পৃথিবী ও মহাবিশ্ব

 

Science New Shyllabus-2024 Hand Note/ Goudie

নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান-2024

2024 সালের নতুন হ্যান্ড নোট বিজ্ঞান

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২২ অনুযায়ী প্রণীত এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণির জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক বিজ্ঞান

অধ্যায় :13

পৃথিবী ও মহাবিশ্ব

অধ্যায় ১৩:পৃথিবী ও মহাবিশ্ব

Earth and the universe


এই অভিজ্ঞতায় শিখতে পারবে---
  • মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবীর বয়সঃ
  • ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা (Geologic Time Scale),
  • জীবাশ্মঃ সংজ্ঞা, ধরণ, গুরুত্ব,
  • সময়প্রবাহের সাথে পৃথিবীর পরিবর্তনঃ
  • পৃথিবী পৃষ্ঠের পরিবর্তন,
  • বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন,
  • ভূতাত্ত্বিক সময়ের সাথে পৃথিবীর জীবজগতে পরিবর্তন
পৃথিবী—আমাদের গ্রহ, মহাবিশ্বের বিশাল বিস্তৃতির তুলনায় এত ক্ষুদ্র যে সেটি এক কথায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আমরা যখন রাতের আকাশের দিকে তাকাই, এই মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থানটি নিয়ে আশ্চর্য না হয়ে পারি না। এই মহাবিশ্বের বয়সও পৃথিবীতে মানব প্রজন্মের বয়সের তুলনায় 
অনেক বেশি। এই অধ্যায়ে, আমরা আমাদের পৃথিবীর বয়স, তার গঠন প্রক্রিয়া এবং প্রাণের উন্মেষ নিয়ে আলোচনা করব। পৃথিবীর উৎপত্তি, পৃথিবীর ভূত্বক, মহাসাগর, বায়ুমণ্ডল এবং জীবজগতের সৃষ্টির সময়কাল এবং জানার প্রক্রিয়া বোঝার মাধ্যমে আমরা মূলত আমাদের গ্রহের 
প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

১.১ মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবীর বয়স

মহাবিশ্ব এখনো তার বিশালতা এবং বয়সের কারণে মানুষের সাধারণ বোধগম্যতার বাইরে একটি ক্ষেত্র। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্যমতে মহাবিশ্ব আনুমানিক ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং (Big Bang) নামে একটি ঘটনা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। তার তুলনায় পৃথিবী অপেক্ষাকৃত নতুন একটি মহাজাগতিক বস্তু, যা প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল। পৃথিবীর অশ্বমন্ডল এবং ভূত্বক গঠিত হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি বা ৪ বিলিয়ন বছরের কিছু আগে। বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর পাথর এবং খনিজগুলির আইসোটোপের ক্ষয়ের হার (আইসোটোপ ডেটিং) পরীক্ষা করে আমাদের গ্রহের বয়স বের করে একটি টাইমলাইন বা সময়সীমা তৈরি করেছেন। যদিও মহাবিশ্বের বয়সের তুলনায় পৃথিবীর বয়স কম, তবুও 
তাদের বয়সের পার্থক্য পৃথিবীর অস্তিত্বকে আরও উল্লেখযোগ্য করে তোলে। আমাদের গ্রহের গঠনের রহস্য জানার জন্য এবং যে সকল কারণে পৃথিবী জীবের বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠেছে তা বোঝার জন্য পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের বয়স সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

১.২ ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা:

রসায়ন অধ্যয়নে যেমন পর্যায় সারণী এবং ভূগোল অধ্যয়নের ক্ষেত্রে যেরকম মানচিত্র একটা গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক সেরকম পৃথিবীর ইতিহাস বর্ণনা করার সময় ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় টুল বা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসকে সময়ের ছোট এবং বড় বিভিন্ন এককে সাজানো হয়। আমরা সময় পরিমাপের ক্ষেত্রে বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন, ঘন্টা ইত্যাদি একক ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু পৃথিবীর এবং মহাবিশ্বের ইতিহাস এত পুরনো যে তা মাস বা বছর দিয়ে পরিমাপ করা অত্যন্ত দুরুহ এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এছাড়া অনেক আগের ঘটনা শনাক্ত করাও সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ছোট বড় এককে পৃথিবীর ইতিহাসকে ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়।

