এইচ এস সি জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র, প্রথম অধ্যায় ,কোষ ও এর গঠন

প্রথম অধ্যায়   (কোষ ও এর  গঠন)

উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস

(PLANT TAXONOMY)



প্রথম অধ্যায়

ভূমিকা

জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রতিটি জীব বা জীবগোষ্ঠির বৈশিষ্ট্য, আচরণ, ব্যবহার ইত্যাদি আমাদের জানা দরকার। আর এ জন্য চাই একটি সহজ পদ্ধতি। অসংখ্য এবং বিচিত্র জীব প্রজাতিকে কীভাবে সহজে জানা যায় তার জন্য একটি সুচিন্তিত এবং সুবিন্যস্ত পদ্ধতি প্রয়োজন। এ পদ্ধতিকেই বলা হয় জীবের শ্রেণিবিন্যাস। এ ইউনিটে প্রধানত উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে বিশেষ করে মারগুলিস এর পঞ্চজগৎ (ফাইভ কিংডম) শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে।

 (পাঠ ১.১) জীব জগতের আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস


উদ্দেশ্য

এ পাঠ শেষে তুমি-

  •  উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে বলতে পারবে।
  •  উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে পারবে।
  •  উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসের প্রকারভেদ লিখতে পারবে।
  •  জীব জগতের একটি আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা করতে পারবে।

প্রধান শব্দ  ( Monera, Protoctista, Fungi, Plantae, Animalia )


বর্তমানে পৃথিবীতে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ (অনেকের মতে এর চেয়েও বেশি)। এ পাঁচ লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ একটি থেকে অন্যটি ভিন্নতর। বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে এদের প্রতিটি প্রজাতিকে শনাক্ত করা যায়। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উপস্থিতিকে বলা হয় প্রজাতিগত বৈচিত্র্য। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে যেমন গঠনগত বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি কার্যগত বৈচিত্র্যও রয়েছে।

 সৃষ্টির প্রথমদিকে উদ্ভিদ ছিল সরল প্রকৃতির। সময়ের বিবর্তনে উদ্ভিদের গঠনগত, কার্যগত ও সংখ্যাগত বিবর্তনও হয়েছে। একই প্রজাতির মধ্যে আবার প্রকরণগত ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- ধান বা আম এর বিভিন্ন প্রকরণ এর একটি উদাহরণ। জিনগত পার্থক্যের কারণে এমনটি হয়। একে জিনগত বৈচিত্র্য বলা হয়। বিভিন্নইকোসিস্টেমে নানা ধরনের উদ্ভিদ। একে পরিবেশগত বৈচিত্র্য বলা হয়। তাই উদ্ভিদের জিনগত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসাথে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য বলা হয়।

 সামগ্রিকভাবে জীবের জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসাথে জীববৈচিত্র্য বলা হয়। অসংখ্য ও বিচিত্র উদ্ভিদরাজিকে কীভাবে তুলনামুলকভাবে কম সময়ে সহজে জানা যায় তার জন্য চাই সুচিন্তিত এবং সুবিন্যস্ত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিকেই বলা হয় উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস। উদ্ভিদের আকার, আকৃতি ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যাবলীর পারস্পরিক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে এদেরকে কিংডম, বিভাগ, শ্রেণী, বর্গ, গোত্র, গণ ও প্রজাতি প্রভৃতি দল-উপদলে বিন্যস্ত করার পদ্ধতিকে বলা হয় উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস।

উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা : উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসের নানাবিধ প্রয়োজনীয়তার মধ্যে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

১। উদ্ভিদ জগতের জ্ঞানার্জনে- আমাদের দরকারে বিশ্বের সব উদ্ভিদকে জানা আবশ্যক। কিন্তু সারা বিশ্বের প্রায় পাঁচ লক্ষ প্রজাতির প্রতিটিকে পৃথক পৃথকভাবে জানা অসম্ভব, অথচ আমাদেরকে তা জানতে হবে। সহজ উপায়ে সব উদ্ভিদকে জানতে উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস সাহায্য করে।

২। শনাক্তকরণে- উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস উদ্ভিদের সঠিক শনাক্তকরণকে সহজতর করে।

৩। পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ে- উদ্ভিদ সম্পর্কিত আমাদের জ্ঞানকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে শ্রেণিবিন্যাস সহায়তা করে।

