প্রশ্ন-১৩. মানুষ সামাজিক জীব – ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : মানুষকে নিয়েই সমাজ গড়ে ওঠে এবং মানুষ ও সমাজ ছাড়া বসবাস করতে পারে না, তাই মানুষ সামাজিক জীব।সমাজের মধ্যেই মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের  আদর্শ স্থান মনে করে বলে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই সমাজ গড়ে তোলে। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল যথার্থই বলেছেন, মানুষ স্বভাবত সামাজিক জীব, যে সমাজে বাস করে না, সে হয় পশু না। হয় দেবতা। বস্তুত মানুষ জন্ম থেকে

 মৃত্যু পর্যন্ত সমাজে বসবাস করে এবং সামাজিক পরিবেশেই নিজেকে বিকশিত করে। আর এ জন্যই মানুষকে সামাজিক জীব বলা হয়।

প্রশ্ন-১৪.রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মতবাদের মূল বক্তব্য ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য মতবাদ হলো ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ। ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদের মূল বক্তব্য হলো রাষ্ট্র কোনো একটি বিশেষ কারণে হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। বরং দীর্ঘদিনের বিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরে বিভিন্ন শক্তি ও উপাদান ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে হতে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। যেসব উপাদানের কার্যকারিতার ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে সেগুলো হলো – 

  • সংস্কৃতি, 
  • রক্ত ও ধর্মের বন্ধন, 
  • যুদ্ধবিগ্রহ, 
  • অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চেতনা এবং 
  • কার্যকলাপ ইত্যাদি।

প্রশ্ন-১৫. পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান—ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : একটি শিশুকে উপযুক্ত শিক্ষাদানের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ববান এবং সামাজিক মানুষে পরিণত করার ক্ষেত্রে পরিবার সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে বলে এটি একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান।মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনযাপনের মূল ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। পরিবারকে বাদ দিয়ে কোনো মানুষের পক্ষে সুস্থ ও সুন্দর সামাজিক জীবন গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। সমাজে চলাফেরার নীতি, সামাজিক ধ্যান-ধারণা প্রভৃতির শিক্ষা শিশুরা পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে। এমনকি রাজনৈতিক দীক্ষা গ্রহণও পরিবারের মধ্যে আরম্ভ হয়। আর উক্ত শিক্ষা সমাজে সঠিকভাবে চলতে একজন মানুষকে সাহায্য করে। তাই পরিবারকে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় ।

প্রশ্ন-১৬. ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা' বিষয়টি আমাদের পাঠ করা প্রয়োজন কেন?

উত্তর : পৌরনীতি ও নাগরিকতা নাগরিকের সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং আদর্শ নাগরিক জীবনের দিক-নির্দেশনা দেয়। তাই পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়টি আমাদের পাঠ করা প্রয়োজন ।পৌরনীতি ও নাগরিকতা নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করে। তাছাড়া সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য, সুনাগরিকতা অর্জনের প্রতিবন্ধকতা এবং তা দূর করার উপায় এখানে আলোচনা করা হয়। তাই অধিকার ও কর্তব্য সচেতন সুনাগরিক হয়ে রাষ্ট্রীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়টি পাঠ করা প্রয়োজন ।

প্রশ্ন-১৭. সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বাস্তবায়নকারী উপাদান- ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর : সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বাস্তবায়নকারী উপাদান, কারণ সরকার ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না । রাষ্ট্র গঠনের চারটি উপাদানের মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হলো সরকার, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলি সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে সরকার তিন ধরনের কাজ সম্পাদন করে। যেমন- আইন প্রণয়ন, শাসন পরিচালনা ও বিচার সংক্রান্ত। এ তিন ধরনের কাজ সম্পাদনের জন্য সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। যথা-

  • আইন, 
  • শাসন ও 
  • বিচার বিভাগ।

 এ তিনটি বিভাগের মাধ্যমে সরকার রাষ্ট্রের কর্মসূচি ও নীতিমালা বাস্তবায়ন করে।

চতুর্থ অধ্যায় : রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১. রাষ্ট্র কাকে বলে?

উত্তর : রাষ্ট্র হলো বহুসংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত এমন এক সমাজ যারা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী, সুসংগঠিত সরকারের প্রতি "স্বভাবজাতভাবে আনুগত্যশীল এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত।

২.কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কাকে বলে?

উত্তর : যে রাষ্ট্র জনগণের দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণসহ সর্বোচ্চ সার্বিক কল্যাণের প্রচেষ্টা চালায় তাকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে।

৩. পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কাকে বলে?

উত্তর : পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হলো সেই রাষ্ট্র যেখানে সম্পত্তির ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকার করা হয়।

৪. সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাকে বলে?

উত্তর : যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় উৎপাদনের সকল উপাদান (ভূমি, শ্রম, মূলধন, ব্যবস্থাপনা) রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হয়, তাকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে।

৫. ডিকটেটর শব্দের অর্থ কী?

উত্তর : ডিকটেটর শব্দের অর্থ একনায়ক ।

৬.ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র কয় ধরনের? 

