এইচ এস সি বাংলা প্রথম পত্র ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ শামসুর রাহমান
ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
শামসুর রাহমান
কবি-পরিচিতি
সূচীপত্র
শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকা শহরে তাঁর নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রাম। তাঁর পিতা মোখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মাতা আমেনা খাতুন। শামসুর রাহমান
তাঁর তেরো ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ। তিনি ১৯৪৫ সালে ঢাকার পোগোজ ইংলিশ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আইএ পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েও চূড়ান্ত পরীক্ষা না দিয়ে পাস কোর্সে বিএ পাশ করেন। তাঁর পেশা ছিল সাংবাদিকতা। ১৯৫৭ সালে ‘দৈনিক মর্নিং নিউজ’-এ সাংবাদিকতা দিয়ে
শুরু এবং ১৯৬৪ সালে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ (পরে ‘দৈনিক বাংলা’)-এ যোগ দিয়ে ১৯৮৭ সালে প্রধান সম্পাদক থেকে পদত্যাগ। আঠারো বছর বয়সে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে ‘হাতির
শুঁড়’ নামক কবিতা লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। দেশ, দেশের মানুষ, স্বাধীনতা আর মাতৃভাষাকে নিয়ে তাঁর রচিত কবিতাগুলো ইতিহাস হয়ে থাকবে। তাঁর ‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে
স্বাধীনতা’, ‘সফেদ পাঞ্জাবি’, ‘আসাদের শার্ট’ প্রভৃতি কবিতায় উঠে এসেছে বাঙালি জাতির স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ। বিষয়ে, আঙ্গিকে, উপস্থাপনায় তাঁর কবিতা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের প্রত্যাশা, হতাশা, বিচ্ছিন্নতা, বৈরাগ্য ও সংগ্রাম তাঁর কবিতায় সার্থকভাবে বিধৃত। উপমা ও চিত্রকল্পে তিনি প্রকৃতিনির্ভর এবং বিষয় ও উপাদানে শহরকেন্দ্রিক।
বিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে দুই বাংলায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
কাব্যগ্রন্থ : প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে (১৯৬০), রৌদ্র করোটিতে (১৯৬৩), বিধ্বস্ত নীলিমা (১৯৬৭), নিরালোকে দিব্যরথ (১৯৬৮), নিজ বাসভূমে (১৯৭০), বন্দি শিবির থেকে (১৯৭২), ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা (১৯৭৪), উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ (১৯৮২), বুক তার বাংলাদেশের হৃদয় (১৯৮৮);
শিশুতোষ : এলাটিং বেলাটিং (১৯৭৫), ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো (১৯৭৭), স্মৃতির শহর (১৯৭৯)।
ভূমিকা
শামসুর রাহমান রচিত ‘ফেব্রæয়ারি ১৯৬৯’ শীর্ষক কবিতাটি নিজ বাসভ‚মে কাব্যগ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে। গদ্যছন্দ ও প্রবাহমান ভাষার সুষ্ঠু বিকাশে কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সংযোজন। কবিতাটিতে গণজাগরণ, সংগ্রামী চেতনা ও দেশপ্রেমের প্রতিফলন ঘটেছে। কবিতাটিতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের অবদান ফুটে উঠেছে।
উদ্দেশ্য
মসুর রাহমানের ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি পড়ার পর তুমি-
- কবির দেশাত্মবোধক চেতনা বর্ণনা করতে পারবে।
- এ দেশের সংগ্রামী মানুষের আত্মত্যাগের কথা আলোচনা করতে পারবে।
- বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাগত ঐক্য সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে পারবে।
মূলপাঠ
আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে
কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা
একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়- ফুল নয়, ওরা
শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।
একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং।
এ-রঙের বিপরীত আছে অন্য রং,
যে-রং লাগে না ভালো চোখে, যে-রং সন্ত্রাস আনে
প্রাত্যহিকতায় আমাদের মনে সকাল-সন্ধ্যায়-
এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট, সারা দেশ
