এইচ এস সি পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র স্থির তড়িৎ Elecrostatics

 স্থির তড়িৎ

Elecrostatics



ভূমিকা (Introduction)

যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৬০০ বছর পূর্বে গ্রিক দার্শনিক থেলস্ (Thales: 640-548 B.C) সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন যে,  সোলেমানী পাথর বা অ্যাম্বার (Amber পাইন গাছের শক্ত আঠা) দিয়ে রেশমি কাপড়কে ঘষলে অ্যাম্বার ছোট ছোট  কাগজের টুকরাকে আকর্ষণ করে। ড. উইলিয়াম গিলবার্ট (William Gilbert: 1540-1603 ) পরবর্তীতে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেন এবং পরীক্ষার সাহায্যে দেখান যে, শুধু অ্যাম্বার-ই নয় আরো অনেক পদার্থ; যেমন- রবার, কাচ,  ইবোনাইট, ফ্লানেল প্রভৃতিকে ঘষলেও এরূপ ঘটনা ঘটে,

তিনি পদার্থের এ ধর্মের নাম দেন তড়িতাহিতকরণ বা  বিদ্যুতাহিতকরণ (Electrification) আর ঘর্ষণের ফলে অ্যাম্বারে সৃষ্ট অদৃশ্য শক্তির নাম দেন তড়িৎ বা ইলেকট্রিসিটি 
(Electricity)। গ্রিক ভাষায় ইলেকট্রন (Electron) অর্থ অ্যম্বার। ইলেকট্রিসিটি শব্দটি প্রকৃতপক্ষে গ্রিক শব্দ ইলেকট্রন থেকে  নেয়া হয়েছে। কোনো বস্তুতে আধানের সঞ্চার হয়ে তা ওই স্থানেই স্থির থাকলে বস্তুতে উৎপন্ন তড়িৎকে স্থির তড়িৎ বলে।  এ ইউনিটে আমরা স্থির আধানের প্রকৃতি, কুলম্বের সূত্র, গাউসের সূত্র ও তাদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব। এর সাথে  থাকছে তড়িৎ দ্বিমেরু, ধারক এবং ধারকের সংযোগ নিয়ে আলোচনা। 

সূচিপত্র

পাঠ-১.১ : আধান: কুলম্বের সূত্র (Charge : Coulomb’s Law)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • আধান কী ব্যাখ্যা করতে পারবে;
  • আধানের কোয়ান্টায়ন ও সংরক্ষণশীলতার ধর্ম ব্যাখ্যা করতে পারবে;
  • দুটি বিন্দু আধানের বল সংক্রান্ত কুলম্বের সূত্র বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করতে পারবে।

১.১.১ আধান (Charge) 

আধান: অ্যাম্বারকে রেশমী কাপড় দিয়ে ঘষলে এতে আধান বা চার্জ উৎপন্ন হয়। ঘর্ষণের ফলে কোন বস্তুতে  যার উপস্থিতিতে, সে বস্তু দ্বারা অন্য কোনো বস্তু বা বস্তুকণাকে আকর্ষণ করার শক্তির সঞ্চার হয় তাকে আধান  বা চার্জ বলে। 
তড়িতাহিতকরণ: ঘর্ষণের ফলে প্রত্যেক বস্তুই অন্য বস্তুকে কম-বেশি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করার শক্তি অর্জন করে। এ  ঘটনাকে তড়িতাহিতকরণ বলে।
তড়িতাহিত বস্তু: ঘর্ষণের ফলে যে বস্তু অন্য কোনো বস্তুকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করার ক্ষমতা অর্জন করে, তাকে তড়িতাহিত  বস্তু বলে। 
তড়িৎ: স্থির বা গতিশীল আধানের প্রকৃতি ও প্রভাব বা ক্রিয়াকে তড়িৎ বলে।

তড়িৎ-এর প্রকারভেদ: 
তড়িৎ দুই প্রকার, যথা- স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ।
স্থির তড়িৎ : স্থির আধানের প্রভাব বা ক্রিয়াকে স্থির তড়িৎ বলে। 
চল চড়িৎ: গতিশীল আধানের প্রভাব বা ক্রিয়াকে চল তড়িৎ বলে। 

আমরা জানি, সকল পদার্থই অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা তৈরি। এ ক্ষুদ্র কণাকে পরমাণু বলে। পরমাণুসাধারণত তিনটি  মৌলিক কণা: ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রনের সমন্বয়ে গঠিত। এদের মধ্যে কেবলমাত্র ইলেকট্রনই মৌলিক কণিকা।  পরমাণুতে একটি ক্ষুদ্র অথচ তুলনামূলকভাবে ভারী কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস (nucleus) রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে প্রোটন ও  নিউটন। প্রোটন ধনাত্মক চার্জযুক্ত কিন্তু নিউট্রন চার্জবিহীন বা চার্জ নিরপেক্ষ (nucleus)। এ নিউক্লিয়াসকে বেষ্টন করে  বিভিন্ন কক্ষে ছড়িয়ে আছে ইলেকট্রণ (চিত্র ১.১)।


সমস্ত ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের সাথে তড়িৎ বল দ্বারা আকৃষ্ট থাকে। পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন বা  ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াস থেকে দূরবর্তী হওয়ায় এদের উপরে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল তুলনামূলকভাবে খুবই কম, ফলে  এরা নিউক্লিয়াসের সাথে হালকভাবে আবদ্ধ থাকে। ঘর্ষণ, তাপ প্রয়োগ, তড়িৎ আকর্ষণ ইত্যাদি দ্বারা এদেরকে সহজেই  পরমাণু থেকে মুক্ত করা যায়।