১.২.১ ভূতাত্বিক সময়সীমার একক

ভূতাত্বিক সময়সীমাকে নিচের এককগুলোতে ভাগ করা হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় যে, এই এককগুলোর মান সুনির্দিষ্ট নয়। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপর নির্ভর করে কোন একক কখনো অনেক দীর্ঘ আবার কখনো তুলনামূলক ভাবে ছোট।

এককগুলো এরকম :

কল্প বা ইয়ন (Eon):

 এটি সবচেয়ে বড় একক। ভূতাত্ত্বিক সময়সীমায় প্রাচীনত্বের হিসেবে যথাক্রমে হেডিয়ান, আর্কিয়ান, প্রোটেরোজোইক এবং ফ্যানেরোজোইক এই চারটি ইয়ন রয়েছে। প্রতিটি কল্প বা ইয়ন কয়েকটি ইরা বা মহাযুগে বিভক্ত। ফ্যানেরোজোইক ইয়ন ছাড়া অন্য তিনটি ইয়নকে অনেক সময় প্রাক-ক্যামব্রিয়ান বলা হয়।

মহাযুগ বা ইরা (Era): 

এটি ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার দ্বিতীয় বৃহত্তম একক। যেমন বর্তমানে চলমান ফ্যানেরোজোইক ইয়নকে তিনটি ইরা বা মহাযুগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রাচীনতার দিক থেকে সেগুলো হচ্ছে প্যালিওজোইক, মেসোজোইক ও সিনোজোইক। প্রতিটি মহাযুগ আবার অনেকগুলো যুগ বা পিরিয়ডে বিভক্ত।

যুগ বা পিরিয়ড (Period): 

মহাযুগের পরের একক হল যুগ বা পিরিয়ড। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মেসোজোয়িক মহাযুগকে প্রাচীনতার দিক থেকে ট্রায়াসিক, জুরাসিক ও ক্রিটেসাস এই তিনটি যুগে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি যুগ আলাদা ভূতাত্ত্বিক এবং জৈবিক ঘটনা দিয়ে চিহ্নিত।

উপযুগ বা ইপক (Epoch):

 যুগের পরবর্তী ছোট একক হল উপযুগ। যেমন, সর্বশেষ পিরিয়ড কোয়ার্টারনারিকে (quaternary) প্রাচীনতার দিক থেকে হোলোসিন এবং প্লিস্টোসিন এই দুইটি উপযুগে বিভক্ত করা হয়।এছাড়া বিস্তারিতভাবে জানার জন্য প্রতিটি উপযুগ কয়েকটি পর্যায়ে (Stage or Age) বিভক্ত করা হয়েছে; যেমন সর্বশেষ উপযুগ হোলোসিনকে প্রাচীনতার দিক থেকে গ্রিনল্যান্ডিয়ান (greenlandian), নর্থগ্রিপপিয়ান (Northgrippian) এবং মেঘালয়ান (Meghalayan) এই তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়।এখানে ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার বিভিন্ন এককের কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হয়েছে। সময়সীমার চার্টে উল্লেখযোগ্য এককগুলো তাদের শুরুর সময়সহ সাজানো আছে যা থেকে আমরা সেই এককের মোট সময়কাল বের করতে পারি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সকল যুগ, উপযুগ বা অন্যান্য একক সমান সময় পরিব্যাপ্ত করে না।

 এর কারণ হলো পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা দ্বারা এক একক থেকে অন্য একক পৃথক করা হয়। এসকল বিশেষ ঘটনার মধ্যে রয়েছে কোনো এক বা একাধিক জীবের আবির্ভাব, পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন, বিভিন্ন জীবের গণ বিলুপ্তি ইত্যাদি। ছবিতে পৃথিবী সৃষ্টি থেকে এখন পর্যন্ত পুরো সময়টিকে ঘড়ির বারোঘন্টা সময় হিসেবে বিবেচনা করে দেখানে হয়েছে। ৪.৬ বিলিয়ন বৎসরকে ঘড়ির বারোঘন্টা হিসেবে ধরে নিলে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়েছে মাত্র দুই সেকেন্ড আগে!ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা বা স্কেল একটি কালানুক্রম যা পৃথিবীর অতীত অধ্যয়ন এবং বোঝার একটি পদ্ধতিগত উপায়। এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূতাত্ত্বিক এবং জৈবিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর ইতিহাসকে প্রধান এককগুলিতে বিভক্ত করে। স্কেলটি প্রাক-ক্যামব্রিয়ান ইয়নের সাথে শুরু হয়, যা পৃথিবীর গঠন থেকে জটিল জীবনের রূপের আবির্ভাব পর্যন্ত বিশাল সময়কে নির্দেশ করে।

