এস এস সি বাংলা ১ম পত্র মানুষ কাজী নজরুল ইসলাম

 

মানুষ

কাজী নজরুল ইসলাম

কবি-পরিচিতি



        সূচিপত্র


কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম দুখু মিয়া। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। নজরুল অল্প বয়সেই পিতামাতা দুজনকেই হারান। শৈশব থেকেই দারিদ্র্য আর দুঃখ-কষ্ট তাঁর সঙ্গী হয়েছিল। স্কুলের ধরাবাধা জীবনে কখনোই তিনি আকৃষ্ট হননি। ছেলেবেলায় তিনি লেটো গানের দলে যোগ দেন। পরে বর্ধমানে ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাইস্কুলে লেখাপড়া করেন।

 ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচিতে যান। যুদ্ধশেষে নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন ও সাহিত্যসাধনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯২১ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পর সাহিত্যক্ষেত্রে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর লেখায় তিনি বিদেশি শাসক, সামাজিক অবিচার ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নজরুল সাহিত্য রচনা ছাড়াও প্রায় চার হাজার গানের রচয়িতা। তিনি বেশ কয়েকটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। তিনি গজল, খেয়াল ও রাগপ্রধান গান রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। 

আরবি-ফারসি শব্দের সার্থক ব্যবহার তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ রচনায়ও তিনি কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। নজরুল ১৯৪০ সালের দিকে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭২ সালে কবিকে ঢাকায় আনা হয়। তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

নজরুলের প্রধান রচনা 

কাব্যগ্রন্থ : অগ্নি-বীণা, বিষের বাঁশী, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ফণিমনসা, ছায়ানট;

উপন্যাস : বাঁধনহারা, কুহেলিকা, মৃত্যুক্ষুধা;

গল্প : ব্যথার দান, রিক্তের বেদন;

প্রবন্ধ : যুগবাণী, রুদ্রমঙ্গল, দুর্দিনের যাত্রী, রাজবন্দীর জবানবন্দী।

ভূমিকা

‘মানুষ’ কবিতাটি বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সম্পাদনা করে সংকলিত হয়েছে। কবিতাটিতে মানব সেবার মধ্য দিয়েই যে মনুষ্যত্বের বড় পরিচয় নিহিত রয়েছে তা উপস্থাপন করা হয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মহিমা, ধর্মগ্রন্থ ও আচার অনুষ্ঠানের চেয়ে মানুষের গুরুত্ব এবং সমাজের তথাকথিত মোল্লা পুরোহিতদের স্বরূপ উন্মোচন করে কবি তার সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করেছেন এই কবিতাতে।

উদ্দেশ্য

এই পাঠটি পড়া শেষে তুমি-

  • সাম্যের ধারণার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ধর্মের বরাতে যারা মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করে, তাদের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে পারবে।

মূলপাঠ

 গাহি সাম্যের গান -

মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান

নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,

সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

‘পূজারী, দুয়ার খোলো,

ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো !’

স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,

দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয় !

জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কণ্ঠ ক্ষীণ--

ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোলো বাবা, খাইনি তো সাত দিন !’

সহসা বন্ধ হলো মন্দির, ভুখারি ফিরিয়া চলে,

তিমিররাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে !

ভুখারি ফুকারি’ কয়,

‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’

মসজিদে কাল শিরনি আছিল, - অঢেল গোস্ত রুটি

বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি,

এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন

বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন !’

তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা-‘ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,

ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে ! নমাজ পড়িস বেটা ?’

ভুখারি কহিল, ‘না বাবা !’ মোল্লা হাঁকিল-‘তা হলে শালা

সোজা পথ দেখ !’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা।

ভুখারি ফিরিয়া চলে,

চলিতে চলিতে বলে-

‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,

আমার ক্ষুধার অন্ন তা বলে বন্ধ করনি প্রভু।

তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি।

মোল্লা পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি !’

কোথা চেঙ্গিস, গজনি মামুদ, কোথায় কালাপাহাড় ?

ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া দ্বার !

খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা ?

সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা !

হায় রে ভজনালয়,

তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয় !