ঘাতকের অশুভ আস্তানা।
আমি আর আমার মতোই বহু লোক
রাত্রি-দিন ভূলুণ্ঠিত ঘাতকের আস্তানায়, কেউ মরা, আধমরা কেউ,
কেউ বা ভীষণ জেদি, দারুণ বিপ্লবে ফেটে পড়া। চতুর্দিকে
মানবিক বাগান, কমলবন হচ্ছে তছনছ।
বুঝি তাই উনিশশো উনসত্তরেও
আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্ল্যাগ,
বরকত বুক পাতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে।
সালামের চোখে আজ আলোচিত ঢাকা,
সালামের মুখে আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা।
দেখলাম রাজপথে, দেখলাম আমরা সবাই
জনসাধারণ
দেখলাম সালামের হাত থেকে নক্ষত্রের মতো
ঝরে অবিরত অবিনাশী বর্ণমালা
আর বরকত বলে গাঢ় উচ্চারণে
এখনো বীরের রক্তে দুঃখিনী মাতার অশ্রæজলে
ফোটে ফুল বাস্তবের বিশাল চত্বরে
হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায় সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ,
শিহরিত ক্ষণে ক্ষণে আনন্দের রৌদ্রে আর দুঃখের ছায়ায়।
শব্দের অর্থ
আস্তানা-- আখড়া, আশ্রম।
আবার ফুটেছে দ্যাখো...আমাদের চেতনারই রং--প্রতি বছর শহরের পথে পথে কৃষ্ণচ‚ড়া ফুল ফোটে। কবির মনে হয় যেন ভাষা শহিদদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচ‚ড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। তাই একুশের কৃষ্ণচ‚ড়াকে কবি আমাদের চেতনার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চান। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের ত্যাগ আর মহিমা যেন মূর্ত হয়ে ওঠে থরে থরে ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচ‚ড়ার স্তবকে-স্তবকে।
উপত্যকা-- দুই পর্বতের মাঝখানের নিচু সমতলভ‚মি।
কমলবন-- কবি মানবিকতা, সুন্দর ও কল্যাণের জগৎ বোঝাতে ‘কমলবন’ প্রতীকটি ব্যবহার করেছেন।
চর্যাপদ-- বাংলাভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন।
ফানুস-- বেলুন যা বাষ্পের সাহায্যে আকাশে উড়তে পারে। বুঝি তাই উনিশশো...থাবার সম্মুখে--১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের ক্রমধারায় ছাত্র-অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন উনিশশো উনসত্তরে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। শহর ও গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন ছিল অপ্রতিরোধ্য। এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন আসাদুজ্জামান, মতিউর, ড. শামসুজ্জোহা প্রমুখ। এ অংশে কবি শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও আত্মাহুতি দেওয়া বীর জনতাকে ভাষা-শহিদ সালাম ও বরকতের প্রতীকে তাৎপর্যময় করে তুলেছেন।
মানবিক বাগান-- মানবিক জগৎ। মনুষ্যত্ব, ন্যায় ও মঙ্গলের জগৎ।
মৈত্রী--মিত্রতা, বন্ধুত্ব।
শাসনতন্ত্র-- শাসনপদ্ধতি, রাষ্ট্রশাসন প্রণালি।
শিহরিত-- কম্পিত, শিউরে, উঠেছে এমন।
সহচর-- সাথি, সঙ্গী।
হরিৎ-- সবুজ।
সারসংক্ষেপ
কবি শামসুর রাহমানের ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ সংগ্রামী চেতনা, দেশপ্রেম ও গণজাগরণের জন্য উদ্বুদ্ধ করার মতো একটি কবিতা। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসন, শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঢাকার রাজপথে জনগণের ঢল নামে।
এ কাতারে সামিল হয় গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ, কলকারখানার শ্রমিক, স্কুলকলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। কবি এ কবিতায় পরম মমতায়, শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সকল মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সংগ্রামী চেতনাকে শৈল্পিক রূপ দিয়েছে। এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আসাদুজ্জামান, মতিউর, ড. শামসুজ্জোহা প্রমুখের মৃত্যুকে ভাষা-শহিদ সালাম ও বরকতের প্রতীকে তাৎপর্যময় করে তুলেছে । কবি ভাষা-শহিদদের রক্তের বুদ্বুদকে কৃষ্ণচড়া ফুলের সাথে তুলনা করেছে।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. নাগরিক কবি কে?