এ ইলেকট্রণগুলোকে মুক্ত ইলেকট্রন বলে। তড়িৎ নিরপেক্ষ পরমাণু অপর কোনো পরমাণুকে 
ইলেকট্রন দান করলে, যে পরমাণু ইলেকট্রন দান করে তাকে ধনাত্মক তড়িতাহিত বস্তু বলে এবং দানকারী পরমাণুর এ  অবস্থাকে বলা হয় ধনাত্মক তড়িতাহিত হওয়া। অপরক্ষে যে পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে ঋণাত্মক তড়িতাহিত  বস্তু বলে এবং গ্রহণকারী পরমাণুর এ অবস্থাকে বলা হয় ঋণাত্মক তড়িতাহিত হওয়া। 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সাধারণ অবস্থায় কাচদণ্ডের পরমাণুসমূহে প্রোটন এবং ইলেকট্রণের সংখ্যা সমান থাকায় তা তড়িৎ  নিরপেক্ষ থাকে। কাচদণ্ডকে রেশমের কাপড় দিয়ে ঘর্ষণের ফলে দণ্ডের পরমাণুসমূহ থেকে কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন  হয়ে রেশমের কাপড়ের সাথে যুক্ত হয়। রেশমের কাপড়ে ইলেকট্রন যুক্ত হওয়ায় এটি ঋণাত্মক তড়িতাহিত হয়।

 অন্যদিকে  কাচদণ্ডে ইলেকট্রন কমে যাওয়ায়, এতে ইলেকট্রনের সংখ্যার চেয়ে প্রোটনের সংখ্যা বেশি হয়, ফলে এটা ধনাত্মক  তড়িতাহিত হয়। একইভাবে প্লাস্টিক দণ্ডকে পশম দ্বারা ঘষলে পশম থেকে কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন হয়ে প্লাষ্টিক  দণ্ডে যাওয়ায় প্লাষ্টিক দণ্ডটি ঋণাত্মক তড়িতাহিত এবং পশম ধনাত্মক তড়িতাহিত হয়। ইবোনাইট দণ্ডনে ফ্লানেলের  সাথে ঘষলে ইবোনাইট দণ্ড ঋণাত্মক তড়িতাহিত এবং ফ্লানেল ধনাত্মক তরিতাহিত হয়।

কাচ বা ইবোনাইট দণ্ডকে ঘষলে যে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক আধানের উদ্ভব হচ্ছে তা কাচ বা ইবোনাইটের নিজস্ব বিশেষ  কোন ধর্মের জন্য নয়। কাচদণ্ডকে সকল বস্তু দিয়ে ঘষলেই যে এতে ধনাত্মক আধানের সঞ্চার হবে তা নয় অপরপক্ষে ইবোনাইট দণ্ডকে সকল বস্তু দিয়ে ঘষলে যে ঋণাত্মক আধানের সঞ্চার হবে তাও নয়। যেমন কাচদণ্ডকে রেশ দিয়ে ঘষলে  ধনাত্মক আধানে এবং পশম দিয়ে ঘষলে ঋণাত্মক আধানের উদ্ভব ঘটে। সুতরাং কোনো বস্তুতে কি আধানের উদ্ভব ঘটবে,  তা আপেক্ষিক এবং যে বস্তুদ্বয়ের মধ্যে ঘর্ষণ হচ্ছে তাদের পারস্পরিক প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। 

নিচে কিছু বস্তুর তালিকা (সারণি ১.১) প্রদান করা হল। তালিকায় উলে­খিত বস্তুরগুলির মধ্যে দু’টি বস্তুকে পরস্পরের  সাথে ঘসলে ধনাত্মক আধান এবং ঋণাত্মক আধানের সঞ্চার হয়।  তালিকায় যে বস্তর অবস্থান ওপরে সে বস্তুতে ধনাত্মক আধান এবং যে বস্তুর অবস্থান নিচে সেটি ঋণাত্মক আধানের  সঞ্চার হবে। 

আধানের কোয়ান্টায়ন

সুতরাং কোনো বস্তুতে কোনো আধানের মান নিরবচ্ছিন্ন হতে পারে না, আধান বিচ্ছিন্ন মানের বা ইলেকট্রনের আধানের  গুণিতক হবে। একে আধানের কোয়ান্টায়ন বলে। 

আধানের নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা

পৃথিবীতে মোট আধানের পরিমাণ সর্বদা একই থাকে। অর্থাৎ আধানের সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। কোন ভৌত প্রক্রিয়া যেমন  ঘর্ষণ, তাপ প্রয়োগ, তড়িৎ আকর্ষণ ইত্যাদি দ্বারা শুধুমাত্র এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে আধানের স্থানান্তর ঘটে, কিন্তু উভয়  বস্তুর মোট ইলেকট্রন এর প্রোটন সংখ্যার যোগফল একই থাকে। যেমন- কাচ দণ্ডকে রেশম কাপড় দ্বারা ঘসলে কাচদণ্ড থেকে কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন রেশম কাপড়ে চলে যায়, ফলে কাচদণ্ডে প্রোটনের সংখ্যা ইলেকট্রনের সংখ্যা থেকে বেশী  থাকে।

এ কারণে কাচদণ্ড ধনাত্মক চার্জযুক্ত ও রেশমের কাপড় সম পরিমাণে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত হয়। কিন্তু উভয়  বস্তু মিলিয়ে মোট প্রোটন এবং ইলেকট্রনের সংখ্যা একই থাকে। ঘর্ষণের ফলে নুতন কোন আধানের সৃষ্টি হয় না কেবল  এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে আধানের স্থানান্তর ঘটে।

বন্দু আধান
আহিত বস্তুগুলির আকার এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের তুলনায় খুবই ছোট হলে আহিত ঐ বস্তুগুলোকে বিন্দু চার্জ বলে। 

