এস এস সি বাংলা ১ম পত্র তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা শামসুর রাহমান

 

 তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

শামসুর রাহমান
কবি পরিচিতি



সূচীপত্র


শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৪শে অক্টোবর ঢাকা শহরে তাঁর নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রাম। তাঁর পিতা মোখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মাতা আমেনা খাতুন। শামসুর রাহমান ১৯৪৫ সালে ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েও চূড়ান্ত পরীক্ষা না দিয়ে পাসকোর্সে বিএ পাশ করেন। তাঁর পেশা ছিল সাংবাদিকতা। আঠারো বছর বয়সে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর ‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’, ‘স্বাধীনতা

তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা’, ‘সফেদ পাঞ্জাবি’, ‘আসাদের শার্ট’ প্রভৃতি কবিতায় উঠে এসেছে বাঙালি জাতির স্বপ্ন ও ভবিষ্যত। বিষয়ে, আঙ্গিকে, উপস্থাপনায় তাঁর কবিতা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের প্রত্যাশা, হতাশা, বিচ্ছিন্নতা, বৈরাগ্য ও সংগ্রাম তাঁর কবিতায় সার্থকভাবে বিধৃত। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর প্রধান কাব্যগ্রন্থ 

প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, রৌদ্র করোটিতে, বিধ্বস্ত নীলিমা, নিজ বাসভূমে, বন্দী শিবির থেকে, দুঃসময়ের মুখোমুখি, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, আমি অনাহারী, বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়, গৃহযুদ্ধের আগে, হরিণের হাড়, মানব হৃদয়ে নৈবেদ্য সাজাই।

ভূমিকা

‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ শীর্ষক কবিতাটি ‘শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নামক গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। কবিতাটি কবির ‘বন্দী শিবির থেকে’ নামক গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালির সংগ্রামী চেতনা এবং তাঁদের মহান আত্মত্যাগের মহিমা কবি সুন্দরভাবে এই কবিতায় প্রকাশ করেছেন। এখানে কবি স্বাধীনতার জন্য এদেশের সর্বস্তরের মানুষের আত্মত্যাগ, পাক-হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ, মুক্তিকামী মানুষের প্রতীক্ষার স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। কবি স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস থেকে স্বাধীনতাকে রক্ষা ও অর্থবহ করে তুলতে সকলকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হতে আহ্বান  জানিয়েছেন।

উদ্দেশ্য

এই পাঠটি পড়া শেষে তুমি-

  •  স্বাধীনতার জন্য বিচিত্র মানুষের আত্মত্যাগ বর্ণনা করতে পারবে;
  •  স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও অনুভবের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে পারবে।

মূলপাঠ

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

তোমাকে পাওয়ার জন্যে

আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?

আর কতবার দেখতে হবে খান্ডবদাহন ?

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল,

সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর।

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো

দানবের মতো চিৎকার করতে করতে

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল

আর মেশিনগান খই ফোটাল যত্রতত্র।

তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।

তুমি আসবে বলে বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার

ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর।

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতা-মাতার লাশের উপর।

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে

আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?

আর কতবার দেখতে হবে খান্ডবদাহন ?

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে থুত্থুড়ে এক বুড়ো

উদাস দাওয়ায় বসে আছেন Ñ তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের

দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে

মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে

নড়বড়ে খুঁটি ধরে দগ্ধ ঘরের।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে

হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে

বসে আছে পথের ধারে।

তোমার জন্যে,

সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,

কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,

মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,

গাজী গাজী বলে যে নৌকা চালায় উদ্দাম ঝড়ে,

রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস

এখন পোকার দখলে

আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুরে-বেড়ানো

সেই তেজি তরুণ যার পদভারে

একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে -

সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত

ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,

নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক

এই বাংলায়

তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।

নির্বাচিত শব্দের অর্থ 

অধীর-- অস্থির; ব্যাকুল। 

অপরাহ্ণ-- বিকাল। 

আর্তনাদ-- কাতর চিৎকার। 

খান্ডবদাহন-- ভীষণ অগ্নিকান্ড। 

জোয়ান-- যুবক;প্রাপ্তবয়স্ক লোক। 

তুমি আসবে বলে ... ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো-- স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর বীভৎস ও ভয়ংকর আক্রমণ চালায়; তারা গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়; তাদের সেই আক্রমণ থেকে ছাত্রদের ছাত্রাবাস, গরীব মানুষের থাকার জায়গা, বস্তিও রক্ষা পায়নি; পাকিস্তানি সেনারা ছাত্রাবাস ও বস্তিতেও আক্রমণ করে, এবং সেখানকার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে এবং পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। 

থুত্থুড়ে এক বুড়ো-- বয়সের ভারে বিধ্বস্ত লোক, যার বয়স অনেক হয়েছে এবং চলাচল করতে যার                                         কষ্ট  হয়। 

