পদার্থের অবস্থা

State of Matter

Science New Shyllabus-2024 Hand Note/ Goudie

নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান-2024

2024 সালের নতুন হ্যান্ড নোট বিজ্ঞান

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২২ অনুযায়ী প্রণীত এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণির জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক বিজ্ঞান

অধ্যায় :4

পদার্থের অবস্থা

অধ্যায় ৪:পদার্থের অবস্থা

State of Matter


এই অভিজ্ঞতায় শিখতে পারবে---

  • পদার্থের তিনটি অবস্থা
  • কণার গতিতত্ত্ব
  • ব্যাপন, নিঃসরণ
  • মোমবাতির জ্বলন এবং মোমের তিনটি অবস্থা
  • গলন ও স্ফুটন, পাতন ও ঊর্ধ্বপাতন


কঠিন, তরল ও বায়বীয়-পদার্থের এই তিন অবস্থায় তাদের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়ে থাকে, ফলে তাদের ব্যবহারও তিন অবস্থায় ভিন্ন হয়। এই অধ্যায়ে পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হবে।

তথ্য কণিকা (Information) 

 সকল পদার্থই সাধারণত তিন অবস্থায় বিরাজ করে- কঠিন, তরল ও বায়বীয়। 

 পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা : 

যার ভর আছে, জায়গা দখল করে এবং জড়তা আছে তাই পদার্থ

ব্যাপন (Diffusion): 

কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।

নিঃসরণ (Effusion):

সরু ছিদ্রপথে কোনো গ্যাসের অণুসমূহের উচ্চচাপ থেকে নিম্নরূপ অঞ্চলে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে। উদাহরণস্বরূপ প্রাকৃতিক গ্যাস বা মিথেন (CH4) গ্যাসকে অধিক চাপ প্রয়োগ করে সি.এন.জি (Compressed natural gas)তে পরিণত করে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মিথেন গ্যাসের ভর ও ঘনত্ব সবচেয়ে কম, অক্সিজেন গ্যাসের ভর ও ঘনত্ব তার চেয়ে বেশি। বিউটেন গ্যাসের সবচেয়ে বেশি। প্রোপেন গ্যাসের ভর ও ঘনত্ব বিউটেনের চেয়ে কম। ব্যাপন ও নিঃসরণ বস্তুর ভর এবং ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল। বস্তুটির ভর এবং ঘনত্ব যত বেশি হবে ব্যাপন ও নিঃসরণের হার তত হ্রাস পাবে।

মোম কি? মোমের বিক্রিয়া লিখ। 

উত্তর : মোম একটি হাইড্রোকার্বন এর যৌগ। 



 অর্থাৎ জৈব যৌগ, পর্যাপ্ত বাতাসের উপস্থিতিতে মোমের দহনের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়। 

  মোম + O2(g) ➡CO2(g) + H2O(g) ) + তাপ + আলো

 গলন ও স্ফুটন (Melting and Boiling)  কি?

যদি কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তা সরাসরি গ্যাসে পরিণত হয় এবং ঠান্ডা করলে সরাসরি কঠিনে রূপান্তরিত হয়  তবে পদার্থের অবস্থাকে ঊর্ধ্বপাতন বলে। 

যেমন: ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর, কঠিন CO2 ইত্যাদি।  

 মনে রাখার উপায় “বেনি আগে কনা”

১.১ কণার গতিতত্ত্ব (Kinetic Theory of Particles)

আমরা জানি যে, সকল পদার্থই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা (অণু এবং পরমাণু) দ্বারা গঠিত। এই সমস্ত কণার গতি শক্তি রয়েছে যে শক্তি তাপমাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং পদার্থটি কোন অবস্থায় (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) থাকবে সেটি প্রভাবিত করে। পদার্থের এই কণাগুলো একে অপরকে আকর্ষণ করে, এবং পদার্থের কণাগুলোর একে অপরকে আকর্ষণ করাকে আন্তঃকণা আকর্ষণ (আন্ত আণবিক বা আন্ত পারমানবিক) শক্তি বলা হয়। কণাগুলোর গতিশক্তি এবং আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি দিয়ে পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করা যায় এবং ব্যাখ্যা করার এই তত্ত্বকে কণার গতিতত্ত্ব (Kinetic theory of particles) বলা হয়।