১.১.২ কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s Law)
তড়িৎ বল : একটি আহিত স্থির বস্তুর নিকট অন্য একটি আহিত বস্তু আনলে বস্তু দু’টির মধ্যে একটি বল কাজ করবে,  আহিত বস্তু দু’টি যদি সমধর্মী আধান অর্থাৎ দু’টি বস্তুই ধনাত্মক বা দু’টি বস্তুই ঋণাত্মক আধানে আহিত হয় তবে  পরস্পরের মধ্যে বিকর্ষণ বল কাজ করবে, আবার আহিত বস্তু দু’টি বিপরীতধর্মী অর্থাৎ একটি বস্তু ধনাত্মক আধানে এবং  অপর বস্তু ঋণাত্মক আধানে আহিত হয় তবে পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণ বল কাজ করবে, এ বিকর্ষণ বা আকর্ষণ বলকে  তড়িৎ বল বলে। 

দু’টি আধানের মধ্যবর্তী এ আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান নির্ভর করে, 
১. আধান দু’টির পরিমাণের উপর,
২. আধান দু’টির মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর,
৩. আধান দু’টি যে মাধ্যমে অবস্থিত তার প্রকৃতির উপর। 

কুলম্বের সূত্র 
১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী বিজ্ঞানী চার্লস অগাষ্টিন কুলম্ব, স্থির আধানে আহিত বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশল বলের একটি সূত্র  আবিষ্কার করেন যা তাঁর নাম অনুসারে ‘কুলম্বের সূত্র’ নামে পরিচিত।
সূত্র : কোনো নির্দিষ্ট মাধ্যমে দু’টি বিন্দু আধানের পারস্পরিক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান আধানদ্বয়ের গুণফলের  সমানুপাতিক এবং আধানের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। এই ক্রিয়াশীল বল আধানদ্বয়ের সংযোজক সরলরেখা  বরাবর ক্রিয়া করে।



যে কোন মাধ্যমে কুলম্বের সূত্র
আমরা জানি, দুটি আধানের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল শুধু আধানের পরিমাণ ও তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর নির্ভর  করে না, আধানদ্বয় যে মাধ্যমে অবস্থিত তার প্রকৃতির উপরও নির্ভর করে। মাধ্যমর যে তড়িৎ ধর্মের ওপর এ বল নির্ভর  করে তা হচ্ছে মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা। এখন যদি মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতাকে ε ( (Epsilon) দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং  আধান দুটি শূন্যমাধ্যমের পরিবর্তে ε ভেদনযোগ্যতা বিশিষ্ট কোনো মাধ্যমে অবস্থিত হলে কুলম্বের সূত্রের (১.২)  সমীকরণকে লেখা যায়-

তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক বা পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক ((Dielectric Constant)
আমরা জানি, দুটি আধানের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল শুধু আধানদ্বয়ের পরিমাণ ও তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর নির্ভর করে না, আধানদ্বয় যে মাধ্যমে অবস্থিত তার প্রকৃতির উপরও নির্ভর করে। আধানদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে কোনো অন্তরক পদার্থ  থাকলে, তাকে সাধারণভাবে পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যম (Dielectric medium) বলে। কোনো পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যমে নির্দিষ্ট  দূরত্বে দুটি নির্দিষ্ট আধানের মধ্যবর্তী বলের মান শূন্য মাধ্যমের চেয়ে কম হয়। 

সংজ্ঞা: দুটি আধানের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে শূন্যস্থানে ক্রিয়াশীল বল এবং ঐ দু’টি আধানের মধ্যে একই দূরত্বে কোনো  পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যমে ক্রিয়াশীল বলের অনুপাত ঐ মাধ্যমের জন্য ধ্রুব সংখ্যা হয়। এ ধ্রুব সংখ্যাকে ঐ মাধ্যমের তড়িৎ  মাধ্যামাঙ্ক বা পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বলা হয় একে ক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

১.১.৩ তড়িৎ বলের উপরিপাতন নীতি (Superposition principles of electric force)
কুলম্বের সূত্রে দুটি আধানের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দুটি আধানের পরিবর্তে যদি অনেকগুলো  আধান থাকে সেক্ষেত্রে একটি আধানকে বিবেচনায় নিয়ে, সে আধানের উপর অপর আধানগুলোর ক্রিয়াশীল বল পৃথকভাবে বের করে তাদের ভেক্টর যোগফল বের করলেই উক্ত আধানের উপর নিট (net) বল পাওয়া যাবে। একে বলা হয় তড়িৎ  বলের উপরিপাতন নীতি।




সারসংক্ষেপ 

আধান: ঘর্ষণের ফলে কোনো বস্তুতে যার উপস্থিতিতে, সে বস্তু দ্বারা অন্য কোনো বস্তু বা বস্তু কণাকে আকর্ষণ করার  শক্তির উৎপন্ন হয় তাকে আধান বা চার্জ বলে। 
তড়িৎ: স্থির বা গতিশীল আধানের প্রকৃতি ও প্রভাব বা ক্রিয়াকে তড়িৎ বলে।
তড়িৎ দ্ইু প্রকার, যথা- স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ।
স্থির তড়িৎ: স্থির আধানের প্রভাব বা ক্রিয়াকে স্থির তড়িৎ বলে।
চল তড়িৎ: গতিশীল আধানের প্রভাব বা ক্রিয়াকে চল তড়িৎ বলে।
কুলম্বের সূত্র : কোনো নির্দিষ্ট মাধ্যমে দু’টি বিন্দু আধানের পারস্পরিক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান আধানদ্বয়ের  গুণফলের সমানুপাতিক এবং আধানের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। এই ক্রিয়াশীল বল আধানদ্বয়ের  সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে। 