উত্তর : ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র, দুই ধরনের।

৭.রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি? 

উত্তর : রাষ্ট্রের উপাদান চারটি 

৮.গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাকে বলে?

উত্তর : যে শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা রাষ্ট্রের সকল সদস্য তথ্য জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে, তাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে।

৯. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র/সরকার কাকে বলে?

 উত্তর : যে রাষ্ট্রে সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয় তাকে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র/সরকার বলে।

১০. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাকে বলে?

উত্তর : যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র, প্রদেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে।

১১. সংসদীয় সরকারের প্রধান কে?

উত্তর : সংসদীয় সরকারের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী।

১২. গণতন্ত্রের প্রাণ কোনটি?

উত্তর : আইনের শাসন হলো গণতন্ত্রের প্রাণ ।

১৩. গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র কী?

উত্তর : গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলো-সাম্য,

১৪. একনায়কতন্ত্র কী? 

উত্তর : একনায়কতন্ত্র এক ধরনের চরম স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা। এ শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের শাসন জনগণের হাতে না থেকে এক স্বেচ্ছাচারী শাসক বা শ্রেণির হাতে ন্যস্ত থাকে এবং দলের নেতাই সর্বসময় ক্ষমতার অধিকারী হন।

১৫. একনায়কতন্ত্রের মূল আদর্শ কী?

উত্তর : একনায়কতন্ত্রের মূল আদর্শ হলো-'এক জাতি, এক দেশ, এক নেতা। 

১৬. আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকার কত প্রকার?

উত্তর : আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকার মূলত দুই প্রকার।

১৭. কোন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী?

উত্তর : রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

১৮. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কোন ধরনের রাষ্ট্র গড়ে ওঠে?

উত্তর : উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।

১৯. গণতন্ত্রে কীভাবে সরকার পরিবর্তন হয়?

উত্তর : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়।

২০. নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রে সর্বময় ক্ষমতা কার হাতে থাকে?

উত্তর : নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রে সর্বময় ক্ষমতা রাজা বা রানির হাতে থাকে। 

২১. কে সংসদীয় সরকারের প্রধান?

উত্তর : প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় সরকারের প্রধান।

২২. একনায়কতন্ত্র কোন ধরনের শাসনব্যবস্থা?

উত্তর : একনায়কতন্ত্র এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা।

২৩. গণতন্ত্রের বাহন কী?

উত্তর : গণতন্ত্রের বাহন হচ্ছে নির্বাচন।

২৪. যুক্তরাষ্ট্র কাকে বলে?

উত্তর : যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় একাধিক রাষ্ট্র ও প্রদেশ মিলিত হয়ে একটি রাষ্ট্র বেি গঠন করে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বলে।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. গণতন্ত্রে নাগরিকগণ কীভাবে প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়? ব্যাখ্যা কর 

উত্তর : গণতন্ত্র মানে হলো জনগণের শাসন। যে শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা সমাজের সকল সদস্য তথা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে তাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে।গণতন্ত্র জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণার্থে পরিচালিত একটি শাসনব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ থাকে। এতে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তিত হয়। এধাধিক রাজনৈতিক দল থাকে, সকলের স্বার্থরক্ষার সুযোগ থাকে এবং নাগরিকের অধিকার ও আইনের শাসনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

 আর এভাবেই গণতন্ত্রে নাগরিকগণ প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকে।

প্রশ্ন-২. গণতন্ত্র হলো সকলের মঙ্গলের জন্য পরিচালিত সরকারব্যবস্থা- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : গণতন্ত্র হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে শাসনকার্যে জনগণের সকলে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকলে মিলে সরকার গঠন করে। এটি জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণার্থে পরিচালিত। এখানে মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ থাকে। এ শাসনব্যবস্থায় সকলের স্বার্থরক্ষার সুযোগ থাকে এবং নাগরিকের অধিকার ও আইনের শাসনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মূলত এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে বলা যায়, 

গণতন্ত্র হলো সকলের মঙ্গলের জন্য পরিচালিত সরকারব্যবস্থা। 

প্রশ্ন-৩. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কী বোঝ?

উত্তর : যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সংবিধানের মাধ্যমে  কেন্দ্র, প্রদেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। কতকগুলো ক্ষুদ্র অঞ্চল বা প্রদেশ একত্রিত হয়ে একটি বড় রাষ্ট্র গঠন করে বলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতিটি শক্তিশালী হয়। বিশ্বের উ সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার উন্নত। উদাহরণস্বরূপ ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতি।

প্রশ্ন-৪. বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার উপযোগী- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হলা যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র, প্রদেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়। এ সরকার ব্যবস্থা বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য খুবই উপযোগী।বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক দিয়ে বড় হয়। তাই একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা কঠিন হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন হয়। ফলে সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সহজ হয়।