কঠিন পদার্থে কণাগুলোর মধ্যে আকর্ষণ শক্তি খুব বেশি থাকে। ফলে, কণাগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে খুব কাছাকাছি বা ঘনিষ্ঠভাবে অবস্থান করে এবং নিজেদের অবস্থান থেকে নড়াচড়া করতে পারে না। যখন কোনো কঠিন পদার্থকে তাপ দেওয়া হয়, তখন কণাগুলো তাপশক্তি গ্রহণ করে কাঁপতে (vibrate) থাকে। যখন আরও বেশি তাপ প্রয়োগ করা হয়, তখন কণাগুলো এত বেশি কাঁপতে থাকে যে সেগুলো আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি থেকে নিজেদের খানিকটা মুক্ত করে কিছুটা গতিশক্তি লাভ করে। পদার্থের এই অবস্থা হচ্ছে তরল অবস্থা। আমরা জানি যে, তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন থাকলেও নির্দিষ্ট আকার থাকে না। এই অবস্থায় তরল পদার্থকে আরও বেশি তাপ দিলে 

কণাগুলো তাপশক্তি গ্রহণ করে তাদের গতিশক্তি বাড়াতে থাকে এবং এক সময় গতিশক্তি এত বেশি বেড়ে যায় যে, কণাগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে আকর্ষণ শক্তি থেকে প্রায় মুক্ত (free) হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছুটতে শুরু করে। এই অবস্থায় তরল পদার্থ গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয়। 

আমরা জানি যে, গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো আয়তন থাকে না। গ্যাসীয় পদার্থকে যে পাত্রে রাখা হবেকণাগুলো সে আয়তনের পাত্রে ছোটাছুটি করতে থাকে। গ্যাসীয় অবস্থা প্রাপ্ত হওয়ার পর আরও তাপ প্রয়োগ করে হলে কণাগুলো তখন আরও বেশি জোরে ছুটতে থাকবে এবং কণাগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

১.২ ব্যাপন (Diffusion)

কোনো পদার্থ যদি উচ্চ ঘনমাত্রায় থাকে, তখন সে পদার্থের কণাগুলো নিম্ন ঘনমাত্রার দিকে ধাবিত হতে চায়। কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের উচ্চ ঘনমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন ঘনমাত্রার স্থানে স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপন প্রক্রিয়ার জন্য পদার্থের ঘনমাত্রার পার্থক্য থাকতে হবে।

Diffusion


ব্যাপন প্রক্রিয়ার উদাহরণস্বরূপ আমরা পারফিউমের খোলা বোতলের কথা বলতে পারি। ঘরের এক কোনে একটি পারফিউমের খোলা বোতল রাখলে তার সুগন্ধ কিছুক্ষণের মাঝে ঐ ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে পরে। এই ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াটি ব্যাপনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সুগন্ধ ছড়িয়ে 

পড়তে যদি কম সময় লাগে তখন আমরা বলি তার ব্যাপন হার বেশি। আবার যদি ছড়িয়ে পরতে বেশি সময় লাগে তখন তার ব্যাপন হার কম। ব্যাপনের হার কণার আকার এবং ভরের উপরও নির্ভর করে। বড় আকারের কণার তুলনায় ছোট কণা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ছোট কণার ব্যাপনের হার বড় কণার থেকে বেশি।

কঠিন পদার্থের ব্যাপন প্রক্রিয়া:

 তুমি যদি একটি কাপে গরম পানি নিয়ে তাতে টিব্যাগ ডুবাও, তাহলে দেখতে পাবে টিব্যাগ থেকে নির্গত কালচে লাল রঙের চায়ের নির্যাস বা লিকার বের হয়ে ধীরে ধীরে কাপের পানির মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর তুমি যখন টিব্যাগটি কাপ থেকে তুলে আনবে, তখন দেখতে পাবে যে, কাপের পুরো পানির রঙ কালচে-লালের মতো হয়েছে। 

অর্থাৎ টিব্যাগে থাকা চায়ের পাতার রঙ ব্যাপনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাপের পুরো পানির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কাপে গরম পানি ব্যবহার করার কারণে ব্যাপনের হার বেশি, তুমি যদি কাপে ঠান্ডা পানি নিয়ে তাতে টিব্যাগ ডুবিয়ে রাখ, তাহলে দেখবে লিকার অনেক আস্তে আস্তে ছড়াচ্ছে। গরম পানির ক্ষেত্রে চায়ের নির্যাসের কণাগুলো পানি থেকে তাপ গ্রহণ করে অধিক গতিশক্তি লাভ করে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, কম তাপমাত্রায় যেটি অনেক ধীর গতিতে ঘটে।

তরল পদার্থের ব্যাপন প্রক্রিয়া: 

তোমরা একটি গ্লাস, কিংবা স্বচ্ছ কোনো পাত্রে কিছু পরিমাণ পানি নিয়ে যদি ড্রপার দিয়ে এক দুই ফোটা নীল রঙয়ের ফুড কালার দাও তাহলে দেখবে নীল রঙটি গ্লাসের পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে সমস্ত পানির রঙ নীল রঙে পরিণত হয়েছে, 


অর্থাৎ নীল ফুড কালারের কণাগুলো ব্যাপনের মাধ্যমে বিকারের সমস্ত পানিতে ছড়িয়ে পড়বে। শীতল পাঁইটে প্রক্রিয়াটি হবে ধীরে ধীরে কিন্তু গরম পানি নিলে সেটি ঘটবে খুব দ্রুত।

দুটি গ্যাসীয় পদার্থের ব্যাপন:

 তোমাদের বলা হয়েছে যে গ্যাসের কণা যদি ছোট হয় তাহলে ব্যাপনের হার বেশি হয়। প্রকৃত ল্যাবরেটরির নিরাপদ পরিবেশে একটি পরীক্ষায় এটি দেখানো হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাটির জন্য দুই মুখ খোলা একটি লম্বা কাচনল নেয়া হয়।



তারপর ছবিতে দেখানো উপায়ে এক খন্ড তুলাকে ঘন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) দ্রবণে ভিজিয়ে লম্বা কাচনলের এক মুখে লাগানো হয়। অপর এক খন্ড তুলা অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH4OH) দ্রবণে ভিজিয়ে কাচনলটির অন্য মুখে লাগানো হয়। তখন HCl দ্রবণে 

ভেজানো তুলা থেকে HCl গ্যাস ও NH4OH দ্রবণে ভেজানো তুলা থেকে NH, গ্যাস বের হবে এবং কাচনলের ভেতরে তাদের ব্যাপন শুরু হবে।

কিছুক্ষণ পর HCl গ্যাস ও NH3 গ্যাস পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl) উৎপন্ন করতে শুরু করবে যেটি কাচনলের ভেতর সাদা ধোঁয়া হিসেবে দেখা যাবে। তবে দেখা যাবে যে, সাদা ধোঁয়া কাচনলের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে নেই, এটি NH4OH দ্রবণে ভেজানো তুলা থেকে দূরে এবং HCl দ্রবণে ভেজানো তুলার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এ থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে যে NH, গ্যাস HCl গ্যাসের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে বেশি দূরত্ব অতক্রম করেছে। NH3 গ্যাসের আণবিক ভর 17 এবং HCl গ্যাসের আণবিক ভর 36.5 

তাই NH3 গ্যাসের ব্যাপন হার HCl গ্যাসের ব্যাপন হার থেকে বেশি এবং এই গ্যাস বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে বা ব্যাপনের হার বেশি হয়েছে।