                                                                                               (সংক্ষেপিত)

নির্বাচিত শব্দের অর্থ 

ভে-- অভিন্ন; নির্বিশেষে। 

আজারি-- রুগ্ণ; ব্যথিত। 

কপাট-- দরজার পাল্লা। 

কালাপাহাড়-- প্রকৃত নাম রাজচন্দ্র বা রাজকৃষ্ণ; রাজনারায়ণ; কারো কারো মতে তিনি ব্রাহ্মণ ছিলেন। পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি অনেক দেবালয় ধ্বংস করেছেন। যারা পবিত্র উপাসনালয়ের দরোজা বন্ধ করে তাদের ধ্বংসের জন্য কবিতায় কালাপাহাড়কে আহ্বান জানানো হয়েছে। 

ক্ষুধার ঠাকুর--ক্ষুধার্ত মানুষকে দেবতাজ্ঞান করা হয়েছে। যেমন ‘অতিথি নারায়ণ’। 

ক্ষুধার মানিক জ্বলে-- ক্ষুধার্ত ব্যক্তির জঠরজ্বালা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। 

গজনি মামুদ-- গজনির সুলতান মাহমুদ। তিনি সতের বার ভারতবর্ষ আক্রমণ করে ধ্বংসলীলা চালান। এখানে তাঁকে উপাসনালয়ের ভন্ড দুয়ারিদের ধ্বংস করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

গো-ভাগাড়-- মৃত গরু ফেলার নির্দিষ্ট স্থান। 

চেঙ্গিস-- চেঙ্গিস খান; মঙ্গোলীয় দুর্ধর্ষ নেতা। 

জ্ঞাতি-- সগোত্র; স্বজন; একই বংশে জাত ব্যক্তি। 

ঠাকুর-- দেবতা। 

তিমির রাত্রি-- অন্ধকার রাত। 

তেরিয়া-- উদ্ধতভাবে; উগ্রভাবে। 

দ্বার-- দরজা; দুয়ার।

পান্থ-- পথিক। 

পুরুত-- পুরোহিত; পূজার্চনা পরিচালনার মুখ্য ব্যক্তি। 

পূজারী-- পূজাকারী; উপাসক; পুরোহিত। 

ফুকারি-- চিৎকার করে। 

বর--আশীর্বাদ; কারো কাছ থেকে কাক্সিক্ষত বস্তু বা বিষয়। 

ভজনালয়--উপাসনার গৃহ বা ঘর। 

ভন্ড-- কপট; ভানকারী। 

ভুখারি-- ক্ষুধার্ত ব্যক্তি। 

মহীয়ান--অতি মহান। 

মুসাফির-- সফরকারী; পথিক; আগন্তুক। 

শিরনি-- মুসলমান বা হিন্দু কর্তৃক সত্যপীর বা অন্য পীরের উদ্দেশ্যে নিবেদনের জন্য আটা, ময়দা, চিনি, কলা, পায়েস ইত্যাদির তৈরি ভোগ বিশেষ; ফিরনি। 

শীর্ণ-গাত্র-- রোগা শরীর পাতলা দেহ। 

সাম্য-- সমতা। 


সারসংক্ষেপ

মানব-সমাজে ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের ভেদ আছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় সত্য হল: মানুষ হিসেবে সবাই সমান। ক্ষুধার্ত পথিক খাবার চেয়েছিল মন্দিরে। সাতদিনের উপবাসী এই পথিকই পরে গিয়েছিল মসজিদে। পর্যাপ্ত খাবার ছিল। কিন্তু মন্দিরের পূজারী আর মসজিদের মোল্লা খাবার দেয়নি। এটা ধর্মসম্মত নয়। স্বার্থের জন্য কেউ কেউ ধর্মের নীতি লঙ্ঘন করে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। মানুষের মর্যাদা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয় হতে হবে।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. ‘মানুষ’ কবিতায় মুসাফির কতদিন অভুক্ত ছিল?