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন


 পাঠ-১.১ : ১.খ ২.ক ৩.গ ৪.খ 

পাঠ-১.২:তড়িৎ ক্ষেত্র : তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভব

(Electric Field : Intensity of Electric Field and Electric Potential)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • তড়িৎ ক্ষেত্র ব্যাখ্যা করতে পারবে;
  • তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর প্রাবল্য ব্যাখ্যা করতে পারবেন এবং কোনো বিন্দুর প্রাবল্যের জন্য রাশিমালা নির্ণয় করতে পারবে;
  • তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভব ব্যাখ্যা করতে পারবেন এবং কোনো বিন্দুর বিভবের জন্য রাশিমালা নির্ণয় করতে পারবে;
  • তড়িৎ প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভবের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারবে;
  • সমবিভব তল ব্যাখ্যা করতে পারবে।
১.২.১ তড়িৎ ক্ষেত্র (Electric Field)
আহিত বস্তুগুলোর মধ্যে ক্রিয়াশীল বল ব্যাখ্যা করার জন্য সর্বপ্রথম মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ ক্ষেত্রের ধারণা  উপস্থাপনা করেন। একে তড়িৎ ক্ষেত্র তত্ত্ব বা সংক্ষেপে ক্ষেত্র তত্ত্ব বলে। এই ধারণা অনুসারে, কোনো আহিত  বস্তুর চারপাশে একটি অঞ্চলব্যাপী তার একটি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রভাব বলতে বুঝায় যে, ঐ অঞ্চলের  মধ্যে অন্য একটি আহিত বস্তু স্থাপন করলে দ্বিতীয় আহিত বস্তুটি একটি বল অনুভব করবে। আহিত বস্তুর চারপাশে যে  অঞ্চল জুড়ে এই প্রভাব বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলই এই আহিত বস্তুর তড়িৎ ক্ষেত্র। 

সুতরাং “একটি আহিত বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চলব্যাপী তার প্রভাব বিদ্যমান থাকে অর্থাৎ অন্য কোনো আহিত বস্তু স্থাপন করলে  সেটি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল লাভ করে, সে অঞ্চলকে ঐ আহিত বস্তুর তড়িৎ বলক্ষেত্র বা তড়িৎক্ষেত্র বলে।” বলের প্রকৃতি আকর্ষক বা বিকর্ষক হবে তা নির্ভর করবে দ্বিতীয় আহিত বস্তুটির প্রকৃতির উপর। দ্বিতীয় আহিত বস্তুটি প্রথম  আহিত বস্তুর সমধর্মী হলে বল বিকর্ষক হবে আর যদি দ্বিতীয় আহিত বস্তুটি প্রথম আহিত বস্তুর বিপরীতধর্মী হয়, তবে বল  আকর্ষক হবে।

কোন আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্র তাত্তি¡ক অর্থে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হবে; কিন্তু বাস্তবে আহিত  বস্তু কর্তৃক সৃষ্ট এ প্রভাব একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে প্রভাব এত ক্ষীণ যে, তা  পরিমাপযোগ্য হয় না, এ প্রভাবের মাত্রা বা পরিমাণ তড়িৎক্ষেত্রের বিভিন্ন বিন্দুতে বিভিন্ন হয়। 


১.২.২ তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য 
(Intensity of Electric Field)

তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য সম্পর্কে জানার আগে আমরা পরীক্ষণীয় আধান কি তা জেনে নেই। পরীক্ষণীয় আধান বা টেষ্ট চার্জ  একটি অতিক্ষুদ্র মানের কাল্পনিক আধান যা চারপাশের অন্য কোনো আধানকে প্রভাবিত করে না বা তার উপর কোনো বল  প্রয়োগ করে না। 

আমরা পূর্বেই জেনেছি যে, তড়িৎক্ষেত্রের সকল বিন্দুতে আহিত বস্তু কর্তৃক সৃষ্ট প্রভাব সমান থাকে না। বিভিন্ন বিন্দুতে এর  প্রভাব বিভিন্ন হয়। আহিত বস্তুর নিকটতম বিন্দুর জন্য এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি হবে। এ প্রভাব বোঝার জন্য তড়িৎ  ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি পরীক্ষাণীয় আধান স্থাপন করা হয়।

 এখন পরীক্ষণীয় আধানের ওপর তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা সৃষ্ট  বল দ্বারা এই তড়িৎ প্রভাব পরিমাপ করা হয়। তড়িৎ ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিন্দুতে পরীক্ষণীয় আধানটি স্থাপন করলে বিভিন্ন  বিন্দুতে পরীক্ষণীয় আধানটি ভিন্ন ভিন্ন মানের বল অনুভব করে, আবার তড়িৎ ক্ষেত্রের একই বিন্দুতে ভিন্ন মানের  পরীক্ষণীয় আধান স্থাপন করলে, পরক্ষণীয় আধান এবং আহিত বস্তুর মধ্যে ভিন্ন মানের বল ক্রিয়া করবে।

এই পরীক্ষণীয়  আধানটি হচ্ছে একক ধনাত্মক আধান অর্থাৎ এক কুলম্ব মানের একটি ধনাত্মক আধান। তড়িৎ ক্ষেত্রের এই প্রভাব বা সবলতাকে যে রাশির সাহায্যে পরিমাপ করা হয় তাকে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বা সংক্ষেপে  তড়িৎ প্রাবল্য বা তীব্রতা (Electric Field intensity or Electric Field Strength) বলে। একে দিয়ে প্রকাশ করা হয়।  তড়িৎ প্রাবল্য : তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে  ঐ বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য বলে।
 