১.৩ নিঃসরণ (Effusion)

নিঃসরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো পাত্রে থাকা গ্যাস সরু ছিদ্রপথ দিয়ে পাত্রের ভিতরের উচ্চচাপের স্থান থেকে পাত্রের বাইরে নিম্নচাপের স্থানের দিকে সজোরে বেরিয়ে আসে। এই ধরনের সরু ছিদ্রকে অনেক সময় পিনহোল (pinhole) বলা হয়। এভাবে পাত্র থেকে গ্যাস বেরিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে পাত্রের ভিতরের এবং বাইরের চাপের পার্থক্য। ব্যাপনের বেলাতেও একই রকম ব্যাপার ঘটে, যখন এক জায়গার গ্যাস অন্য জায়গায় উপস্থিত হয়, কিন্তু সেখানে এটি ঘটে গ্যাসের ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে কিন্তু নিঃসরণের বেলায় এটি ঘটে 


গ্যাসের চাপের কারণে। অর্থাৎ ব্যাপনের ক্ষেত্রে চাপের কোন প্রভাব নেই কিন্তু নিঃসরণের বেলায় চাপের প্রভাব আছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো, ব্যাপনের ক্ষেত্রে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ উপযুক্ত মাধ্যমে সবদিকে ছড়িয়ে পরে কিন্তু নিঃসরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গ্যাসীয় পদার্থ গ্যাসীয় মাধ্যমে সরু ছিদ্রপথ দিয়ে বেশ বেগে বের হয়ে আসে।এবার নিঃসরণের কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক। ফুলানো বেলুনে একটি সূক্ষ্ম ফুটো করতে পারলে বেলুনের ভেতরের উচ্চ চাপে থাকা বাতাস 

সেই ছিদ্রপথে নিঃসরণের মাধ্যমে সবেগে বের হয়ে আসবে। ফুলানো বেলুনে ফুটো করার চেষ্টা করলে টানটান হয়ে থাকা বেলুনটি ফুটোর চারপাশে খুব দ্রুত সরে গিয়ে ফুটোটিকে বড় করে ফেলতে চায় বলে বেলুনটি ফেটে যায়। যেখানে ফুটো করা হবে সেখানে এক টুকরো স্কচ টেপ লাগিয়ে তার উপর আলপিন দিয়ে ফুটো করা হলে বেলুনটি আর ফেটে যাবে না। তখন বেলুন থেকে বাতাস ফুটো দিয়ে সবেগে বেরিয়ে 

আসতে থাকবে এবং ধীরে ধীরে বেলুনটি চুপসে যাবে। বেলুনের ভেতর বাতাসের চাপ, বেলুনের বাইরের বাতাসের চাপ থেকে বেশী বলে উচ্চচাপের কারণে ফুটো হওয়ার সাথে সাথে বেলুনের বাতাস অপেক্ষাকৃত নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে নিঃসরণ।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নিঃসরণের আরও উদাহরণ দেখতে পাই। যেমন, আমরা বিভিন্ন যানবাহনে জ্বালানী হিসাবে সিএনজি (CNG: Compressed Natural Gas) ব্যবহার করে থাকি। সিএনজি হচ্ছে মূলত উচ্চচাপে সংকুচিত মিথেন (CH4)গ্যাস। এক্ষেত্রে যানবাহন চালানোর সময় সিএনজি সিলিন্ডার থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরিত হয়ে গাড়ি বা যানবাহনের ইঞ্জিনে প্রবেশ করে। আবার আমরা আমাদের বাসাতেও অনেক সময় রান্নার কাজে জ্বালানী হিসাবে সিলিন্ডারে রক্ষিত গ্যাস ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে, আসলে 