প্রশ্ন-৫. একনায়কতন্ত্র বিশ্বশান্তির বিরোধী। ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : একনায়কতন্ত্র একটি স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা বলে এটি বিশ্বশান্তির বিরোধী। একনায়কতনের উগ্রজাতীয়তাবোধ ধারণ ও লালন করা হয়। ক্ষমতার লোভ একনায়কের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব সৃষ্টি করে। শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে একনায়ক তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির চেষ্টা করে। বিংশ শতাব্দির জার্মানির এক নায়ক এডলফ হিটলার এ ধরনের মনোভাব পোষণ করে সারা বিশ্বে ধ্বংস ডেকে এনেছিলেন। একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব এভাবে আন্তর্জাতিক শাস্তির পরিপন্থি হয়ে থাকে বলে বর্তমান বিশ্বে এ ব্যবস্থাকে সমর্থন করে না।

প্রশ্ন-৬. একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিপ্লবের ভয় থাকে কেন- ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই একনায়কতন্ত্র একটি স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা। একনায়কতন্ত্রে উগ্রজাতীয়তাবে । থাকে। শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে একনায়ক তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির চেষ্টা করে। ধারণ ও লালন করা হয়। শাসন ক্ষমতার একজন বা একনায়কের হাতে কেন্দ্রিয় অভ্যন্তরীণ বিরোধীতা ও গণঅসন্তোষের কারণে সাধারণত একনায়ক বলে সর্বদা বিপ্লবের ভয় থাকে। বেশিদিন টিকতে পারে না।

প্রশ্ন-৭. একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী কেন- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শাসনক্ষমতা একজন স্বেচ্ছাচারী "বা শ্রেণির হাতে ন্যস্ত থাকে বলে জনগণ প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী নয়। একনায়কতন্ত্র এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা। এতে নেতাই দলের সর্বম ক্ষমতার অধিকারী । তাকে বলা হয় এক নায়ক। তাকে সহায়তা করার জন্য অ নামে মাত্র মন্ত্রী বা উদেষ্টা পরিষদ থাকে। কিন্তু তারা শাসকের আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলে। এক নায়কের আদেশই আইন। এখানে জনগণের মত প্রকাশের সুযোগ নেই। একনায়ক তার ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে। তাই একনায়কতন্ত্রে জনগণ প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী নয়।

প্রশ্ন-৮. নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বলতে কী বাঝায়?

উত্তর : যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজা বা রানি রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তাকে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বলে। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রে জনগণের শাসনকার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না। কেননা - উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা বা রানি নির্ধারিত হয় এবং তারাই সর্বময় কর্তৃত্বের পর অধিকারী হয়। বর্তমান বিশ্বে এ ধরনের রাষ্ট্রের সংখ্যা নগণ্য। সৌদি আরবে এটি নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে।

প্রশ্ন-৯. গণতন্ত্র পুরো বিশ্বে জনপ্রিয় হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।

ত্তর : গণতন্ত্র বর্তমান যুগে প্রচলিত শাসনব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট এবং লা সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা। এটি জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বার "জনগণের মত প্রকাশ ও সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ থাকে। এতে  নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তিত হয়। সকলের জন্য স্বার্থরক্ষার সুযোগ থাকে এবং নাগরিকের অধিকার ও আইনের শাসনের স্বীকৃতি কে দেওয়া হয়। এ সকল কারণে গণতন্ত্র পুরো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

প্রশ্ন-১০. কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : যে রাষ্ট্র জনগণের দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে, তাকে বলা হয় কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।এ ধরনের রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করে, বেকার ভাতা প্রদান করে, বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তাছাড়া র্যর কৃষক, শ্রমিক ও মজুরদের স্বার্থরক্ষার জন্য ন্যূনতম মজুরির ব্যবস্থা করে তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে। কানাডা, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নরওয়ে ইত্যাদি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদাহরণ।

 প্রশ্ন-১১. সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা কী? ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর : যে সরকারব্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং শাসন বিভাগের স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা আইন বিভাগের ওপর নির্ভরশীল | তাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকার বলে। এতে মন্ত্রিসভার হাতে দেশের শাসন ক্ষমতা থাকে। সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় একজন নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। প্রধানমন্ত্রী হলেন মন্ত্রিসভার নেতা বা সরকারপ্রধান।

ষষ্ঠ অধ্যায় : বাংলাদেশের সরকাব্যবস্থা

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১.অভিশংসন কী?

উত্তর : সংবিধান লঙ্ঘন বা কোনো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত করে দায়িত্ব ব থেকে অপসারণ করাকে অভিশংসন বলা হয়।

২.কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু কোনটি?

উত্তর ; সচিবালয় হলো কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু।

৩. সুপ্রিম কোর্ট কী?

উত্তর : বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালতের নাম হলো সুপ্রিম কোর্ট। 

৪. রাষ্ট্রের হূৎপিণ্ড বলা হয় কোনটিকে?

অথবা, 

রাষ্ট্রের হূৎপিণ্ড কাকে বলে?

উত্তর : প্রশাসনকে রাষ্ট্রের হূৎপিণ্ড বলা হয়।

৫. বাংলাদেশের আইনসভার নাম কী?

উত্তর : বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ।

৬. বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নাম কী?