১.২.৩ চার্জের তল ঘনত্ব বা আধান ঘনত্ব 
(Suface Charge Density)

পরিবাহীতের আধানের অবস্থান
আমরা জানি, কোনো পরিবাহককে আধানের অবস্থান পরিবাহিকে আহিত করলে আধান পরিবাহীর অভ্যন্তরে না ছড়িয়ে  পরিবাহীর বাইরের পৃষ্ঠে অবস্থান করে। কিন্তু পরিবাহী পৃষ্ঠের সর্বত্র আধান সমান থাকে না। পৃষ্ঠের কোন অংশে কী  পরিমাণ আধান থাকবে তা নির্ভর করে পরিবাহীর আকার, আকৃতি, অন্যান্য পরিবাহী বা অন্তরকের উপস্থিতির উপর।  সাধারণত পরিবাহীর যে অংশের বক্রতা বা তীক্ষতা বেশি সে অংশে বেশি আধান অবস্থান করে। আধানের ঘনত্বের  সাহায্যে পরিবাহকের অনেক বিভিন্ন অংশের আধান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 
আধান ঘনত্ব
কোনো আহিত পরিবাহকের পৃষ্ঠের কোন বিন্দুর চারদিকে প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপরস্থ আধানের পরিমাণকে ঐ বিন্দুতে  আধান ঘনত্ব হবে। একে আধানের তলমাত্রিক বা পৃষ্ঠমাত্রিক ঘনত্ব বলে।


১.২.৪ তড়িৎ বলরেখা 

(Electric Lines of Force)


বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করার জন্য তড়িৎ বলরেখার অবতারণা করেন। একটি ধনাত্মক আধানকে কোনো তড়িৎক্ষেত্রে স্থাপন করলে এটি বল লাভ করবে। আধানটি মুক্ত হলে, এটি বল লাভের ফলে স্থির না  থেকে একটি নির্দিষ্ট পথে চলবে। ধনাত্মক আধানটির এই চলার পথই বলরেখা। তড়িৎ বলরেখার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। এ রেখাগুলো কাল্পনিক বলরেখা থেকে তড়িৎ প্রাবল্যের ধারণা পাওয়া যায়। তড়িৎ বলরেখার কোনো বিন্দুতে অঙ্কিত  স্পর্শক ঐ বিন্দুতে একটি ধনাত্মক আধানের উপর ক্রিয়াশল লব্ধি বলের দিক অর্থাৎ প্রাবল্যের দিক নির্দেশ করে।

 তড়িৎ  বলরেখার সাথে লম্বভাবে স্থাপিত কোনো তলের একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত বলরেখার সংখ্যা তড়িৎ প্রাবল্যের  সমানুপাতিক। 

তড়িৎ বলরেখার ধর্ম: তড়িৎ বলরেখার ধর্ম নিম্নে বর্ণনা করা হলো: 
১. তড়িৎ বলরেখা খোলা বক্র রেখা।
২. তড়িৎ বলরেখাগুলো ধনাত্মক আধান থেকে উৎপন্ন হয়ে ঋণাত্মক আধানে শেষ হয়। পরিবাহীর অভ্যন্তরে কোনো  বলরেখা থাকে না। 
৩. বলরেখাগুলো পরস্পরকে ছেদ করে না। 
৪. বলরেখাগুলো পরস্পরের উপর পার্শ্বচাপ প্রয়োগ করে। 
৫. বলরেখাগুলো স্থিতিস্থাপক বস্তুর মতো দৈর্ঘ্য বরাবর সংকুচিত হয়। 
৬. বলরেখাগুলো ধনাত্মক আধানে আহিত পরিবাহীর পৃষ্ঠ থেকে লম্বভাবে বের হয় আর ঋণাত্মক পরিবাহীর পৃষ্ঠের সাথে  লম্বভাবে প্রবেশ করে।


কয়েকটি তড়িৎ বলরেখার মানচিত্র 
নিচে কয়েকটি তড়িৎক্ষেত্রের বলরেখা বর্ণনা করা হলো, আলোচনার সুবিধার্থে পরিবাহীগুলোকে গোলাকার ধরা হয়েছে: 
১. একটি পৃথক ধনাত্মক আধানের জন্য বলরেখার চিত্র (১.৬ক)। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো পরিবাহীর পৃষ্ঠ থেকে লম্ব  বরাবর সুষমভাবে বের হয়েছে। 
২. একটি পৃথক ঋণাত্মক আধানের জন্য বলরেখার (চিত্র ১.৬খ)। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো পরিবাহীর পৃষ্ঠে লম্ব বরাবর সুষমভাবে প্রবেশ করে।
৩. দুটি সমান ও বিপরীতধর্মী আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখা (চিত্র ১.৬গ)। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো ধনাত্মক  আধান থেকে বের হয়ে ঋণাত্মক আধানে প্রবেশ করে। 
৪. দুটি ধনাত্মক সমান আধানের জন্য বলরেখা (চিত্র ১.৬ঘ)। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাবে, ফলে দুই আধানের মাঝখানে কোনো বলরেখা থাকে না, এ স্থানকে চিত্রে ঢ চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে। এ স্থানে  কোনো আধান স্থাপন করলে সেটি কোনো বল লাভ করবে না, এ বিন্দুকে নিরপেক্ষ বিন্দু বলে। 
৫. সমান মানের দুটি ঋণাত্মক আধান পাশাপাশি স্থাপন করলে (চিত্র ১.৬ঙ), উপরে বর্ণিত পাশাপাশি দুটি ধনাত্মক  আধানের মত একই আচরণ প্রদর্শন করবে। 
৬. দুটি অসমান ধনাত্মক আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রে বলরেখা (চিত্র ১.৬চ)। এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বিন্দু ঘ ক্ষুদ্রতর  আধানের নিকটবর্তী হয়।