৪। আদি-উন্নত নির্ধারণ এবং বিবর্তনে- আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস উদ্ভিদের আদি-উন্নত নির্ধারণে সাহায্য করে এবং বিবর্তন ধারার নির্দেশ দান করে।

৫। আন্তর্জাতিক পরিচিতিতে- পৃথিবীর সকল উদ্ভিদকে সহজে আন্তর্জাতিক পরিচিতি প্রদানে শ্রেণিবিন্যাসের জ্ঞান সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসের প্রকারভেদ : উদ্ভিদজগতকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্ভিদবিদ বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। এ সমস্ত শ্রেণিবিন্যাসকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি, (খ) প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি এবং (গ) জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি।


কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি : কোন একটি বা বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে উদ্ভিদজগতের যে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাকে কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি বলা হয়। থিয়োফ্রাস্টাস এবং লিনিয়াসের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির উদাহরণ।

প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি : বিভিন্ন উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ গোষ্ঠীর মধ্যে সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানিক সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে যে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাকে প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি বলা হয়। বেনথাম-হুকার এর শ্রেণিবিন্যাস প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির উদাহরণ।

জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি : বিভিন্ন উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ গোষ্ঠীকে তাদের উৎপত্তিগত সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে বিবর্তন ধারা অনুযায়ী আদি হতে আধুনিক ক্রমধারায় সাজিয়ে যে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাকে জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি বলা হয়। এঙ্গলার-প্রান্টল, হাচিনসন, বেসি, ক্রনকুইস্ট, তাখতাইয়ান প্রমুখ বিজ্ঞানীর দেয়া শ্রেণিবিন্যাস জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির উদাহরণ।

শ্রেণিবিন্যাসের আধুনিকায়ন উপরে উল্লিখিত তিনটি শ্রেণিবিন্যাসের কোথাও ব্যাকটেরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীবকে অন্তর্ভুক্ত করে পরবর্তীতে বেশ কিছু শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিস্তর গবেষণার ফলে এমন কিছু জীব আবিষ্কৃত হয়েছে যাদেরকে উদ্ভিদ বা প্রাণীর কোন দলেই অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ঠিক সেই সময় Earnst Haeckel

১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে এককোষী অণুজীবসমূহকে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগত থেকে পৃথক করে Earnst Haeckel নামক আলাদা একটি রাজ্যে স্থান দেন। কিন্তু ভাইরাস কোষীয় না হওয়ায় Protista রাজ্য থেকেও বাদ পড়ে। এভাবেই শ্রেণিবিন্যাসের আধুনিকায়ন শুরু হয়।

পরবর্তীতে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র আবিষ্কারের ফলে Earnst Haeckel এর শ্রেণিবিন্যাসটিও বিতর্কিত হয়ে পড়ে। ফলে নতুন শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে হুইটেকার ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে একটি ঋরাব Kingdom শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির প্রস্তাব করেন। তিনি সমস্ত কোষীয় জীবকে পাঁচটি কিংডমে (Kingdom) এ ভাগ করেন। যথা-

কিংডম ১- Monera : এতে আদিকেন্দ্রিক জীব যেমন- ব্যাকটেরিয়া, সায়ানোব্যাকটেরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কিংডম ২- Protista : এতে প্রোটোজোয়া, ক্রাইসোফাইট্স্, ইউগেদ্বনয়েড্স্ ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কিংডম ৩- Fungi : এতে সবুজ শৈবাল, বাদামী শৈবাল, লোহিত শৈবাল, ব্রায়োফাইট্স্ এবং ট্র্যাকিওফাইট্স্ ইত্যাদিকে

অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কিংডম ৪- - Animalia : এতে স্লাইম মোল্ড, ঊমাইসিটিস, কাইট্রিডিস এবং ট্রুফানজাই ইত্যাদিকে রাখা হয়েছে।

কিংডম ৫- Animalia: এতে সকল বহুকোষী প্রাণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

হুইটেকার প্রস্তাবিত পাঁচটি কিংডমের মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ মনেরা আদিকেন্দ্রিক এবং বাকি চারটি সুকেন্দ্রিক। এটি কোন বিস্তারিত শ্রেণিবিন্যাস নয়। তাই পরবর্তীকালে Dr. Lynn Margulis হুইটেকার এর শ্রেণিবিন্যাসটি পরিবর্তিত ও বিস্তারিত করেন। Dr. Lynn Margulis একজন জীববিজ্ঞানী যিনি আমেরিকার সর্বোচ্চ বিজ্ঞানীর পদকপ্রাপ্ত। মারগুলিস ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে একটি ফাইভ কিংডম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি উপস্থাপন করেন যা জীবজগতের একটি আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস।