উত্তর : বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নাম সুপ্রিম কোর্ট।

৭. জেলার মূলস্তম্ভ কে?

উত্তর : জেলা প্রশাসক জেলার 'মূল স্তম্ভ'।

৮. গ্রাম আদালত কাকে বলে?

উত্তর : বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সর্বনিম্ন আদালত হলো গ্রাম আদালত।

৯.বাংলাদেশের সরকার প্রধান কে?

উত্তর : প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

১০. সরকারের অঙ্গ কয়টি?

উত্তর : সরকারের অঙ্গ তিনটি।

১১. বাংলাদেশে কোন ধরনের সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান?

উত্তর : বর্তমানে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান।

১২. সচিবালয় কী?

উত্তর : সচিবালয় কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। দেশের সকল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এখানে গৃহীত হয়।

১৩. জাতীয় সংসদের সভাপতি কী?

উত্তর : জাতীয় সংসদের সভাপতি মাননীয় স্পিকার।

১৪. কে জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন?

উত্তর : রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন।

১৫. কে রাষ্ট্রের সকল সম্মানের উৎস?

উত্তর : রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সকল সম্মানের উৎস।

১৬. কে মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন?

উত্তর : প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন।

১৭. রাষ্ট্রের তহবিল বা অর্থের রক্ষাকারী কে?

উত্তর : রাষ্ট্রের তহবিল বা অর্থের রক্ষাকারী জাতীয় সংসদ।

১৮. সংবিধান সংশোধন করতে সংসদের মোট কত সদস্যের ভোটের দরকার হয়? 

উত্তর : সংবিধান সংশোধন করতে সংসদের মোট দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের দরকার হয়।

১৯. কে মন্ত্রিপরিষদের কেন্দ্রবিন্দু?

উত্তর : প্রধানমন্ত্রী হলেন মন্ত্রিপরিষদের কেন্দ্রবিন্দু।

২০. প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল কত বছর?

উত্তর : প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল ৫ বছর।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. অভিশংসন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার ক্ষমতা হলো অভিশংসন । তীয় সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন বা অপসারণ করতে পারে। সংবিধান লঙ্ঘন, গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ, দৈহিক ও মানসিক অসুস্থতা ও অক্ষমতার জন্য জাতীয় রাষ্ট্রপতি সংসদ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে। প্রয়োজনে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও ন্যায়পালকেও অপসারণ করার ক্ষমতা সংসদের রয়েছে।

প্রশ্ন-২. রাষ্ট্রের হূৎপিণ্ড বলা হয় কাকে? ব্যাখ্যা কর।

অথবা, প্রশাসনকে রাষ্ট্রের হূৎপিণ্ড বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : প্রশাসনকে রাষ্ট্রের হৃদপিণ্ড বলা হয়। রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব প্রশাসনের। রাষ্ট্রের ভিতরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সুষ্ঠু প্রশাসনের বিকল্প নেই। তাই প্রশাসনকে রাষ্ট্রের হূৎপিণ্ড বলা হয়।

প্রশ্ন-৩. আইনসভা কীভাবে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : বাংলাদেশের আইনসভা হচ্ছে জাতীয় সংসদ। সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যগণ সংসদের নিকট দায়ী থাকেন। কোনো কারণে সংসদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা আনলে মন্ত্রিসভা ভেঙে যায়। মুলতবি প্রস্তাব,নিন্দা প্রস্তাব, অনাস্থা প্রস্তাব, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, সংসদীয় বিভিন্ন কমিটি ও সংসদের সাধারণ আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সংসদ অর্থাৎ আইনসভা শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

প্রশ্ন-৪. সচিবালয়কে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে কেন্দ্রীয় প্রশাসন তথা সচিবালয়। দেশের সকল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সচিবালয়েই গৃহীত হয়। এসব গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাঠ প্রশাসন কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করে। যেহেতু সচিবালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে থেকে সকল প্রশাসনিক কাজ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করে, তাই একে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয়। 

প্রশ্ন-৫. 'প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার মধ্যমণি - ব্যাখ্যা কর।

অথবা, 

প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা বা সরকারের স্তম্ভ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : প্রধানমন্ত্রী একই সাথে সংসদের নেতা, মন্ত্রিসভার নেতা এবং সরকারপ্রধান। তাকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত ও এর কাজ পরিচালিত হয় বিধায় তাকে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার মধ্যমণি বলা হয়। তার নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রীরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। তিনি পদত্যাগ করলে সকল মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করেই রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয় বিধায় প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার মধ্যমণি বা মন্ত্রীসভাৱ স্তম্ভ বলা হয় । 

প্রশ্ন-৬. গ্রাম আদালত কীভাবে গঠিত হয়? ব্যাখ্যা কর।

অথবা, 

গ্রাম আদালত বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সর্বনিম্ন আদালত হলো গ্রাম আদালত । গ্রাম আদালত ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিবাদমান দুই গ্রুপের দুইজন করে মোট পাঁচজন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয়। যেসব মামলা স্থানীয় পর্যায়ে বিচার করা সম্ভব, মূলত সেগুলোর বিচার এখানে "করা হয়। ছোটখাটো ফৌজদারি মামলার বিচারও এ আদালতে করা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন-৭. সংসদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা কেন?