সুষম তড়িৎক্ষেত্র (Uniform Electric Field)

কোনো তড়িৎক্ষেত্রের সকল বিন্দুতে যদি তড়িৎ প্রাবল্যের মান সমান ও দিক একই হয়, তবে ঐ তড়িৎক্ষেত্রকে সুষম  তড়িৎক্ষেত্র বলে। সুষম তড়িৎক্ষেত্রের বলরেখাগুলো পরস্পর সমান্তরাল ও সম-ঘনত্ববিশিষ্ট হয়, সমঘনত্বের সমান্তরাল  সরলরেখা এঁকে তাতে একই দিকে তীরচিহ্ন দিয়ে সুষম তড়িৎক্ষেত্র নির্দেশ করা হয় (চিত্র ১.৭)। কোন আধান থেকে বহু  দূরে খুব অল্প জায়গাকে সুষম তড়িৎক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা যায়।


১.২.৫ তড়িৎ বিভব 
(Electric Potential)

দুটি আহিত বস্তুকে একটি পরিবাহী তার দ্বারা সংযোগ করলে তাদের মধ্যে আধানের আদান-প্রদান হতে পারে।  কিন্তু আহিত বস্তু দুটির কোন্টি হতে কোন্টিতে আধান যাবে তা বস্তু দুটির আধানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না,  নির্ভর করে বস্তুদ্বয়ের তড়িৎ অবস্থার ওপর। সুতরাং যে তড়িতাবস্থা আহিত বস্তু দুটির মধ্যে আধানের আদান-প্রদানের দিক  নির্ধারণ করে তাকে তড়িৎ বিভব বলে। বস্তু দু’টির মধ্যে বিভব পার্থক্য থাকলে অর্থাৎ তড়িৎ সাম্যাবস্থা সৃষ্টি না হওয়া  পর্যন্ত আধানের প্রবাহ চলতে থাকবে। যে আহিত বস্তুর বিভব বেশি তা থেকে কম বিভবের বস্তুতে ধনাত্মক আধান  প্রবাহিত হবে। অন্যভাবে কম বিভবের পরিবাহী হতে বেশি বিভবের পরিবাহীতে ঋণাত্মক আধান প্রবাহিত হবে।

তরল পদার্থের উচ্চতার সাথে তড়িৎ বিভবের সাদৃশ্য: 
১.৮ চিত্রে A ও B দুটি পাত্র একটি সংযোগ নল দ্বারা যুক্ত আছে। সংযোগ নলটি স্টপ কক- C- এর মাধ্যমে খোলা বা বন্ধ  করা যায়। সংযোগ নল বন্ধ রেখে A ও B পাত্রে পানি ঢালা হয়। A পাত্রের ব্যাস কম থাকায় এতে অল্প পানি ঢালা হলেও  পানির উচ্চতা অধিক হবে। A পাত্রে এ যে পরিমাণ পানি ঢালা হয়েছে, একই পরিমাণ পানি B পাত্রে ঢাললেও, B পাত্রে  পানির উচ্চতা A পাত্রের পানির উচ্চতার চেয়ে কম হবে, এখন স্টপ কক C খুলে দিলে পানি A পাত্র থেকে B পাত্রে  প্রবাহিত হবে।

 উভয় পাত্রে পানির উচ্চতা সমান না হওয়া পর্যন্ত এ প্রবাহ চলতে থাকবে। পানি কোন্ দিক থেকে কোন্দিকে প্রবাহিত হবে তা নির্ভর করবে পানির উপরিতলের উচ্চতার উপর। সুতরাং এ থেকে বোঝা যায় যে, পানির প্রবাহ নির্ভর করছে মোট পানির পরিমাণের উপর নয় এবং নির্ভর করছে পানির উচ্চতার উপর। একইভাবে দুটি আহিত বস্তুর  ক্ষেত্রে আধান কোনদিকে প্রবাহিত হবে তা নির্ভর করে বস্তুর বিভবের ওপর, বস্তু দুটির আধানের পরিমাণের উপর নয়।
সংজ্ঞা: বিভব হচ্ছে আহিত পরিবাহীর তড়িৎ অবস্থা যা অন্য পরিবাহীর সঙ্গে তড়িৎগতভাবে সংযোগ দিলে আধান আদান প্রদান করবে কিনা তা এবং প্রবাহের দিক নির্ণয় করে।
শূন্য, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বিভব:
কোনো আহিত পরিবাহীকে ভূ-সংযুক্ত করলে তার বিভব শূন্য হয়। সংযুক্ত অবস্থায় পৃথিবী ও পরিবাহী একত্রে একটি  পরিবাহীতে পরিণত হয়। আধানহীন পরিবাহীর বিভবকে শূন্য ধরা হয়। ধনাত্মক আধানে আহিত পরিবাহীর বিভব ধনাত্মক  এবং ঋণাত্মক আধানে আহিত পরিবাহীর বিভব ঋণাত্মক।
একটি পরিবাহী ধনাত্মক আধানে এবং অপরটি ঋণাত্মক আধানে আহিত। ধনাত্মক আধানে আহিত বস্তুটির বিভব উচ্চ  এবং ঋণাত্মক আধানে আহিত বস্তুটির বিভব নিম্ন আধানের প্রবাহ সবসময়ই উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে হবে। 

দুটি পরিবাহীই যদি ধনাত্মক আধানে আহিত হয় সেক্ষেত্রে যে পরিবাহীতে ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ কম সেটির বিভব উচ্চ এবং যে পরিবাহীতে ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ বেশি সেটির বিভব নিম্ন হবে। আমরা জানি, আধান সর্বদা উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবে প্রবাহিত হয় সুতরাং এদেরকে যদি পরিবাহী তার দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তবে কম ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট পরিবাহী থেকে বেশি ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট পরিবাহীর দিকে তড়িৎ প্রবাহিত হবে। 