ক. একদিন               খ. তিনদিন

গ. পাঁচদিন             ঘ. সাতদিন

২. ‘ভ্যালা হলো দেখি লেঠা’ পঙ্ক্তিটিতে প্রকাশ পেয়েছে-

ক. সংশয়           খ. উৎসাহ

গ. বিরক্তি          ঘ. আনন্দ

নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

‘কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা কে দেয় থুথু ওই গায়ে,

হয়তো তোমায় স্তন দিয়েছে সীতাসম সতী মায়ে।’

৩. উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতায় যেখানে সাদৃশ্য রয়েছে-

ক. মানুষকে ঘৃণা না করা               খ. ধর্মই সবার উপরে

গ. সমাজের উন্নয়ন                       ঘ. পুরোহিতের ঈশ্বর ভক্তি

৪. উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতায় সাদৃশ্য দেখা যায় যে বিষয়ে-

i. মানবিকতা

ii. সহযোগিতা

ii. সহমর্মিতা

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i             খ. ii

গ. iii           ঘ. ii ও iii

৫. কালা পাহাড়ের প্রকৃত নাম কী?

i. রাজচন্দ্র ii. রাজকৃষ্ণ iii. রাজনারায়ণ

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i              খ. ii

গ. iii            ঘ. উপরের সব কয়টি

৬. ‘ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নমাজ পড়িস বেটা?’ -বাক্যটিতে মোল্লার কোন বক্তব্য প্রকাশ পায়?

ক. অসহায়ত্ব খ. আবেদন গ. ঘৃণা ঘ. নিষ্ঠুরতা

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

‘তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,

তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান।’

৭. উদ্দীপকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কবিতা হল-

ক. প্রাণ                           খ. অন্ধবধূ

গ. সেইদিন এই মাঠ       ঘ. মানুষ

৮. উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে-

i. মানুষের মনুষ্যত্ববোধ ii. পুরোহিতের ঈশ্বর ভক্তি iii. পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i             খ. ii 

গ. iii           ঘ. ii ও iii

বহুনির্বাচনি  প্রশ্ন উত্তর

১. ঘ ২. গ ৩. ক ৪. ক ৫. ঘ ৬. ঘ ৭. ঘ ৮. ক

সৃজনশীল প্রশ্ন 

অপরের জন্য তুমি তোমার প্রাণ দাও, আমি তা বলতে চাই নে। অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর কর। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বল। পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটু সদয় দৃষ্টি নিক্ষেপ কর,তাহলেই হবে। দুঃখী মানুষের ছোট ছোট দুঃখ দূর করা, অসহায় মানুষের মনে আশা জাগানো, কিংবা বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো ছোট ছোট উপকারে ব্রতী হওয়ার মধ্যেই মনুষ্যত্বের প্রকাশ ঘটে।

ক. ‘তেরিয়া’ অর্থ কী?

খ. ‘অভেদ ধর্মজাতি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

গ. উদ্দীপকের কোন দিকটি ‘মানুষ’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? -আলোচনা কর।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতায় চেতনাগত দিক থেকে অভিন্নতা রয়েছে।” -বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

ক. ‘তেরিয়া’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে উদ্ধত বা উগ্র।

খ. ‘অভেদ ধর্মজাতি’ বলতে এখানে কবি পৃথিবীর সকল মানুষের এক ও অভিন্ন ধর্মকে বুঝিয়েছেন।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানবতার জয়গান গেয়েছেন। তাঁর মতে পৃথিবীর সকল মানুষ এক ধর্মের। মানুষের মধ্যে ভেদাভেদকে তিনি অস্বীকার করেছেন। পৃথিবীতে মানুষে মানুষে কোনো পার্থক্য নেই। তারা একই রক্ত-মাংসের তৈরি। মানুষের সব থেকে বড় পরিচয় সে মানুষ। আর মানুষের একটাই ধর্ম তা হচ্ছে মানব ধর্ম। বস্তুত কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘মানুষ’ কবিতায় ‘অভেদ ধর্মজাতি’ বলতে মানুষের এই অভিন্নতাকে বুঝিয়েছেন।

গ. মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশের ভাবনার দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মানুষ’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে পৃথিবীতে মানুষ মানুষের জন্য। এখানে সকল মানুষের সমভাবে ভোগের ও বাঁচার অধিকার রয়েছে। এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে সমদায়িত্বসম্পন্ন হতে হয়। কেউ যদি এখানে দায়িত্বে অবহেলা করে তবে সমাজে নেমে আসে বিষাদের কালোরাত্রি।