উত্তর : প্রধানমন্ত্রী সংসদের নেতা। তিনি যেরূপ মনে করবেন সেরূপ সংখ্যক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। মন্ত্রিসভার নেতা হিসেবে তিনি মন্ত্রীদের মাঝে পদ বণ্টন ও মন্ত্রিসভার সভাপতিত্ব করবেন। তাঁর নেতৃত্বে সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে সংসদ ভেঙে যায়। এ সকল কারণে সংসদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সর্বেসর্বা।

 প্রশ্ন-৮. রাষ্ট্রপতির আইন সংক্রান্ত কাজ বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : আইন প্রণয়নের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সম্মতিদানসহ কিছু কাজ করেন যাকে রাষ্ট্রপতির আইন সংক্রান্ত কাজ বলা হয় ।রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন আহব্বান করতে, স্থগিত রাখতে ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সংসসদ ভেঙে দিতে পারেন। তিনি সংসদে ভাষণ দিতে ও রাণী পাঠাতে পারেন। সংসদ কর্তৃক গৃহীত কোনো বিলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দান করলে বা সম্মতি দান করেছেন বলে গণ্য হলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। এগুলোই রাষ্ট্রপতির আইন সংক্রান্ত কাজ।

প্রশ্ন-৯. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?

উত্তর : বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু ১০ বছরের বেশি তিনি তার পদে বহাল থাকতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে আদালতে কোনো অভিযোগ আনা যায় না। তবে সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর কোনো অভিযোগে জাতীয় সংসদ অভিশংসনের মাধ্যমে তাকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অপসারণ করতে পারে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য কোনো সাংসদকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক এবং বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে। 

প্রশ্ন-১০. আইনসভা কীভাবে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে? ব্যাখ্যা কর । 

অথবা, 

জাতীয় সংসদ কীভাবে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে? ব্যাখ্যা 

উত্তর : সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় শাসন বিভাগ সংসদ বা আইনসভার নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে আইনসভা বিভিন্নভাবে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। শাসন বিভাগ তার কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকে। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীসভার সদস্যরা তাদের কাজের জন্য ব্যক্তিগত এবং যৌথভাবে জাতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। আইনসভা তথা সংসদ মূলতুবি প্রস্তাব, নিন্দা প্রস্তাব, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, সংসদীয় বিভিন্ন কমিটি ও সংসদে সাধারণ আলোচনার মাধ্যমে শাসন বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

প্রশ্ন-১১. জেলা প্রশাসককে জেলার মূলমন্ত্র বা মূল স্তম্ভ বলা হয় কেন?

উত্তর : জেলা প্রশাসক জেলার সব কাজের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় তাকে জেলার মূল স্তম্ভ' বলা হয় । জেলা প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন জেলা প্রশাসক। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন অভিজ্ঞ সদস্য। জেলার প্রশাসনিক কাজ, রাজস্ব সংক্রান্ত ও আর্থিক কাজ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত কাজ, উন্নয়নমূলক কাজ, স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত কাজ, জেলার সংবাদপত্র ও প্রকাশনা বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কাজ জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে জেলা প্রশাসক করে থাকেন। এজন্য জেলা প্রশাসককে জেলার মূলমন্ত্র বা মূল স্তম্ভ বলা হয় ।

সপ্তম অধ্যায় : গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১.নির্বাচন কাকে বলে?

উত্তর : প্রতিনিধি বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বলে।

২.পরোক্ষ নির্বাচন কী?

উত্তর : যে পদ্ধতিতে নির্বাচকমণ্ডলী চূড়ান্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট প্রদানের মাধ্যমে একটি মধ্যবর্তী শ্রেণিকে নির্বাচন করে তাকে পরোক্ষ নির্বাচন বলা হয়।

৩. প্রত্যক্ষ নির্বাচন কাকে বলে?

উত্তর ; জনগণ যখন সরাসরি ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে তখন তাকে প্রত্যক্ষ নির্বাচন বলা হয়।

৪.নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে বর্তমানে সর্বত্র গৃহীত নীতি কী?

উত্তর : নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে বর্তমানে সর্বত্র গৃহীত নীতি হলো- 'এক ব্যক্তি, এক ভোট।”

৫.নির্বাচন কমিশনারদের কে নিয়োগ করেন?

উত্তর : নির্বাচন কমিশনারদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন ।

৬. সংবিধানের কত নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তর : সংবিধানের ১১৮ নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

৭. গণতান্ত্রিক সরকার কী?

উত্তর : জনগণের ভোটের মাধ্যমে পঠিত সরকারই হচ্ছে গণতান্ত্রিক

৮. রাজনৈতিক দল কাকে বলে?