তড়িৎ ক্ষেত্রের বিভব (Potential of Electric Field)

আমরা জানি, একটি আহিত বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চল জুড়ে এর প্রভাব থাকে তাকে ঐ আহিত বস্তুটির তড়িৎক্ষেত্র বলে।  তড়িৎক্ষেত্রের প্রতিটি বিন্দুর যেমন প্রাবল্য থাকে তেমনি বিভবও থাকে। তড়িৎ প্রাবল্য থেকে আমরা জানতে পারি,  তড়িৎক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে আধান স্থাপন করলে সেটি কোন দিকে এবং কত বল লাভ করব। তড়িৎ বিভব থেকে আমরা  জানতে পারি, তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি মুক্ত আধান স্থাপন করলে সেটি কোন দিকে চলবে, ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানের দিকে নাকি  ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধান থেকে দূরে সরে যাবে। 

কোনো আহিত বস্তুর তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে একটি আধানকে এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থাপন করলে কিছু কাজ সম্পাদিত  হয়। তড়িৎক্ষেত্রটি যদি ধনাত্মক আধান দ্বারা সৃষ্ট ক্ষেত্রে হয় তবে অন্য একটি ধনাত্মক আধানকে বস্তুর দিকে আনতে  বিকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। অন্যদিকে তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানটি যদি ঋণাত্মক হয়, তবে ধনাত্মক  আধানকে বস্তুর দিকে আনতে আকর্ষণ বল দ্বারা কাজ সম্পন্ন হবে।

সংজ্ঞা: শূন্য বিভবের কোনো স্থান থেকে বা অসীম দূরত্ব থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে  আনতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব বা বিভব বলে। 
মনে করি, অসীম দূরত্ব থেকে একটি পরীক্ষণীয় আধান q কে তড়িৎক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে আনতে w পরিমাণ কাজ সম্পন্ন  হয়, ঐ বিন্দুর বিভব v হলে, 


















সারসংক্ষেপ 

তড়িৎ ক্ষেত্র : একটি আহিত বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চলব্যাপী তার প্রভাব বিদ্যমান থাকে অর্থাৎ অন্য কোন আহিত  বস্তু স্থাপনে সেটি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল লাভ করে, সে অঞ্চলকে ঐ আহিত বস্তুর তড়িৎ বলক্ষেত্র বা তড়িৎ ক্ষেত্র  বলে। 
তড়িৎ প্রাবল্য : তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে  তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য বলে। 
তড়িৎ বিভব : শূন্য বিভবের কোনো স্থান থেকে বা অসীম দুরত্ব থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব বা বিভব বলে।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন


পাঠ-১.২ : ১.গ ২.ক ৩.গ ৪.খ

পাঠ-১.৩ : তড়িৎ দ্বিমেরু (Electric dipole)


এই পাঠ শেষে তুমি-
  • তড়িৎ দ্বিমেরু ব্যাখ্যা করতে পারবে। 
  • তড়িৎ দ্বিমেরুর জন্য তার অক্ষের উপর কোনো বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্যের রাশিমালা নির্ণয় করতে পারবে। 
  • তড়িৎ দ্বিমেরুর জন্য তার অক্ষের উপর কোনো বিন্দুতে তড়িৎ বিভবের রাশিমালা নির্ণয় করতে পারবে। 
  • তড়িৎ দ্বিমেরুর জন্য তার দৈর্ঘ্যরে লম্ব সমদ্বিখণ্ডকের উপর অবস্থিত কোনো বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্যের রাশিমালা নির্ণয় করতে পারবে।
  • তড়িৎ দ্বিমেরুর জন্য তার দৈর্ঘ্যরে লম্ব সমদ্বিখণ্ডকের উপর অবস্থিত কোনো বিন্দুতে তড়িৎ বিভবের রাশিমালা নির্ণয় করতে পারবে।










পাঠ-১.৪ : ধারকত্ব

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • পরিবাহকের ধারকত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবেন;
  • গোলাকার পরিবাহকের জন্য ধারকত্ব নির্ণয় করতে পারবেন;
  • দুটি পরিবাহীর মধ্যে ধারকত্ব অনুসারে আধান বণ্টন ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
১.৪.১ পরিবাহীর ধারকত্ব (Capacitance of a Conductor)


১.৪.৩ তড়িৎ ধারক (Electric Capacitor)
সাধারণভাবে ‘ধারক’ বলতে বুঝায় ‘ধারণকারী’ বা যে ধারণ করে, যে বস্তু আধান ধরে রাখতে পারে তাকে ধারক বলে।  কোনো পরিবাহীর এ আধান ধরে রাখার ক্ষমতা অসীম নয়, কারণ প্রত্যেক পরিবাহীর একটি নির্দিষ্ট মাত্রার আধান ধারণের  ক্ষমতা রয়েছে। এ নির্দিষ্ট মাত্রার অতিরিক্ত আধান প্রদান করলে পরিবাহীটি ক্রমশ আধান হারাতে থাকবে, কোনো উপায়  বা ব্যবস্থায় পরিবাহীর বিভব যদি কমানো যায় তবে পরিবাহীটি নির্দিষ্ট মাত্রার অতিরিক্ত কিছু আধান ধরে রাখার ক্ষমতা  অর্জন করে, স্থির তড়িৎ বিদ্যায় ধারকত্ব বৃদ্ধি করার এ কৃত্রিম উপায় বা ব্যবস্থা বা কৌশলকে ধারক বলে। সাধারণত একটি  অন্তরীত ও অপর একটি ভূ-সংযুক্ত পরিবাহকের স্থানে কোনো অন্তরক পদার্থ যেমন- বায়ু,কাচ, প্লাস্টিক ইত্যাদি স্থাপন  করে ধারক তৈরি করা হয়, পরিবাহী দুটিকে ধারক পাত এবং অন্তরক পদার্থকে ডাইইলেকট্রিক পদার্থ বলে।