প্রোপেন (C3H8) ও বিউটেন (C4H10) গ্যাসকে উচ্চচাপে সংকুচিত করে তরল অবস্থায় সিলিন্ডারে ভর্তি করে রাখা হয়। গ্যাসের চুলা জ্বালানোর সময় সিলিন্ডারের মুখ খুলে দেওয়া হলে এটি গ্যাসে পরিণত হয়ে সবেগে বের হয়ে আসে। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও নিঃসরণ ঘটে।

১.৪ পাতন এবং ঊর্ধ্বপাতন (Distillation and Sublimation)

পাতন (Distillation):

 তোমরা জান যে, তরল পদার্থকে তাপ প্রয়োগ করে বাষ্পে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে বাষ্পীভবন বলে। তোমরা সবাই নিশ্চয়ই কেতলিতে পানি গরম করার সময় পানিকে বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যেতে দেখেছো। আবার, বাষ্পকে শীতল করলে তা তরলে পরিণত হয়, যাকে আমরা ঘনীভবন বলি। শীতল করে রাখা কোমল পানীয়ের বোতলের গায়ে আমরা ছোট ছোট জলকণা দেখি, এখানে



জলীয় বাষ্প তার তাপশক্তি নির্গত করে ঠান্ডা হয়ে পানির কণায় পরিণত হয়। এটি ঘনীভবনের উদাহারন।অন্যদিকে পাতন হচ্ছে কোনো তরলকে তাপ দিয়ে বাষ্পে পরিণত করে তাকে পুনরায় শীতলীকরণের মাধ্যমে তরলে পরিণত করার প্রক্রিয়া। 

সুতরাং, পাতনকে নিম্নোক্তভাবে বলা যায়:

পাতন = বাষ্পীভবন + ঘনীভবন

(Distillation = Vaporization + Condensation)


উল্লেখ্য যে, পাতন প্রক্রিয়ায় কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না। কোনো মিশ্রণে একাধিক উপাদান থাকলে সে মিশ্রণ থেকে উপাদানসমূহকে 



বিশুদ্ধভাবে পেতে পাতন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। সুতরাং, এটি হচ্ছে মিশ্রণ থেকে কোনো উপাদানকে পৃথকীকরণ পদ্ধতি।

ল্যাবরেটরির নিরাপদ পরিবেশে যথাযথ পাত্র ব্যবহার করে পাতনের পরীক্ষা করা যায়। যেমন পানিতে অপদ্রব্য মেশানো থাকলে পাতনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানিকে আলাদা করে নেওয়া যায়। রাসায়নিক শিল্প কলকারখানাতেও ব্যাপকভাবে পাতন ব্যবহার করা হয়। যেমন তেলের খনি থেকে যে অপরিশোধিত তেল (Crude oil) উত্তোলন করা হয় সেগুলো পাতনের মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়। শুধু তাই নয় ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায় অপরিশোধিত তেল থেকে ভিন্ন ভিন্ন দ্রব্যকে আলাদা করা হয়। এই পদ্ধতিকে আংশিক পাতন (fractional distillation) বলে।

ঊর্ধ্বপাতন:

ঊর্ধ্বপাতন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো কঠিন পদার্থকে তাপ প্রয়োগ করলে সেটি তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। তোমরা হয়ত সবাই ন্যাপথালিনের নাম শুনেছো বা দেখেছো। কাপড়কে পোকা থেকে রক্ষা করতে সেখানে ন্যাপথালিন ব্যবহার করা হয়। এই ন্যাপথালিনকে তাপ দিলে সেটি প্রথমে তরল না হয়ে সরাসরি গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয়। ড্রাই আইস (Dry ice) হচ্ছে হিমায়িত কার্বন ডাইঅক্সাইডের একটি কঠিন রূপ ড্রাই আইস বায়বীয় বা গ্যাসীয় অবস্থায় তার কঠিন অবস্থা থেকে অধিক স্থিতিশীল। এটি যখন বাতাসের 