উদ্দীপকে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ পৃথিবীতে বিপন্ন মানুষটিরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। আর এক্ষেত্রে সমাজে যারা সক্ষম তাদের উদার মানসিকতায় এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে, অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর করে দাও। অসহায় মানুষটির প্রতি করুণার দৃষ্টি দাও। তাদের কল্যাণের দিকে দৃষ্টি রাখ। বিপন্ন মানুষের মনে বেঁচে থাকার আশা জাগিয়ে তোল। ‘মানুষ’ কবিতায়ও অনুরূপ অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে প্রতিবাদের ভাষায় বলা হয়েছে, মন্দির-মসজিদ পুরোহিত ও মোল্লারা দখল করে বসে আছে। সেখানে নিরন্ন মানুষেরা খাবার পায় না। কবি বলেছেন, ঐ ভজনালয়ের বদ্ধ দ্বার হাতুড়ি-শাবল দিয়ে খুলে ফেলতে। আর সেখান থেকে খাবার এনে দরিদ্র অসহায় মানুষের মুখে তুলে দিতে।

 এভাবে দেখা যায় উদ্দীপক ও‘মানুষ’ কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে নিরন্ন অসহায় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা। সুতরাং এদিক থেকে বলা যায় উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতায় সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতায় মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই অসহায় ও বিপন্ন। তাদের এ অসহায় অবস্থা দূর করার দায়িত্ব সমাজের সক্ষম ব্যক্তিদের। আর এ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে।

উদ্দীপকে মানবতার প্রতি উদার আকুতি জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর কর। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। একটুখানি মিষ্টি কথা বল। পথের অসহায় মানুষটির দিকে করুণার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর। এভাবে বিপন্ন মানুষের উপকার ও দুঃখী মানুষের ছোট ছোট দুঃখ দূর করায় মানবাত্মা জাগ্রত হয় এবং মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। কবি কাজী নজরুল ইসলামও ‘মানুষ’ কবিতায় মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন।

কবিতাটিতে তার প্রতিপক্ষ ছিল নিষ্ঠুর ও স্বার্থবাদী মোল্লা শ্রেণি। তারা মসজিদ ও মন্দিরে দান হিসাবে পাওয়া গোশতরুটি ও প্রসাদ-মিষ্টান্ন একাই দখল করে বসে আছে। তারা অন্নহীন ভুখা মানুষকে তাড়িয়ে দিয়েছে নিষ্ঠুরভাবে। মন্দির ও মসজিদে দুয়ার বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কবি তার প্রতিবাদী ভাষায় এসব অনাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি মসজিদ-মন্দিরের দুয়ার খুলে এসব নিরন্ন মানুষকে খাবার দিতে বলেছেন। তাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের উদ্বোধন ঘটাতে বলেছেন। অবশ্য কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় প্রতিবাদের চেতনা প্রবল হয়ে উঠেছে।

উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতায় মানুষের মনুষ্যবোধের জাগরণ কামনা করা হয়েছে। কেননা মানুষের সব চেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। অতএব,উদ্দীপক এবং ‘মানুষ’ কবিতাটির মূলভাব বিশ্লেষণ করে বলা যায়, চেতনাগত দিক থেকে এ দুটোর মধ্যে অভিন্নতা রয়েছে।

নিজে কর

সৃজনশীল প্রশ্ন 

আমরা সকল দেশের, সকল জাতির সকল ধর্মের, সকল কালের। আমরা মুরিদ যৌবনের। এই জাতি-ধর্মের-কালকে অতিক্রম করিতে পারিয়াছে যাঁহাদের যৌবন, তাঁহারাই আজ মহামানব, মহাত্মা, মহাবীর। তাহাদিগকে সকল দেশের সকল ধর্মের সকল লোক সমান শ্রদ্ধা করে।

ক. দুয়ারে কে দাঁড়িয়েছিল?

খ. ‘ঐ মন্দির পূজারীর,হায় দেবতা, তোমার নয়।’ -কেন?

গ. উদ্দীপকে ‘মানুষ’ কবিতার যে বিপরীত দিকগুলো ফুটে উঠেছে তা তুলে ধর।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতা মানুষের জয়গানে মুখরিত হয়েছে।” -আলোচনা কর।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url