প্রাক-ক্যামব্রিয়ান যুগের শেষে ফ্যানেরোজোইক ইয়নের শুরু হয়। এই ইয়নে প্যালিওজোয়িক মহাযুগের শুরুতে ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক জীবনের উত্থান ঘটে এবং পর্যায়ক্রমে গাছপালা এবং প্রাণীদের ভূমিতে বিস্তরন এবং প্রাথমিক উভচর ও সরীসৃপের বিস্তার দ্বারা চিহ্নিত।

Epoch


পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে দুপুর বারোটায় এবং বর্তমান সময়কে রাত বারোটা কল্পনা করে বিভিন্ন ইয়ন এবং কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখানো হয়েছে। এই বারো ঘণ্টার ভিতরে ঠিক কয়টার সময় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি ঘটনার নিচে দেখানো হয়েছে ।

মেসোজোয়িক ইরা'কে, প্রায়ই "ডাইনোসরের মহাযুগ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এ সময় এই আকর্ষণীয় প্রাণীদের আধিপত্যের সাথে সাথে পাখি এবং সপুষ্পক উদ্ভিদের উন্মেষ ঘটে।

অবশেষে সেনোজোয়িক মহাযুগ যা প্রায় ৬.৫ কোটি বছর আগে শুরু হয়েছিল তা বর্তমান দিন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর উত্থান,মানুষের আবির্ভাব এবং আধুনিক বিশ্বের গঠন দ্বারা এই মহাযুগ বা ইরাকে চিহ্নিত করা হয়।

১.২.২ ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার গঠন ও পরিবর্তন:

ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস সুসংবদ্ধভাবে অধ্যয়ন করার একটি পদ্ধতি। তবে এর গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১৭ শতাব্দী থেকে। সে সময় ড্যানিশ বিজ্ঞানী নিকোলাস স্টেনো (Nicolas Steno) একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তার প্রস্তাবনা অনুসারে পাথরে যে সকল স্তর দেখা যায় তার সবচাইতে উপরের স্তরটি তুলনামূলকভাবে নতুন এবং ক্রমান্বয়ে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় তত সেগুলোর বয়স বেশি হতে থাকবে। পাললিক শিলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে অবক্ষেপ জমা হয়ে এ সকল স্তর তৈরি হয়। এই প্রস্তাবনাটি উপরিপাত সূত্র (Law of Superposition) নামে পরিচিত। 

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার বিভিন্ন এককগুলো উপরিপাত নীতি অনুসরণ করে সাজানো রয়েছে। তাই ভূতাত্ত্বিক সময়সীমায় সবচেয়ে উপরের এককটি সাম্প্রতিকতম এবং সবচেয়ে নিচের এককটি সবচেয়ে পুরনো সময় নির্দেশ করে। এছাড়াও এই সময়সীমা ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ঘটনাগুলো সনাক্ত করা যায়।

অসংখ্য বিজ্ঞানী এবং ভূতত্ত্ববিদ পরবর্তীতে ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার উন্নয়ন ও পরিমার্জন করেন। যেমন আঠারো ও উনিশ শতকে ইংলিশ ভূতত্ত্ববিদ উইলিয়াম স্মিথ এবং স্কটিশ ভূতত্ত্ববিদ চার্লস লায়েলসহ আরো অনেকে পৃথিবী ইতিহাস উন্মোচনের ক্ষেত্রে ফসিল বা জীবাশ্মের গুরুত্ব উল্লেখ করেন। শিলার বিভিন্ন স্তরে প্রাপ্ত জীবাশ্ম অতীতের বিভিন্ন সময়ে প্রাণের অস্তিত্ব ও ধরন নির্দেশ করে। এই ধারণা থেকে ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার প্রাথমিক কাঠামো গঠিত হয়। পরবর্তীতে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন তেজস্ক্রিয়তা (Radioactivity) আবিষ্কৃত হয় তখন তা পৃথিবীর প্রাকৃতিক ইতিহাস সূক্ষ্মভাবে জানার ক্ষেত্রে এক বিপ্লবের সূচনা করে। 