দাওয়া--বারান্দা, উঠান। 

দামামা--ঢাকজাতীয় রণবাদ্য। দিগি¦

দিক-- সর্বদিক। 

নিশান-- পতাকা; কেতন। 

প্রতীক্ষা-- অপেক্ষা। 

বাস্তুভিটা-- বহুকালের বসতভ‚মি পুরুষানুক্রমে যে বাড়িতে বাস করা হয়। 

বিধ্বস্ত-- বিলুপ্ত, চতুর্দিকে বিক্ষিপ্ত। 

ভগ্নস্ত‚পস্ত--‚পাকার ধ্বংসাবশেষ। 

যত্রতত্র-- যেখানে সেখানে; সব জায়গায়। 

রুস্তম শেখ ... এখন পোকার দখলে-- রুস্তম শেখ নামের এক রিক্শাওয়ালা যিনি যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন; মৃত অবস্থা বোঝানোর জন্য বলা হয়েছে ‘যার সুখদুখ এখন পোকার দখলে’। সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল।

হরিদাসীর-- হরিদাসী বিধবা হলো। সনাতন ধর্মের মেয়েদের বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়।  তার স্বামী মারা গেলে সেই সিঁদুর মুছে ফেলা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের দেশের এমন অনেক হরিদাসীর স্বামী মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। 

হরিদাসীর স্বামীও শহিদ হয়েছেন-- এ বিষয়টি বোঝানোর জন্য বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে।

সারসংক্ষেপ 

স্বাধীনতা মানুষের পরম চাওয়া। মানুষ বিচিত্র অবস্থার মধ্যে থাকে। বিচিত্র শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ তাদের। কিন্তু স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় তাদের মধ্যে ভেদ নেই। যার যার অবস্থান থেকে স্বাধীনতার জন্য মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, পুড়িয়ে দিয়েছে শহর ও গ্রামের লোকালয়। কিন্তু সবকিছু হারিয়েও বাংলার মানুষ আশা ছাড়েনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের একদিকে ছিল বিসর্জন, অন্যদিকে সম্মুখ-যুদ্ধের সাহস আর বীরত্ব। বহু বিচিত্র মানুষের নানামুখী অংশগ্রহণে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল কার?

ক. সকিনা বিবির               খ. হরিদাসির

গ. আমিনা বিবির              ঘ. নির্মলা দাসির

২. সনাতন ধর্মে সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলা হয় যে কারণে-

ক. স্বামী সমুদ্র পাড়ি দিলে             খ. স্বামী বিদেশ গেলে

গ. স্বামী যুদ্ধে গেলে                       ঘ. স্বামী মারা গেলে

নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

অলভ্য জয়ের লোভে জ্বালায় শহর, গ্রামে গ্রামে

প্রাচীন সংহতি ভেঙ্গে ভগ্ন স্তূপে দূরের উল্লুক।

৩. উদ্দীপকটি কোন কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?

ক. সাহসী জননী                                          খ. প্রাণ

গ. তোমাকে পাওয়ার জন্য,হে স্বাধীনতা      ঘ. জীবনসঙ্গীত

৪. উদ্দীপকের চরণদ্বয় নিচের কোন পঙ্ক্তিটির উপজীব্য?

i. তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা

ii. তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম

iii. হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোর শূন্য থালা হাতে

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i                  খ. ii

গ. ii                  ঘ. i, ii ও iii

৫. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটি শামসুর রাহমানের কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?

ক. রৌদ্র করোটিতে             খ.বন্দী শিবির থেকে

গ. বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে       ঘ. হরিণের হাড়

৬. ‘তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতা-মাতার লাশের উপর।’ চরণটিতে রয়েছে-

ক. অবোধ শিশুর আনন্দ          খ. গণআন্দোলনের রূপ

গ. শিশুর বিদ্রোহ                       ঘ. স্বাধীনতার স্বপ্ন

নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার

তবু মাথা নোয়াবার নয়।

৭. উদ্দীপকের সঙ্গে মিল রয়েছে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার-

i. শ্রমিক শ্রেণির ii. স্বাধীনতা বিরোধীদের iii. আপামর জনসাধারণের

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i               খ. ii

গ. iii               ঘ. i ও ii

৮. উদ্দীপক ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটির সাদৃশ্যের মূলে রয়েছেÑ

ক. দেশাত্মবোধ         খ. সাহসিকতা

গ. নিপীড়ন              ঘ. ধ্বংসযজ্ঞ

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

১. খ ২. ঘ ৩. গ ৪. খ ৫. খ ৬. ঘ ৭. গ ৮. ক

সৃজনশীল প্রশ্ন 

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,

তুমি ফিরে এসেছ তোমার লাল সূর্য আঁকা পতাকার ভেতরে

যার আলোয় এখন রঞ্জিত হয়ে উঠেছে সাহসী বদ্বীপ,

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ

তুমি ফিরে এসেছ তোমার অনাহারী শিশুটির কাছে

ফিরে এসেছ তোমার প্লাবনের কোমল পলিমাটিতে

যার মুঠোর ভেতরে এখন একটি ধানের বীজ ;

ক. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?