উত্তর : রাজনৈতিক দল হচ্ছে একটি দেশের জনগোষ্ঠীর সেই অংশ যারা একটি আদর্শ বা কিছু নীতি বা কর্মসূচির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধ সংগঠিত হয়।

৯. নির্বাচন কত প্রকার?

উত্তর : নির্বাচন দুই প্রকার।

১০. ভোটদান পদ্ধতি কত প্রকার?

উত্তর : ভোটদান পদ্ধতি দুই প্রকার।

১১. রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ কী?

উত্তর : রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ হচ্ছে সরকার গঠন করা পর উন্নয়ন একাডেমী পাব। 

১২. বর্তমানে বাংলাদেশে কোন ধরনের সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান? 

উত্তর : : বর্তমানে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। 

১৩. কোন ধরনের শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল অপরিহার্য?

 উত্তর : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল অপরিহার্য।

১৪. আওয়ামী লীগ সর্বপ্রথম কী নামে আত্মপ্রকাশ করে? 

উত্তর : আওয়ামী লীগ সর্বপ্রথম 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে আত্মপ্রকাশ করে।

১৫. কীভাবে নির্বাচনি এলাকা নির্ধারিত হয়?

উত্তর : ভৌগোলিক আয়তন ও ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনি এলাকা নির্ধারিত হয়।

১৬. ভোটার বা নির্বাচক কাকে বলে?

উত্তর : নির্বাচনে যারা ভোট দেয় তাদেরকে ভোটার বা নির্বাচক বলে।

১৭. নির্বাচকমণ্ডলী কাকে বলা হয়?

উত্তর : নির্বাচকের সমষ্টিকে নির্বাচকমণ্ডলী বলা হয়।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. এক ব্যক্তি, এক ভোট পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে বর্তমানে সর্বত্র গৃহীত নীতি হলো এক ব্যক্তি, এক ভোট। এক ব্যক্তি, এক ভোট পদ্ধতিতে একটি আসনের জন্য একজন / ভোটার কেবল তার পছন্দের একজনকে ভোট দিতে পারে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচিত হবেন। এ পদ্ধতি বর্তমানে সর্বত্র গৃহীত নীতি যাতে নির্বাচনের পূর্ণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। তাই এক ব্যক্তি, এক ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি।

প্রশ্ন-২. সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ বলা হয় কেন?

অথবা, 

সুষ্ঠু নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পূর্বশর্ত- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালিত হলে সঠিক নেতৃত্বে গণতন্ত্র রক্ষিত হয়। এর বিপরীত অবস্থ জনগণের শাসন কায়েম হয় না এবং ভল জনমত গঠিত হয়, যা গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ বলা হয়।

প্রশ্ন-৩. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমণ্ডলী গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর : নির্বাচনের সমষ্টিকে নির্বাচকমণ্ডলী বলে। নির্বাচকমণ্ডলী সরকার জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করে। একটি দল নির্বাচিত হয়ে সঠিকভাবে জনগণের জন্য কাজ না করলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণকে সাধারণত সেই দলকে আর নির্বাচিত করে না। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমণ্ডলী অত্যন্ত গুৰুত্বপূৰ্ণ।

প্রশ্ন-৪. গোপন ভোটদান পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।

অথবা, 

গোপন ভোটদান পদ্ধতি কেন সর্বজন স্বীকৃত- ব্যাখ্যা কর ।

 উত্তর : যে ভোটদান পদ্ধতিতে ভোটারগণ গোপনে ব্যালটপত্রে পছন্দকত ব্যক্তি নামের পাশে নির্ধারিত চিহ্ন দিয়ে বা সিল দিয়ে ভোট প্রদান করে প্রতিনিধি নির্বাচন। করেন তাকে গোপন ভোটদান পদ্ধতি বলে। প্রায় সকল রাষ্ট্রেই গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ পদ্ধতি সর্বজনস্বীকৃত

প্রশ্ন-৫.পরোক্ষ নির্বাচন বলতে কী বোঝায়?

অথবা, 

পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : জনগণ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বা একটি মধ্যবর্তী সংস্থা নির্বাচিত করেন। এ জনপ্রতিনিধিগণ ভোট দিয়ে যখন রাষ্ট্রপতি বা সংসদের সংরক্ষিত | আসনের সদস্য নির্বাচন করেন, তাকে বলা হয় পরোক্ষ নির্বাচন। যেমন- বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। আবার মার্কিন | যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি মধ্যবর্তী সংস্থা দ্বারা নির্বাচিত হন। অর্থাৎ পরোক্ষ নির্বাচন। বলতে সে নির্বাচন ব্যবস্থাকে বোঝায় সেখানে সাধারণ ভোটারগণ ভোট দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনি সংস্থা তৈরি করে। আর সে নির্বাচনি সংস্থা চূড়ান্তভাবে প্রতিনিধি অথবা রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান নির্বাচন করে।

প্রশ্ন-৬.একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপর গণতন্ত্র নির্ভর করে বলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো জনমত। আর নির্বাচনের মাধ্যমেই জনমত প্রকাশ পায়। নির্বাচনের মাধ্যমেই ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রর্থীকে নির্বাচিত করে। নির্বচিত দল সঠিকভাবে জনগণের জন্য কাজ না করলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ সেই দলকে আর নির্বাচিত করে না। অর্থাৎ নির্বাচন সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করে গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করে। তাই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