বিভিন্ন শিলা বা খনিজ বা জীবাশ্মের বয়স বের করার ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম, কার্বন, স্ট্রনসিয়াম ইত্যাদি মৌলের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের তেজস্ক্রিয়তা ও রূপান্তর পর্যবেক্ষণ করা হয়। যার ফলে ক্রমাগত সংশোধন এবং নতুন তথ্য যোগ হয়ে ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান এবং ভবিষ্যতে আরো নতুন গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে এটিতে আরো অনেক নতুন তথ্য যুক্ত হবে।

ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা অধ্যয়ন করে, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অতীত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উন্মোচন করতে পারেন। এছাড়া জীবনের বিবর্তন সনাক্ত করতে, ব্যাপক বা গণ বিলুপ্তি সনাক্ত করতে, মহাদেশগুলির স্থানান্তর বুঝতে এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং উল্কাপিণ্ডের প্রভাবের মতো প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাব পরীক্ষা করতে পারেন। ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা বৈশ্বিক ঘটনাগুলির ভেতর সম্পর্কগুলো জানার জন্য এবং ঘটনাগুলো বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে এবং জীবাশ্মবিদ, ভূতত্ত্ববিদ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের পৃথিবীর সমৃদ্ধ ইতিহাসের পাঠোদ্ধার করতে সাহায্য করে।

১.২.৩ গণ বিলুপ্তি (Mass extinctions) :

বিলুপ্তি বলতে কোন একটি জীব প্রজাতির সকল সদস্যের ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বোঝায়। যেমন ডাইনোসরের একটি প্রজাতি টাইরানোসোরাস রেক্স (T. Rex) এর সকল সদস্য ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়েছে বলা যায়। একইভাবে বলা যায় যে স্যাবারটুথ টাইগার নামে এক ধরনের বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং যার ফলে এখন একটিও জীবিত স্যাবারটুথ টাইগার খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

Mass extinctions




গণবিলুপ্তি হলো টাইরানোসোরাস রেক্স এবং স্যাবারটুথ টাইগারের মতো আরো হাজার হাজার প্রজাতি একসাথে ধ্বংস হয়ে যাওয়া। পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। যেমন এখন থেকে প্রায় ৬.৬ কোটি বছর পূর্বে ক্রিটেশাস-পেলিওজিন গণবিলুক্তির ঘটনা ঘটে। সে সময় ডাইনোসরসহ পৃথিবীর মোট জীব প্রজাতির অন্তত ৭৫ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই গণবিলুপ্তি দ্বারা মেসোজোয়িক মহাযুগের সমাপ্তি এবং সিনোজোয়িক মহাযুগের সূচনার সীমানা নির্ধারণ করা হয়।আবার উল্টো ঘটনাও রয়েছে। যেমন আজ থেকে প্রায় ৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে প্রচুর নতুন প্রজাতি এবং জটিল (Complex) ধরনের প্রাণের আবির্ভাব ঘটে। এই ঘটনার মাধ্যমে ক্যামব্রিয়ান যুগের সূচনা চিহ্নিত করা হয়। অতি প্রাচীনকালের এসকল তথ্য মূলত জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায়।

১.৩ জীবাশ্ম (Fossils):

অতীতে বসবাসকারী যে কোন জীবের (উদ্ভিদ বা প্রাণী) দেহাবশেষ বা দৈহিক গঠনের অথবা বসবাসের যে কোন চিহ্ন জীবাশ্ম হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

Fossils


ল্যাটিন শব্দ "Fossus" থেকে ফসিল (Fossil) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। জীবাশ্ম বিভিন্ন ধরনের হতে পারে; যেমন হাড়,দাঁত, দেহের বাইরের শক্ত খোলস, এমনকি অবক্ষেপ বা পাথরের মাঝে জীবের দেহের যে কোন চিহ্ন জীবাশ্ম এর মধ্যে পড়ে। জীবাশ্ম বিভিন্ন আকারের হতে পারে, অতি ক্ষুদ্র এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে বিশালাকার ডাইনোসর বা গাছের অংশ ফসিল আকারে পাওয়া গিয়েছে। সাধারণত কোন জীবের ফসিল হতে হলে তার চিহ্ন বা দেহাবশেষ কমপক্ষে ১০ হাজার বছরের পুরনো হতে হয়। এছাড়া সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্মের মধ্যে রয়েছে ৩৫০ কোটি বছরের পুরনো এককোষী সায়ানোব্যাকটেরিয়া যা Stromatolites নামে পরিচিত। জীবাশ্মের ধরন গুলো নিম্নরূপ হয়ে থাকে,