খ. ‘আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়।’ -বুঝিয়ে বল।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার কোন দিকটির মিল রয়েছে? আলোচনা কর।

ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা’ কবিতার মূলভাবটি প্রকাশিত হয়েছে কি? -উত্তরের সপক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন কর।


সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর 

ক. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ নামক কবিতাটি ‘শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

খ. বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীর বুকে অনেকবার রক্ত দিতে হয়েছে। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার অর্জনের জন্য এদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী এদেশে ছাত্রাবাসগুলোতে আক্রমণ করে। নির্মমভাবে গণহত্যা চালায়। পুড়িয়ে দেয় দেশের শহর ও গ্রামের লোকালয়। সম্ভ্রম হারায় অনেক নারী। যুদ্ধে আত্মত্যাগ করে অনেক নারী ও পুরুষ। রক্তের গন্ধ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবুও মাথা নত করেনি বাঙালি। বার বার এদেশ অত্যাচারীর অত্যাচারে রক্তগঙ্গায় ভেসেছে। এ কারণেই কবি বলেছেন- ‘আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?’

গ. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার শেষ অংশ যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তার কথা রয়েছে সে অংশের সঙ্গে উদ্দীপকের মিল রয়েছে। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। অনেক রক্তের বিনিময়ে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এর জন্য বাঙালিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে নয় মাস। স্বাধীনতার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এদেশের লাখো মানুষকে আত্মাহুতি দিতে হয়েছে। নির্যাতিত ও বিধবা হতে হয়েছে অসংখ্য নারীকে। ধ্বংস হয়েছে অজস্র জনপদ। উজাড় হয়েছে অনেক বস্তি ও ছাত্রাবাস। আর এর বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতার রক্তলাল পতাকা।

উদ্দীপকে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। কবি এখানে নতুন বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। কবি বলেছেন,‘তুমি ফিরে এসেছ তোমার লাল সূর্য আঁকা পতাকার ভেতরে, ফিরে এসেছ তোমার অনাহারী শিশুটির কাছে, ফিরে এসেছ তোমার প্লাবনের কোমল পলিমাটিতে।’ বস্তুত ফিরে আসা বলতে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসাকেই বোঝানো হয়েছে। অন্যদিকে কবিতায় দেখতে পাই যুদ্ধের সময় অনেক রক্তগঙ্গা বইয়ে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। পিতা-মাতার লাশের উপর হামাগুড়ি দিয়েছে অনেক অবুঝ শিশু। সম্ভ্রম হারিয়েছে অনেক নারী। নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে উদ্দীপকের পতাকার মতো লাল পতাকা উড়িয়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বলা যায়, এভাবে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার বিষয়টিতে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে,হে স্বাধীনতা’ কবিতার মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার মূল ভাবটি প্রকাশিত হয়নি। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার অনুভবেরও বটে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতির এ অধিকার হরণ করেছিল। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আপামর বাঙালি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী এদেশে গণহত্যা চালায়। পুড়িয়ে দেয় গ্রাম ও শহরের অজ¯্র লোকালয়। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং রক্তগঙ্গার বিনিময়ে অবশেষে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বাংলার আকাশে ওঠে স্বাধীনতার লাল সূর্য।

উদ্দীপকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে অভিবাদন জানানো হয়েছে। উদ্দীপকের কবি এখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আবেগকে সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন। কবির স্বপ্নের স্বাধীনতা ফিরে এসেছে বাংলার কোমল পলিমাটিতে, অনাহারী শিশুটির কাছে। উদ্দীপকটিতে যুদ্ধের কোনো বর্ণনা দেওয়া হয়নি। এছাড়া বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায় না উদ্দীপকে। অন্যদিকে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আবহকে তুলে ধরা হয়েছে। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ বিস্তৃত পরিসরে ফুটে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালির রক্তে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয় পাকসেনারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অনেক নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন, অনেক নবজাতক হারিয়েছে মা-বাবাকে। আর্তনাদ করেছে কুকুরও। মুক্তিযুদ্ধে বাংলার শ্রমিক, কৃষক, জেলে প্রমুখ সাধারণ মানুষও আত্মত্যাগ করে। এভাবে দেখা যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চিত্রায়ন রয়েছে কবিতাটিতে।

উদ্দীপকে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের কথা বলা হয়েছে। সেখানে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশকে অভিবাদন জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত মুক্তিযুদ্ধের কথা বর্ণিত হয় নি। আর ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটিতে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বাপর প্রসঙ্গসহ মুক্তিযুদ্ধের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটির মূল ভাব উদ্দীপকে ফুটে ওঠেনি। আংশিক চিত্রকে ধারণ করেছে মাত্র।

নিজে কর 

স্বাধীনতা তুমি

রবি ঠাকুরের অজর কবিতা,অবিনাশী গান।

স্বাধীনতা তুমি

কাজী নজরুলের ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো

মহান পুরুষ, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা-

ক. শাহবাজপুরের কৃষকের নাম কী?

খ. ‘তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’ -উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপক ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার বৈসাদৃশ্যগুলো আলোচনা কর।

ঘ. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় রয়েছে স্বাধীনতার জন্য তীব্র আকাক্সক্ষা আর উদ্দীপকে

প্রকাশিত হয়েছে স্বাধীনতার অনাবিল আনন্দ।’ -মন্তব্যটি বিচার কর।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url