জীব জগতের একটি আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস

কোষ, এমনকি এর অঙ্গাণুর গঠন ও জীববিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার আধুনিক তথ্য ব্যবহার করে তৈরি শ্রেণিবিন্যাসকেই আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস বলে। মারগুলিস এর শ্রেণিবিন্যাসটি একটি আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস। ছকের মাধ্যমে তার শ্রেণিবিন্যাসটি দেখানো হলো-

তনি সমস্ত জীব জগতকে দুটি সুপার কিংডমে বিভক্ত করেন। যথাসুপার কিংডম ১ : Prokaryota এবং সুপার কিংডম ২ :Eukaryota |
সুপার কিংডম ১ : Prokaryota
যে সুপার কিংডমে আদিকোষী জীব এবং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে চৎড়শধৎুড়ঃধ বলে। এদের কিছু
বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে । যেমন-
  • এরা আণুবীক্ষণিক জীব
  • এরা এককোষী।
  • এদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয় অর্থাৎ এরা আদিকেন্দ্রিক।
  •  রাইবোসোম ছাড়া অন্য কোন সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু এদের কোষে থাকে না।
কিংডম ১ : Monera
Prokaryota সুপার কিংডমকে একটি মাত্র কিংডম মনেরাতে (Monera) ভাগ করা হয়েছে। মনেরা একটি আদিকেন্দ্রিক কিংডম যেখানে এককোষী আণুবীক্ষণিক জীবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মনেরা কিংডমের সদস্যদের  সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা-
  • এরা এককোষী, সূত্রাকার, কলোনিয়াল বা মাইসেলিয়াল।
  • কোষে নিউক্লিয়ার পদার্থ থাকলেও নিউক্লিয়োলাস এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেন অনুপস্থিত।
  • এদের কোষে সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণু যেমন- মাইটোকন্ড্রিয়া প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ইত্যাদি থাকে না।
  • কোষ প্রাচীর পলিস্যাকারাইড ও আমিষ দিয়ে তৈরি।
  • এদের অধিকাংশই শোষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে, তবে কিছু ফটোসিনথেটিক প্রক্রিয়ায় এবং কিছু কেমোসিনথেটিক প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে।
  • অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজন ঘটে।
  • দ্বিভাজন পদ্ধতিতে এরা বংশ বৃদ্ধি করে।
যথা- প্রোক্লোরোফাইটা, রিকেটসি, মিক্সোব্যাকটেরিয়া, ব্যাকটেরিয়া এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি।
উদাহরণ- Coccus, Bacillus subtilis, Escherichia coli, Nostoc linckia ইত্যাদি।


সুপার কিংডম ২ :Eukaryota
যে সুপার কিংডমে প্রকৃতকোষী জীব এবং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে Eukaryota বলে । এদেরও
কিছুবিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা-
  • এদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ এরা প্রকৃতকোষী জীব (এদের কোষে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু বিদ্যমান)।
  • এরা এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে এবং
  • এরা একক বা কলোনী আকারে দলবদ্ধ জীবন যাপন করে।
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সুপার কিংডম Eukaryota কে আবার চারটি কিংডমে ভাগ করা হয়েছে। যথাকিংডম ১ : Protoctista, কিংডম ২ : Fungi, কিংডম ৩ : Plantae এবং কিংডম ৪ : Animalia।
কিংডম ১ : Protoctista- Protoctista কিংডমের অন্তর্ভুক্ত সকল সদস্য প্রকৃতকোষী কিন্তু সত্যিকারের উদ্ভিদ, প্রাণী বা ছত্রাকের কোনটিই নয়। এদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।যথা-
  • এরা এককোষী বা বহুকোষী।
  • এরা এককভাবে বা কলোনিয়াল অবস্থায় বাস করে।
  • এদের প্রকৃত নিউক্লিয়াস বিদ্যমান অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিয়োলাস বিদ্যমান থাকে।
  • এদের কোষে বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গাণু যেমন- মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ইত্যাদি থাকে।
  • ক্রোমাটিন বডিতে DNA, RNA এবং Protein আছে।
  • শোষণ, গ্রহণ বা সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে এরা খাদ্য গ্রহণ করে।
  • সালোকসংশ্লেষণক্ষম প্রজাতিতে বিভিন্ন ধরনের সালোকসংশ্লেষণকারী বর্ণ কণিকা ক্লোরোপ্লাষ্টে বিদ্যমান থাকে।
  • মাইটোসিসের মাধ্যমে এদের অযৌন জনন , কনজুগেশনের মাধ্যমে এদের যৌন জনন ঘটে।এরা অধিকাংশই জলজ।
যেমন- বিভিন্ন ধরনের অ্যামিবা, শৈবাল, স্লাইম মোল্ড, ওয়াটার মোল্ড, কাইট্রিডস, উওমাইকোটা ছত্রাক ইত্যাদি।
উদাহরণ- Amoeba proteus, Chlorella, Saprolegnia parasitica, Paramecium ইত্যাদি।