প্রশ্ন-৭.জনমত গঠনে রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : জনমত গঠনে রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে তার আদর্শ ও কর্মসূচির পক্ষে জনমত গঠন করা। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সভা, মিছিল ও গণযোগাযোগের কর্মসূচি গ্রহণ করে। সরকারি দল নিজের সফলতাকে জনগণের সামনে প্রকাশ ও প্রচার করে জনমত গঠনের চেষ্টা করে। বিরোধী দল সরকারের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি জনগণের সামনে তুলে ধরে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনের প্রচেষ্টা চালায়।

প্রশ্ন-৮. 'গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল কেন গুরুত্বপূর্ণ'- ব্যাখ্যা 

 অথবা, 

'গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অপরিহার্য - না এক ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সাফল্যের জন্য রাজনৈতিক দল গুরুত্বপূর্ণ বেলা ভূমিকা পালন করে। নির্বাচনে যে সকল দল বা দলসমূহ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না তারাই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। বিরোধী দল পার্লামেন্টে বিতর্ক, সরকারের নীতির সমালোচনা, মূলতবি প্রস্তাব এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করে 1. সংসদকে কার্যকর রাখে। সংসদের বাইরেও বক্তব্য, বিবৃতি ও সমালোচনার মাধ্যমে বিরোধী দল সরকারকে আইনের শাসন অনুশীলনে সহায়তা করে। গঠনমূ লক সমালোচনা এবং কার্যকর ভূমিকা রাখা বিরোধী দলের অন্যতম দায়িত্ব। জনগণের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-দুর্দশাকে চিহ্নিত করে তারা সার্বিক কর্মসূচিনীত এর প্রণয়ন করে। এছাড়া সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরোধী দল হলো বিকল্প সরকার। তাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন-৯. চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে কী বোঝায়? 

উত্তর : আধুনিক শাসনব্যবস্থা মূলত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। এ শাসনব্যবস্থায় আমরা চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উপস্থিতি লক্ষ করি। যারা রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতিকে নিজের স্বার্থ প্রয়োগের জন্য আইনসত্তা কিংবা আমলাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বা চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলা হয়। যেমন- শ্রমিক সংঘ, শিক্ষক সমিতি, প্রকাশক সমিতি ইত্যাদি চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অন্তর্গত।

দশম অধ্যায় : স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে নাগরিক চেতনা

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১.ছয় দফা কী?

উত্তর : ১৯৬৬ সালে লাহোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত বাঙালি জাতির প্রাণের ছয়টি দাবি হচ্ছে ছয় দফা দাবি।

২.ছয় দফা কর্মসূচি কে উত্থাপন করেন?

উত্তর : ছয় দফা কর্মসূচি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্থাপন করেন। 

৩. দ্বিজাতি তত্ত্ব কী?

উত্তর : মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জাতিগত তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতের মুসলমানদের একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তাঁর এ তত্ত্বের নাম হচ্ছে দ্বিজাতি তত্ত্ব।

৪.জেনারেল নিয়াজী কত হাজার সৈন্য নিয়ে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেন?

উত্তর : জেনারেল নিয়াজী ৯৩০০০ সৈন্য নিয়ে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেন।

৫.লাহোর প্রস্তাব কী?

উত্তর : ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক যে প্রস্তাব উত্থাপন করেন তাই লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত।

৬.লাহোর প্রস্তাব কে পেশ করেন?

উত্তর : শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন।

৭.লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হয় কত সালে?

উত্তর : লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হয় ১৯৪০ সালে।

৮. মুসলিম লীগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর : মুসলিম লীগ ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ।

৯. মৌলিক গণতন্ত্র কী?

উত্তর : প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তার সামরিক শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে ১৯৫৮ সালে যে বিশেষ নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করেন তাকেই মৌলিক গণতন্ত্র বলে।

১০. ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কী?

উত্তর : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফার সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধু ৰেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক একটি মামলা দায়ের করে যা ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। 

১১. কত সালের সংবিধানে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়?

উত্তর : ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় ৷ 

১২. বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় কোথায়? 

উত্তর : বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় মেহেরপুর বৈদ্যনাথতলায় (পরবর্তীতে মুজিবনগর) আমবাগানে।

১৩. যুক্তফ্রন্ট কী?

উত্তর : ১৯৫৩ সালের ১৪ই নভেম্বর আওয়ামী লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল নিয়ে গঠিত জোটকে যুক্তফ্রন্ট বলা হয়। 

১৪. যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয়?

 উত্তর : ১৯৫৩ সালের নভেম্বর মাসে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।

১৫. যুক্তফ্রন্ট কয়টি দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল?

উত্তর : যুক্তফ্রন্ট চারটি দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল।

১৬. কত সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হয়?

উত্তর : ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হয়।

১৭. মুজিবনগর সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে বিভক্ত করে? 