সারসংক্ষেপ 

পাঠ-১.৫ : ধারক : ধারকের সন্নিবেশ ও শক্তি

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • ধারক ও ধারকের ধারকত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবে;
  • সমান্তরাল পাত ধারকের ধারকত্বের রাশিমালা প্রতিপাদন করতে পারবে;
  • ধারকের সন্নিবেশ ও তুল্য ধারকত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবে;
  • ধারকের শ্রেণি সন্নিবেশে তুল্য ধারকত্ব নির্ণয় করতে পারবে;
  • ধারকের সমান্তরাল সন্নিবেশে তুল্য ধারকত্ব নির্ণয় করতে পারবে;
  • ধারকের শক্তির রাশিমালা নির্ণয় করতে পারবে;












সারসংক্ষেপ 

ধারকের ধারকত্ব : কোনো ধারকের পাতদ্বয়ে যে পরিমাণ আধান জমা হলে এদের মধ্যে একক বিভব পার্থক্য বজায়  থাকে, তাকে ঐ ধারকের ধারকত্ব বলে। 
ধারকের সংযোগ : ব্যবহারিক কাজে প্রয়োজন অনুযায়ী ধারকত্ব পাওয়ার জন্য একাধিক ধারক একত্রে সংযুক্ত করা হয়,  একাধিক ধারককে একত্রে ব্যবহার করাকে ধারকের সংযোগ বা সমবায় বা সন্নিবেশ বলে। 
তুল্য ধারক ও তুল্য ধাকরত্ব : ধারকের কোনো সংযোগের পরিবর্তে একটি মাত্র ধারক ব্যবহার করলে যদি ধারকটির  আধান এবং পাতদ্বয়ের মধ্যে বিভব পার্থক্য সংযোগের আধান ও বিভব পার্থক্যের সমান থাকে, তবে ঐ ধারকটিকে ঐ  সংযোগের তুল্য ধারক বলে আর তার ধারকত্বকে ঐ সংযোগের তুল্য ধারকত্ব বলে।

বহুনির্বাচনি প্রশ



পাঠ-১.৫ : ১.ঘ ২.গ

পাঠ-১.৬ : গাউসের সূত্র (Gauss’s Law)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • ক্ষেত্র ভেক্টর, তড়িৎ ফ্লাক্স ও গাউসীয় তল ব্যাখ্যা করতে পারবে। 
  • গাউসের সূত্র বর্ণনা করতে পারবে। 
  • গাউসের সূত্র থেকে কুলম্বের সূত্র প্রতিপাদন করতে পারবে। 
  • কুলম্বের সূত্রের সীমাবদ্ধতা বর্ণনা করতে পারবে।
১.৬.১ গাউসের সূত্র (Gauss’s Law)





সারসংক্ষেপ

ক্ষেত্র ভেক্টর : কোনো পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলকে পদার্থবিজ্ঞানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি ভেক্টর দিয়ে গণ্য করা হয়। ক্ষেত্র ভেক্টরটির দৈর্ঘ্য দ্বারা তলটির ক্ষেত্রফলের মান সূচিত হয়। ক্ষেত্র ভেক্টরটির অভিমুখ ধরা হয় তলটির লম্ব বরাবর।
গাউসীয় তল : একটি আধানের চারদিকে কল্পিত বদ্ধ তলকে গাউসীয় তল বলে। গাউসীয় তল যে কোনো আকৃতির  হতে পারে। 
তড়িৎ ফ্লাক্স : তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো তলের ক্ষেত্রফলের সাথে ঐ তলের লম্ব বরাবর তড়িৎ ক্ষেত্রের উপাংশের গুণফলকে ঐ তলের সাথে সংশ্লিষ্ট তড়িৎ ফ্লাক্স বলে। 
গাউসের সূত্র : কোনো তড়িৎ ক্ষেত্রে কোনো বদ্ধ কল্পিত তলের (গাউসীয় তল) তড়িৎ ফ্লাক্সের ড় গুণ এবং ঐ তল দ্বারা  বেষ্টিত মোট তড়িতাধান সমান।

পাঠ-৭ : গাউসের সূত্র : এর ব্যবহার 
(Uses of Gauss’s Law)

এ পাঠ শেষে তুমি
  • অসীম দৈর্ঘ্যরে একটি সরল ও সুষম আহিত দণ্ডের জন্য এর নিকট তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয় করতে পারবে। 
  • সুষমভাবে আহিত একটি গোলাকার খোলকের জন্য তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয় করতে পারবে। 
  • সুষমভাবে আহিত একটি নিরেট গোলকের জন্য তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয় করতে পারবে। 
অসীম দৈর্ঘ্যরে একটি সরল ও সুষম আহিত দণ্ডের জন্য এর নিকটে তড়িৎ ক্ষেত্র তথা তড়িৎ প্রাবল্য

সুষমভাবে আহিত একটি গোলাকার খোলকের জন্য তড়িৎ প্রাবল্য







চূড়ান্ত মূল্যায়ন

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন



চূড়ান্ত মূল্যায়ন উত্তর
১.গ   ২.ক   ৩.খ   ৪.গ   ৫.গ   ৬.গ   ৭.খ   ৮.ঘ   ৯.ক   ১০.ক

গাণিতিক সমস্যা




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url