কিংডম ২ : Fungi-- এদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা-

  • এরা সাধারণত বহুকোষী এবং দেহ মাইসেলিয়া দ্বারা গঠিত।
  • এদের দেহ সাধারণত শাখান্বিত, ফিলামেন্ট সিনোসাইটিক (ব্যবধায়ক প্রাচীরবিহীন)।
  • এদের কোষ প্রাচীর কাইটিন নির্মিত।
  • সালোকসংশ্লেষণকারী বর্ণ কণিকা অনুপস্থিত তাই এরা নিজেরা নিজেদের খাদ্য তৈরি করতে পারে না বলে এরা মৃতজীবি বা পরজীবি হিসেবে বাস করে।
  • এরা শোষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে।
  • এদের পরিবহন টিস্যু নেই।
  • হ্যাপ্লয়েড স্পোরের মাধ্যমে এদের বংশবৃদ্ধি ঘটে।
  • এদের অধিকাংশই স্থলজ, অল্প কিছু সংখ্যক জলজ। 
উদাহরণ-Mucor, Penicillium, Agaricus ইত্যাদি।


কিংডম ৩ : Plantae- Plantae কিংডম এর অপর নাম Metaphyta। এ কিংডমের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে । যথা-
  • এরা বহুকোষী জীব।
  • এদের প্রকৃত নিউক্লিয়াস বিদ্যমান।
  • এদের সালোকসংশ্লেষণকারী বর্ণকণিকা ক্লোরোফিল-এ ও ক্লোরোফিল-বি প্রধান।
  • সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে এরা নিজেরা নিজেদের খাদ্য তৈরি করতে পারে।
  • কোষে কোষ প্রাচীর, প্লাস্টিড এবং বড় গহবর রয়েছে।
  • কোষ প্রাচীর সেলুলোজ নির্মিত।
  • ভ্রূণ থেকে সবুজ উদ্ভিদের জীবন শুরুহয়।
  • এদের উন্নত টিস্যু বিন্যাস বিদ্যমান।
  • যৌন জনন অ্যানাইসোগ্যামাস বা ঊওগ্যামাস প্রকৃতির।
  • জনন অঙ্গ ও জনন টিস্যু থাকে।
  • এরা মূলত স্থলজ, কিছু জলজ প্রজাতিও রয়েছে।

যেমন- সকল মস্, ফার্ণ, নগ্নবীজী এবং আবৃতবীজী উদ্ভিদ এ কিংডমের অন্তর্ভুক্ত।
উদাহরণ- Riccia, Pteris, Cycas, Oryza sativa, Mangifera ইত্যাদি।




 কংডম- Plantae কে দুটি গ্রেড এ ভাগ করা হয়েছে। যথা- গ্রেড ১ :Bryophyta এবং গ্রেড ২ : Tracheophyta।

গ্রেড ১ : Bryophyta- Bryophyta উদ্ভিদ গ্যামিটোফাইটিক এবং এদের পরিবহন টিস্যু থাকে না।

গ্রেড ২ : Tracheophyta- Tracheophyta উদ্ভিদ স্পোরোফাইটিক এবং এদের পরিবহন টিস্যু থাকে।

কিংডম ৪ : Animalia- Animalia কিংডমের অপর নাম Metazoa। এদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা-