ক. আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খ. আল মাহমুদ
গ. শামসুর রাহমান ঘ. নির্মলেন্দু গুণ
২. একুশের ‘কৃষ্ণচূড়া’ বাঙালির কিসের প্রতীক?
ক. চেতনার খ. স্বপ্নের
গ. রক্তের ঘ. বেদনার
নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
বীরের মতো রুখে দাঁড়ায় বিজলী হয়ে ছোটে
মারের চোটে বর্গীরা সব ধুলো কাদায় লোটে।
৩. উদ্দীপকের বর্গীরা ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ক. শোষক খ. মেঘনার মাঝি
গ. ঘাতক ঘ. সংগ্রামী জনতা
৪. উদ্দীপক ও ‘ফেব্রæয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় যে ভাবটি ফুটে উঠেছেÑ
i. সংগ্রাম
ii. বঞ্চনা
iii. মহামারী
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. ii ও iii
৫. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে?
ক. নিরালোকে দিব্যরথ খ. বিধ্বস্ত নীলিমা
গ. নিজ বাসভূমে ঘ. বন্দি শিবির থেকে
৬. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ‘মানবিক বাগান’ বলতে বোঝানো হয়েছেÑ
ক. মানবিক জগৎ খ. মনোহর বাগান
গ. মানুষের বাগান ঘ. কল্যাণের জগৎ
নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৭ ও ৮নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।
৭. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে?
ক. স্বাধীনতা সংগ্রাম খ. ভাষা আন্দোলন
গ. গণ অভ্যুত্থান ঘ. ছয় দফা আন্দোলন
৮. উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে-
i. শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা
ii. কৃষ্ণচূড়া বন্দনা
iii. সংগ্রামী চেতনা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i ও iii
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর
১. গ ২. ক ৩. ক ৪. ক ৫. গ ৬. ঘ ৭. খ ৮. ক
সৃজনশীল প্রশ্ন
প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা।
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।
ক. ‘কমলবন’ প্রতীকটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে?
খ. ‘আবার সালাম নামবে রাজপথে’ -উক্তিটি বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কোন বিষয়টি উঠে এসেছে? -আলোচনা কর।
ঘ. “ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় বাঙালির সংগ্রামী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে।” -উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
ক) কবি মানবিকতা, সুন্দর ও কল্যাণের জগৎ বোঝাতে ‘কমলবন’ প্রতীকটি ব্যবহার করেছে।
খ).ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে রক্তঝরা বায়ান্নোর ভাষা-আন্দোলনকে স্মরণ করেছ সালামের মাধ্যমে। ভাষাকে কেন্দ্র করে ১৯৪৮ সালে গড়ে উঠা ছাত্র- আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে সালাম, বরকত, রফিকসহ আরো অনেকে শহিদ হয়েছিলেন।
মাতৃভাষার জন্য এঁরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানেও তাদের ন্যায় অনেক তাজাপ্রাণ তরুণ রাজপথে নেমেছিল প্রতিবাদের ঝান্ডা তুলে ধরতে। কবির নিকট এই তাজা প্রাণ তরুণদেরকে সালামের মতোই মনে হয়েছে। তাই কবি বলেছে, ‘আবার সালাম নামবে রাজপথে।’
গ.) উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিবতার প্রতিবাদী চেতনার বিষয়টি উঠে এসেছে। মানুষ যখন অস্তিত্ব সংকটে পতিত হয় তখন তা রক্ষার বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ সময় সে আর কোন অন্যায়অত্যাচারকে মাথা পেতে নেয় না। সঙ্গতকারণেই সে সোচ্চার হয়ে উঠে সমস্ত অন্যায় এবং নির্মমতার বিরুদ্ধে।