১.৩.১ বডি জীবাশ্ম (Body Fossil :

এক্ষেত্রে কোন জীবের সম্পূর্ণ বা আংশিক দেহাবশেষ জীবাশ্ম আকারে পাওয়া যায়। যেমন বরফে জমে থাকা আদি মানবের মৃতদেহ অথবা লোমওয়ালা হাতির (Mammoth) মৃতদেহ, গাছের আঠা বা কষে আটকে পড়া পতঙ্গ ইত্যাদি। পরবর্তীতে গাছের আঠা জমে তা অ্যামবারে (Amber) পরিণত হয় এবং তার মাঝে আটকে পড়া জীবদেহ প্রায়শ অক্ষত থাকে।

১.৩.২ মোল্ড এবং কাস্ট জীবাশ্ম(Mold and Cast):

Mold and Cast


অনেক ক্ষেত্রে কোন জীবের দেহাবশেষ যে অবক্ষেপে (Sediment) চাপা পড়ে তা সময় প্রবাহের সাথে সাথে পাললিক শিলায় পরিণত হয়। পরবর্তীতে জীবের দেহাবশেষ ক্ষয় হয়ে গেলেও তার ছাপ সেই শিলায় থেকে যায়। এগুলোকে মোল্ড বা ছাঁচ বলা হয়। মোল্ড বা ছাঁচের  ভেতরের ফাঁকা অংশ যদি পুনরায় অধক্ষেপ দ্বারা পূর্ণ হয়ে শক্ত হয়ে যায় এবং দেখেতে সেই জীবের দেহের মতো হয় তখন তা কাস্ট জীবাশ্মে পরিণত হয়।

১.৩.৩ ট্রেস জীবাশ্ম (Trace Fossils ) :

কখনো কখনো জীবের বসবাসের বা চলাচলের বিভিন্ন চিহ্ন পাললিক শিলায় বা অবক্ষেপে পাওয়া যায়। যেমন, পায়ের ছাপ, চলাচলের ফলে সৃষ্ট পথ, বসবাসের গর্ত, তৈরি বাসা ইত্যাদি।

Trace Fossils

১.৩.৪ পারমিনারালাইজড জীবাশ্ম(Permineralized Fossil):

অনেক ক্ষেত্রে মৃত জীবের দেহের শক্ত অংশের ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাঁকা স্থান বা ছিদ্রসমূহ খনিজ দ্বারা (সাধারণত পানিবাহিত) পূর্ণ হয়ে যায় এবং সেই জীবের দেহের আকার ও আকৃতি সংরক্ষণ করে। কখনো কখনো সেই খনিজ জীবের টিস্যুর উপাদানকে প্রতিস্থাপন করে ফেলে।এ ধরনের জীবাশ্মের একটি উদাহরণ হল প্রস্তরীভূত গাছ।

জীবাশ্ম আমাদের সামনে অতীতের জানালা খুলে দেয়। জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণ করে সেই জীবের গঠন এবং তৎকালীন পরিবেশ সম্পর্কে জানা যায়। যেমন সমুদ্র থেকে বহু দূরে কোথাও যদি মাটি বা পাথরের মাঝে সামুদ্রিক জীবের জীবাশ্ম পাওয়া যায় তাহলে খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে সেখানে এককালে সাগর বা মহাসাগর ছিল। যেমন বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের টেকেরঘাট এলাকায় প্রাপ্ত পাললিক শিলায় বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রানীর জীবাশ্ম পাওয়া যায়। কাজেই আমরা জানি এই এলাকাটি একসময় সমুদ্রের নিচে ছিল। বর্তমান সময়ে আধুনিক রেডিও আইসোটোপ ডেটিং এর মাধ্যমে পৃথিবীতে সেই জীবের অবস্থানের প্রকৃত সময় পর্যন্ত বের করা সম্ভব।

১.৪ সময় প্রবাহের সাথে পৃথিবীর পরিবর্তন:

শিলার রেডিও আইসোটোপ ডেটিং ও অন্যান্য পদ্ধতি থেকে জানা যায় যে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৪৬০ কোটি বছর আগে। এই সময়কালে পৃথিবীতে প্রথম যে দুটি পরিবর্তন ঘটে তা হল, 

  • (১) পৃথিবীপৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং
  • (২) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উৎপত্তি ও পরিবর্তন। 
স্বাভাবিকভাবেই এই দুটি পরিবর্তনের কারণে যে তৃতীয় পরিবর্তনটি ঘটে তা হল, 
  • (৩) পৃথিবীর জীবজগতে পরিবর্তন। 

এই তিনটি পরিবর্তনের কথা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল।

১.৪.১ ভূতাত্ত্বিক সময়ের সাথে পৃথিবীপৃষ্ঠের পরিবর্তনঃ

৪৬০ কোটি বছর পূর্ব থেকে ৫৭ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় প্রাক-ক্যামব্রিয়ান। ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার প্রায় ৮৫% সময় এই অংশের অন্তর্গত। প্রাক-ক্যামব্রিয়ান সময়কালকে হেডিয়ান, আর্কিয়ান এবং প্রোটোজোয়িক ইয়নে বা কল্পে ভাগ করা হয়েছে।প্রাক ক্যামব্রিয়ান সময়ের তিনটি কল্পের মধ্যে হেডিয়ান সবচেয়ে প্রাচীন এবং সবচেয়ে কম সময়কাল সম্পন্ন (৪৬০ কোটি বছর পূর্ব থেকে ৪০০ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত)। 

এ সময় মূলত পৃথিবীর গঠন প্রক্রিয়া চলমান ছিল। পৃথিবীর প্রাকৃতিক অবস্থা ছিল প্রাণ ধারণের জন্য সম্পূর্ণ প্রতিকূল। পৃথিবীর মহাকর্ষের কারণে অসংখ্য গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং অন্যান্য ছোট বড় মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ছিল। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ছিল মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস। অক্সিজেন ছিল না বললেই চলে। আদি মহাসাগরও এই কল্পের শেষ পর্যায়ে গঠিত হতে শুরু করে। ভূত্বকের প্রথম খনিজ ও শিলাও এই সময় তৈরি হয়।

এরপর আসে আর্কিয়ান (৪০০ কোটি বছর পূর্ব থেকে ২৫০ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত) এবং প্রোটেরোজোয়িক (২৫০ কোটি বছর থেকে ৫৪. কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত) কল্প। আর্কিয়ান কল্পে প্রথম মহাদেশ গঠিত হয় এবং পৃথিবীর পরিবেশ প্রাণ ধারণের উপযোগী হতে থাকে। প্রথম পাললিক শিলাও এসময় গঠিত হয়। প্রোটেরোজোয়িক কল্পে প্রথম প্লেট-টেকটোনিকের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেছে। এসময় প্রথম বিশালাকার মহাদেশ (Supercontinent) এবং প্রথম মহাসাগরীয় ভূত্বক (Ocean crust) গঠিত হয়।

১.৪.২ ভূতাত্ত্বিক সময়ের সাথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনঃ

ডিগ্যাসিং (Degassing) নামক এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর অশ্বমণ্ডল থেকে জলীয় বাষ্প, সালফার ও নাইট্রোজেনের অক্সাইডসহ বিভিন্ন গ্যাস বের হয়ে এসে আদি বায়ুমণ্ডল তৈরি হয়। পরবর্তীতে সালোকসংশ্লেষণে সক্ষম সায়ানোব্যাকটেরিয়ার আগমনের পর থেকে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের আগমন ঘটে যা উদ্ভিদের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে বাড়তে থাকে। 
ওজোন স্তর তৈরি হবার পর সেটি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে তার প্রভাব থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠকে রক্ষা করতে শুরু করে। তখন পৃথিবীপৃষ্ঠ প্রাণ ধারণের জন্য অধিকতর উপযোগী ও নিরাপদ হওয়ায় জীবের প্রজাতি সংখ্যাও বাড়তে থাকে। উল্লেখ্য, ওজোনস্তর ফলে সমুদ্র ছাড়াও স্থলভাগে নানান প্রজাতির প্রাণের বিচরণ ও বিকাশ ঘটতে থাকে। পৃথিবীর পানির উৎস হিসেবে মূলত পৃথিবীর আদিপর্যায়ে আঘাত করা ধূমকেতুকে চিহ্নিত করা হয়। তবে ভূপৃষ্ঠের গভীর থেকে প্রাপ্ত শিলা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে পৃথিবীর গুরুমন্ডলে (Mantle) উচ্চ তাপে ও চাপে বিশেষ অবস্থায় গলিত শিলার সাথে পানি সংযুক্ত রয়েছে যার পরিমাণ ভূপৃষ্ঠে প্রাপ্ত পানির তুলনায় অনেক বেশি।