  • এদের কোষে কোষ প্রাচীর, প্লাস্টিড এবং বড় গহবর নেই।
  • এরা বহুকোষী জীব, ইউক্যারিয়োটিক এবং হলোজয়িক ধরনের অর্থাৎ জটিল জৈব পদার্থ আহার করে।
  • দেহে ক্লোরোফিল অনুপস্থিত তাই সালোকসংশ্লেণের মাধ্যমে নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না।
  • এরা ভিন্নভোজী স্বভাবের।
  • গলাধঃকরণ (Engulfing) প্রক্রিয়ায় এরা খাদ্য গ্রহণ করে।
  • যৌন জননের মাধ্যমে এদের বংশ বৃদ্ধি ঘটে।
  • এদের ভ্রূণ সৃষ্টি হয় ও ভ্রূণ বিকাশকালে টিস্যুর অভিপ্রয়াণ (Migration) এবং পুনর্বিন্যাস ঘটে।

যেমন- মানুষ, বাঘ, ইলিশ মাছ, গরু, মহিষ, হাঁস, মুরগী ইত্যাদি।

উদাহরণ- Homo sapiens, Panthera tigris, Hilsa ilisha ইত্যাদি।



সারসংক্ষেপ

উদ্ভিদের আকার, আকৃতি ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যাবলীর পারস্পরিক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে এদেরকে কিংডম, বিভাগ, শ্রেণী, বর্গ, গোত্র, গণ ও প্রজাতি প্রভৃতি দল-উপদলে বিন্যস্ত করার পদ্ধতিকে বলা হয় উদ্ভিদের শ্রেনিবিন্যাস। উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১। কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি, ২। প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি এবং ৩। জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি। মারগুলিস সমস্ত জীবজগতকে দুটি সুপার কিংডমে বিভক্ত করেন। যথা- সুপার কিংডম ১ : Prokaryota এবং  সুপার কিংডম ২ : Eukaryota। তিনি Prokaryota কে একটিমাত্র কিংডম মনেরাতে ভাগ করেন এবং Eukaryota কে চারটি কিংডম এ ভাগ করেন।যেমন- কিংডম ১ : Protoctista  কিংডম ২ : Fungi, ৩ : Plantae এবং কিংডম ৪ : Animalia।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন


১। নিচের কোনটি কিংডম মনেরা এর সদস্য ?
(ক) সায়ানোব্যাকটেরিয়া        (খ) শৈবাল 
(গ) বাঘ                                   (ঘ) ছত্রাক
২। উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস এর ধাপ
i. কিংডম, বিভাগ ii. শ্রেণি, বর্গ iii. গ্রোত্র, গণ ও প্রজাতি
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii           (খ) i ও iii 
(গ) ii ও iii         (ঘ) i, ii ও iii
৩। কিংডম ফানজাই এর সদস্যরা
i. শোষণ পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করে ii. মাইসেলিয়্যাল iii. মৃতজীবী বা পরজীবীরূপে বাস করে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii       (খ) i ও iii 
(গ) ii ও iii     (ঘ) i, ii ও iii

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৪ ও ৫ নং প্রশ্নের উত্তর দিনপিদিম কয়েকটি জীবের নমুনা নিয়ে গবেষণা করলেন। তিনি পর্যবেক্ষণে দেখলেন প্রথম জীবটি গলাধঃকরণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য
গ্রহণ করে। দ্বিতীয়টি শোষণ প্রক্রিয়ায় এবং তৃতীয় ও চতুর্থটি যথাক্রমে সালোকসংশ্লেষণ ও কেমোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায়
খাদ্য তৈরি করে।
৪। মিউকর কোনটির অন্তর্ভুক্ত হবে ?
(ক) প্রথমটি (খ) দ্বিতীয়টি (গ) তৃতীয়টি (ঘ) চতুর্থটি
৫। ক্লোরোপ্লাস্ট ছাড়া জীব
i. প্রথমটি ii. দ্বিতীয়টি iii. তৃতীয়টি
(ক) i ও ii       (খ) i ও iii 
(গ) ii ও iii     (ঘ) i, ii ও iii

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

১। ক ২। ঘ ৩। ঘ ৪। খ ৫। ক 


সৃজনশীল প্রশ্ন-১ : 

নিচের চিত্র দুটি দেখ এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। 


(ক) মারগুলিস Eukaryota সুপার কিংডমকে কতটি কিংডমে ভাগ করেন ?
(খ) উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস বলতে কী বোঝ ?
(গ) চিত্র ১ এ প্রদর্শিত জীবটির বৈশিষ্ট্য লিখ।
(ঘ) চিত্র ১ ও চিত্র ২ এর জীব দুটি ভিন্ন কিংডমের সদস্য- উক্তিটি যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।









এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url