সংস্পর্শে আসে তখন সেটি কঠিন অবস্থা থেকে সরাসরি গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবর্তিত হয়। এটিও ঊর্ধ্বপাতনের আরেকটি উদাহরণ।এছাড়া, নিশাদল (NHCl), কর্পূর (C10H16O), আয়োডিন (I2), অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড (AlCl3), এই পদার্থগুলোকে  তাপ দিলে সেগুলো তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। এই পদার্থগুলোকে ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ বলা হয়।


ল্যাবরেটরির যথাযথ নিরাপদ পরিবেশে নিচের এই সহজ পরীক্ষাটি দিয়ে খুব সহজে ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা যায়।



একটি বিকারে কিছু পরিমাণ অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl) নিয়ে বিকারের খোলা মুখটি কাচের ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তারপর ঢাকনার উপর কিছু বরফখন্ড রাখা হয় যেন বাষ্পীকৃত আমোনিয়াম ক্লোরাইড ঠান্ডা হয়ে নিচে জমা হতে পারে। এবার বিকারে তাপ করলে দেখা যাবে কঠিন অবস্থার অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড গ্যাসীয় অবস্থায় পরিণত হচ্ছে। এই বাষ্পীকৃত বা গ্যাসীয় আমোনিয়াম ক্লোরাইড উঠে কাচের ঢাকনায় গিয়ে শীতল হয়ে পুনরায় কঠিন অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড হিসেবে ঢাকনার নিচে জমা হতে থাকবে। কোনো কঠিন 

পদার্থের মিশ্রণের মধ্যে যদি একটি ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ মিশ্রিত থাকে, তাহলে ঐ ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থকে মিশ্ৰণ থেকে সহজেই পৃথক করা যায়। যেমন খাবার লবণের (NaCl) সাথে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl) বা নিশাদল মিশ্রিত থাকলে ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়ায় নিশাদলকে আলাদা করা যাবে। আবার, আয়োডিন মিশ্রিত খাবার লবণ থেকে ঊর্ধ্বপাতন পদ্ধতিতে আয়োডিনকে আলাদা করা যায়। আমরা ইতিমধ্যে জানি যে, কঠিন অবস্থায় ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থে তাপ প্রয়োগ করতে থাকলে তা সহজেই বাষ্পীভূত বা গ্যাসীয় অবস্থায় পরিণত হয়। কাজেই আয়োডিন মিশ্রিত খাবার লবণে তাপ প্রয়োগ করলে আয়োডিন সহজেই বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। আবার ঐ বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তা কঠিন আয়োডিনে পরিণত হবে।

গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান মূলক

১।গলন বলতে কী ?   

উঃ কোনো তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থের গলে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে গলন বলে।

২। কোন অবস্থায় পদার্থেও কনাসমূহ গতিশীল থাকে?  

উঃ সকল অবস্থায় পদার্থের কণাসমূহ  গতিশীল থাকে। 

৩। পদার্থ সাধারণত কয় অবস্থায় থাকে?  

 উঃ পদার্থ সাধারণত তিন অবস্থায় থাকে। যথা- কঠিন , তরল ও বয়বীয়।

৪।তাপ প্রদানে পদার্থের কণাসমূহের বৈশিষ্ট্যেও কী পরিবর্তন ঘটে ?

উঃ গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং চলাচল বেড়ে যায়। 

৫। আন্তঃআণবিক শক্তি কী? 

  ্উঃ পদার্থের অণুসমূহের মধ্যকার আকর্ষণ শক্তিকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলে। 

৬। পদার্থ কী?   

উঃ পদার্থ হলো এমন একটি বস্তু যার নির্দিষ্ট আকার, আকৃতি ও ওজন আছে এবং বল প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে।

৭। তাপমাত্রা পরিবতনে পদার্থেও অণুর গঠনের কী পরিবর্তন ঘটে? 

 উঃ তাপমাত্রা পরিবর্তনে পদার্থের অণুর গঠনের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।     

৮। বরফে হিমাঙ্ক কত? 