১.৪.৩ ভূতাত্ত্বিক সময়ের সাথে পৃথিবীর জীবজগতে পরিবর্তনঃ

পৃথিবীতে জীব তার পুরো ইতিহাস জুড়ে অসাধারণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রাচীনতম এককোষী জীব থেকে শুরু করে বর্তমান জটিল ইকোসিস্টেম পর্যন্ত যা আমরা আজ পর্যবেক্ষণ করি সেগুলো পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে জীবন গঠনের একটি ক্রমাগত পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের ঘটনাটি বিবর্তন নামে পরিচিত। প্রাকৃতিক নির্বাচন, জেনেটিক প্রকরণ এবং অভিযোজনের মতো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, প্রজাতিগুলি বৈচিত্র্যময় ভাবে বিবর্তিত হয়েছে এবং কখনও কখনও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জীবাশ্ম রেকর্ড পৃথিবীতে জীবনের বিবর্তনীয় যাত্রা শনাক্ত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে।



লক্ষ লক্ষ বছর ধরে, জীবজগত উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং অভিযোজনের মধ্য দিয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় জলজ থেকে স্থলজ আবাসস্থলে রূপান্তরের ফলে গাছপালা এবং প্রাণীদের দ্বারা স্থলভাগ পরিপূর্ণ হয়েছে। এই রূপান্তরটি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করেছে এবং আমরা আজ যে জীবনের অসাধারণ বৈচিত্র্য দেখি তার ভিত্তি স্থাপন করেছে।আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিল মেসোজোয়িক যুগে সরীসৃপদের উত্থান এবং আধিপত্য, যাকে সাধারণত "ডাইনোসরের মহাযুগ" বলা হয়। 

ডাইনোসরসহ অন্যান্য প্রাচীন সরীসৃপগুলি তখন ভূমিতে প্রাধান্য বিস্তার করে বিচরণ করেছিল। তাদের বিবর্তন পরিবর্তিত পরিবেশ পরিস্থিতি এবং নতুন পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে জটিলভাবে যুক্ত ছিল।

ডাইনোসরের আকস্মিক বিলুপ্তির পর সেনোজোয়িক যুগে স্তন্যপায়ী প্রাণীর আগমন ঘটে এবং তাদের পরবর্তী বৈচিত্র্য পৃথিবীতে জীবনের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বিভিন্ন বাসস্থানের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়, জটিল সামাজিক আচরণের বিকাশ ঘটায় এবং অবশেষে মানুষসহ প্রাইমেটদের উদ্ভব ঘটায়।

সময়ের সাথে সাথে জীবনের পরিবর্তনের অধ্যয়ন জীব এবং তাদের পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ততা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। এটি বিবর্তনের গতিপথ নির্ধারণে পরিবেশগত মিথস্ক্রিয়া এবং জিনগত পরিবর্তনের ভূমিকা তুলে ধরে। জীবের পরিবর্তনের ধরণ এবং প্রক্রিয়াগুলি পরীক্ষা করে, বিজ্ঞানীরা জীবনের জটিল জালিকায় আমাদের অবস্থান সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি অর্জন করেন।পৃথিবীর ইতিহাস এবং সময়ের সাথে সাথে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলি অধ্যয়ন করে, আমরা মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান অনুভব করতে পারি। আমরা আমাদের গ্রহের সংবেদনশীলতা এবং এর ভবিষ্যতের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে মানুষের যে দায়িত্ব রয়েছে সে সম্পর্কে চিন্তা করতে পারি।

আমরা কখনওই যেন ভুলে না যাই যে পৃথিবী এখন পর্যন্ত জীবের একমাত্র আবাসস্থল যা অন্য গ্রহ থেকে পৃথিবীকে অনন্য করে তুলেছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url