উদ্দীপক এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবির চেতনায় এই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকে একটি বৈরি সময়ে জাতির সংকটময় অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে। যখন সবাই ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে, তখন ফুল নিয়ে খেলা করবার আর সময় নেই। কথাটির মধ্য দিয়ে কবি একটি বিরূপ সময়ের ছবির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়ও আমরা এমন একটি বিরূপ সময়ের চিত্র দেখি। যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির ভাষা- সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে, তখন নিশ্চিন্তে, নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকা সম্ভব হয়নি বাঙালির পক্ষে। বাঙালিকে অচিরেই নেমে আসতে হয় রাজপথে। তারা জেনে যায়, অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে সংগ্রাম করতে হবে, অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে। বস্তুত ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার বিরূপ সময়টিই উদ্দীপকে মূর্ত হয়ে উঠেছে।
ঘ). উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি আমাদের সমাজ বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে, উভয় ক্ষেত্রেই আমরা এর প্রবল উপস্থিতি লক্ষ করি।
‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি বাংলার ইতিহাসের ঊনসত্তর কালপর্বের এক শিল্পভাষ্য। এ সময়ে জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সারাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয় ঢাকার রাজপথ ও শহিদ মিনারের পাদদেশে। কবি শামসুর রাহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ এক ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন এ কবিতায়।
‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যূত্থানের স্মৃতিচারণ করেছেন। এ আন্দোলনের পটভূমিতে ছিল অগণিত মানুষের সংগ্রামী চেতনা। পূর্ববাংলার মানুষ ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বলাবাহুল্য যে, পাকিস্তান আমলে পূর্ববাংলার মানুষ নানাভাবে পাকিস্তানি শাসকচক্রের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। ফলে ১৯৬৯ সালে এদেশের মানুষ গণ-আন্দোলনের ডাক দেয়। যার সফল পরিণতি ঘটে এক গণ-অভ্যূত্থানে।
উদ্দীপকেও একটি সমাজের অস্থিরতার চিত্র ফুটে উঠেছে যা কোনোক্রমেই সুখকর নয়। বেঁচে থাকার জন্য সুকুমার জীবনের যে স্বপ্ন তা এখানে সুদূর পরাহত। এখানে মানুষের গায়ের চামড়া কাঠফাটা রোদ সেঁকে। উদ্দীপকে ফুল নিয়ে খেলার দিন নয় বলার মধ্য দিয়ে কবি সবাইকে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছে।
‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় উঠে এসেছে নষ্ট সময়ের আলেখ্য। সেখানে বাঙালির মুখের ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেড়ে নিতে উদ্যত হয়েছে একটি সামন্তবাদী অপশক্তি। নির্বিচার হত্যা এবং অন্যায়-অত্যাচার দ্বারা সামন্তবাদী অপশক্তি মানুষের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক অধিকারকেও নষ্ট করে দিতে চায়। ফলে বাঙালি হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। আর উদ্দীপকেও কবি প্রতিবাদের মাধ্যমে দাবি-দাওয়াকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। প্রিয় ফুলকে নিয়ে খেলার আকাক্সক্ষা পরিহার করেছেন। তাই বলা যায়, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় বাঙালির সংগ্রামী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে।
নিজে কর
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা
শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক এলো
দানবের মতো চিৎকার করতে করতে,
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো।
ক. আমাদের চেতনার রঙ কী?
খ. ‘ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছে ?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সাদৃশ্যগুলো তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলসুর একই প্রেরণা হতে উৎসারিত।” -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url