উঃ বরফে হিমাঙ্ক 0C

৯। কোন অবস্থায় পদার্থেও কণাসমূহের আন্তঃআণবিক দূরুত্ব সবচেয়ে কম থাকে?

 উঃ কঠিন অবস্থায় পদার্থের কণাসমূহের আন্তঃআণবিক দূরুত্ব সবচেয়ে কম থাকে।

১০।বায়বীয় অবস্থায় চাপে আয়তনের কী পরিবর্তন ঘটে? 

উঃ বায়বীয় অবস্থায় চাপে আয়তনের অধিক মাত্রায় সংকোচন ঘটে।

MCQ-পদার্থের অবস্থা

১।নিচের কোন যৌগটির ব্যাপনের হার অপেক্ষাকৃত বেশি হবে?  

ক.NH3     খ.NO2

গ.H2S     ঘ.SO2 

উঃ ক

২।যার জড়তা আছে তাই- 

 ক. শক্তি   খ.পদার্থ  

 গ.জড় পদার্থ   ঘ.উপাদান   

উঃ খ

৩।কোনটি পদার্থ?   

ক.বাতাস   খ.আলো   

গ. তাপ   ঘ.তাপমাত্রা  

 উঃ ক

৪।নিচের কোন পদার্থেও আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে কম?   

ক.হাইড্রোজেন  খ.পানি  

 গ.সাধারন লবণ  ঘ.কেরোসিন তৈল  

উঃ ক

৫।পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম কী?  

ক.ইলেকট্রন   খ.অণু 

 গ.পরমাণু  ঘ.প্রোটন   

উঃ গ

৬।তিন অবস্থাতেইপদার্থেও কণাগুলো- 

ক. স্থির

 খ.গতিশিল  

গ.সমানভাবে গতিশিল 

 ঘ.কখনো স্থির কখনো গতিশিল

 উঃখ

৭।গন্ধ বের হয়ে কোন প্রক্রিয়ায় তা বিভিন্ন কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে- 

  ক. ব্যাপন   খ.অনুব্যাপন  গ.নিঃসরণ  ঘ.অভি¯্রবণ   উঃ ক

৮।ত্বকের ছিদ্রপথে গন্ধ বের হওয়াকে কী বলে?   

ক.ব্যাপন  

খ.নিঃসরণ 

গ.পরি¯্রাবণ   

ঘ.মিশ্রণ   

উঃ খ

৯।মোমের গলনে কোনটি পাওয়া অসম্ভব?   

ক.তাপ  খ.চাপ 

 গ.আলো  ঘ.জলীয় বাষ্প     

উঃখ

১০।সেন্টের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে কোন প্রক্রিয়ায় ?

 ক.দ্রবন   খ.ব্যাপন   

গ.অভি¯্রবন    ঘ.ব্রাউনীয় গতি   

উঃ খ

১১। কোনটির আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে কম?

  ক মোম  খ.পানি  

গ প্রোপেন ঘ. তুঁতে  

উঃ গ

১২। কোনটি উর্ধ্বপাতিত পদার্থ?   

ক. বালি 

 খ. চুন  

গ. পটাশিয়াম আয়োডাইড  

ঘ. আয়োডিন  

উঃ ঘ

১৩। কোন গ্যাসটির ব্যাপনের হার বেশি ?  

ক.ইথিন        খ.ইথেন  

গ. প্রোপিন   ঘ. প্রোপেন  

উঃক

১৪। ফলের সুগন্ধ ছড়ায় কোন প্রক্রিয়ায়?   

ক.নিঃসরণ     

 খ.ব্যাপন 

গ. অণু ব্যাপন 

 ঘ. অভিস্রবণ

উঃ খ   

১৫। কোন  ক্ষেত্রে ব্যাপন  অসম্ভব? 

  ক. গ্যাসীয়-গ্যাসীয়  

খ. তরল-তরল  

গ. কঠিন -তরল  

ঘ.কঠিন-কঠিন  

উঃঘ








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url