উত্তর : মুজিবনগর সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে এগারোটি সেক্টরে ভাগ করে ।

১৮. জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে কী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়?

উত্তর : ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ।

১৯. কে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ' ঘোষণা করেন?

উত্তর : জেনারেল আইয়ুব খান 'মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ' ঘোষণা করেন।

২০. আগরতলা মামলার প্রধান আসামি কে ছিলেন?

উত্তর : আগরতলা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

২১. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল কোনটি? 

উত্তর : ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. ছয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয় কেন?

অথবা, 

বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকার্টা কী? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : ১৯৬৬ সালের ৫-৬ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী দলের এক কনভেনশনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচি উত্থাপন করেন। কার্যত এ ৬ দফাতে পাকিস্তানি ধাঁচের বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে বাঙালি জাতির মুক্তি বা স্বাধীনতা কেন্দ্রীভূত ছিল। আর তাই এ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকার্টা বলা হয়। 

প্রশ্ন-২. মৌলিক গণতন্ত্রের ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।

 অথবা, 

মৌলিক গণতন্ত্র নামে একটি ব্যবস্থা চালু করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : পাকিস্তান শাসনামলে সামরিক শাসক আইয়ুব খান প্রবর্তিত এক বিশেষ ব্যবস্থা হলো মৌলিক গণতন্ত্র । জেনারেল আইয়ুব খান তার সামরিক শাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে মৌলিক গণতন্ত্র নামে একটি ব্যবস্থা চালু করেন। এতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ৮০ হাজার নির্বাচিত ইউনিয়ন কাউন্সিল সদস্য নিয়ে নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাদের ভোটেই রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান রাখা হয়। 

এটি ছিল পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি। সামরিক শাসনের ফলে সকল ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। এ ক্ষমতা ধরে রাখতেই মৌলিক গণতন্ত্র চালু করা হয়। 

প্রশ্ন-৩. ১৯৭০ সালের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ কেন? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালিদের রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব অর্জন এবং ছয় দফা ভিত্তিক সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এছাড়া এটি ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রথম সাধারণ নির্বাচন, যা অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। এসব কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন-৪. বাংলাদেশের ইতিহাসে কালরাত্রি কী? ব্যাখ্যা কর।

অথবা, 

২৫শে মার্চকে বাংলাদেশের ইতিহাসে কালরাত্রি বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : বাংলাদেশের ইতিহাসে কালরাত্রি হলো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। এ রাতে পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম গণহত্যা 'অপারেশন সার্চলাইট' শুরু হয়। ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হত্যা করে বহু মানুষকে। পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় এবং নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত করে,যা ইতিহাসে ২৫ মার্চের কালরাত্রি নামে পরিচিত।

প্রশ্ন-৫.আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কী? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাঙালিরা পৃথিবীতে একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। বর্তমানে শহিদ দিবস *আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র উদ্‌যাপিত হচ্ছে। 

প্রশ্ন-৬.লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য লেখ।

উত্তর : উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করাই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য। ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং এসব স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশগুলোর স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌম নিশ্চিতকরণ, সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য উপর্যুক্ত সংবিধান প্রণয়ন ও নীতি গ্রহণ ইত্যাদি লাহোর প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল।

প্রশ্ন-৭. লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।

অথবা, 

লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অবিভক্ত ভারতের রাজনীতিতে  ভূমিকা পালন করে। তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ পাঞ্জাবের লাহোরে মুসলিম লীগের অধিবেশনে উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাব গৃহীত হবার পর মুসলিম লীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মুসলমানদের ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট স্বাধীন  পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল। 

প্রশ্ন-৮. আগরতলা মামলা কী? ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফার সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে আইয়ুব সরকার বক্তাবন্ধু = বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলাটিই ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা নামে পরিচিত। এ মামলার আওতায় = বঙ্গবন্ধু ও ৬ দফাপন্থি অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে দীর্ঘ সময় কারা অভ্যন্তরে কাটাতে হয়।

 প্রশ্ন-৯. আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করা হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের ব্যবধানে পাকিস্তান রাষ্ট্রে মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতত্ত্বের ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ জন্ম লাভ করে। 

প্রশ্ন-১০. যুক্তফ্রন্ট কেন গঠন করা হয়? ব্যাখ্যা কর।

অথবা,

 ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কোন জোটটি গঠন করা হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর : ১৯৫৪ সালে পূর্ব-বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ, দমননীতি, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সীমাহীন বৈষম্য, দুর্নীতি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা ইত্যাদি কারণে মুসলিম লীগের প্রতি পূর্ব- বাংলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠে। এ অবস্থায় ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ সালের ১৪ই নভেম্বর আওয়ামী লীগ, কৃষক-শ্রমিক পর্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।

প্রশ্ন-১১.মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয় কেন?

উত্তর : মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা, সুসংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের  নিয়ে 'মুজিবনগর সরকার' গঠন করা হয়। ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা আদেশ। মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মুজিবনগর সরকার  প্রতিষ্ঠিত হয় ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url